• ঢাকা
  • সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত

নিহত সহস্রাধিক, ঘরছাড়া লাখো মানুষ, রণতরী পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২৩, ০২:১৮ পিএম
নিহত সহস্রাধিক, ঘরছাড়া লাখো মানুষ, রণতরী পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
গাজার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা হামাস বলেছে তারা ‘প্রতিশোধমূলক’ হামলা অব্যাহত রাখবে। ছবি : বিবিসি

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনী ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী হামাস যোদ্ধাদের মাঝে যুদ্ধ অব্যাহত আছে। শনিবার (৭ অক্টোবর) ভোরে হামাস ইসরায়লে আকস্মিক ব্যারেজ রকেট হামলা চালালে এই সংঘাত শুরু হয়। ঘটনার প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পরও এখনো অব্যাহত আছে সেই সংঘাত। 

ইসরায়েলের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে,হামাসের হামলায় তাদের ৭০০ নাগরিক মারা গেছে, যার মধ্যে দক্ষিণ ইসরায়েলে একটি সঙ্গীত উৎসবেই মারা গেছে ২৫০ জনের বেশি। অন্যদিকে ফিলিস্তিন বলছে যে ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় এখন পর্যন্ত ৪১৩ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, তারা কিছুক্ষণ আগে হামাসের অন্যতম প্রধান ঘাঁটিতে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে। জাবালিয়া অঞ্চলে হামাসের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপর্ণূ একটি মসজিদ ছিল লক্ষ্যবস্তুগুলোর মধ্যে অন্যতম।

অন্যদিকে হামাসও ইসরায়েলের দিকে রকেট ছোঁড়া অব্যাহত রেখেছে।

দক্ষিণ ইসরায়েলের কিব্বুতজ রে’ইম অঞ্চলের নেগেভ মরুভূমিতে চলতে থাকা সঙ্গীত উৎসব ছিল স্থল হামলার প্রাথমিক লক্ষ্য। এই ‘সুপারনোভা ফেস্টিভালে’ সশস্ত্র হামাস সদস্যরা হামলা চালায় শনিবার ভোরে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার ভোরে উৎসব স্থলে কয়েকটি গাড়িতে করে উপস্থিত হয়ে উৎসবে অংশ নেয়া মানুষের ওপর গুলি চালানো শুরু করে হামাস সদস্যরা। এরপর কিব্বুতজ রে’ইমের আবাসিক এলাকাগুলোতেও হামলা চালায় হামাস।

হামাসের হামলার জবাবে পাল্টা আক্রমণে ইসরায়েলের বাহিনীর রকেট হামলায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় গাজা উপত্যকার সব ধরনের স্থাপনা। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২৩ হাজারের বেশি মানুষ ঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

জাতিসংঘের পক্ষ থেকে রোববার রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ৭৪ হাজার মানুষ জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে।

এদিকে, গত ১৭ বছর ধরে গাজার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা হামাস বলেছে তারা ‘প্রতিশোধমূলক’ হামলা অব্যাহত রাখবে। গাজার সাধারণ বাসিন্দাদের মধ্যে হামাসের এই হামলা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। এই হামলা অনেকেই উদযাপন করছেন, আবার অনেকেই দীর্ঘ যুদ্ধের আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা

যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রতি তাদের সমর্থন প্রকাশ করতে বিমান বহনকারী একটি জাহাজ ইসরায়েলের কাছে নিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লয়েড অস্টিন জানিয়েছেন যে মার্কিন রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড, একটি মিসাইল ক্রুজার ও চারটি মিসাইল বিধ্বংসী যান ঐ অঞ্চলের দিকে যাচ্ছে।

ইসরায়েলের শত্রুরা যেন এই পরিস্থিতি থেকে ফায়দা নিতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ। সামনের দিনগুলোতে ইসরায়েলে আরো অস্ত্র সহায়তা পাঠানো হবে বলেও জানিয়েছে তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন অবশ্য বলেছেন, যে হামাসের হামলার সাথে ইরানের সরাসরি যোগসূত্র থাকার কোনো প্রমাণ পায়নি তারা। তবে হামাসকে যে ইরান দীর্ঘ সময় ধরে সহায়তা করে আসছে, এটিও মনে করিয়ে দেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড

বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকা

গাজা উপত্যকায় প্রায় ২৩ লাখ মানুষ বাস করেন। শনিবার সকালে যখন হামাস সেনাদের ইসরায়েলে হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেখানকার মানুষ উল্লাস করছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর থেকেই সেই চিত্র পুরোপুরি পাল্টাতে শুরু করে।

হামাসের হামলার জবাবে পাল্টা রকেট ও বোমা হামলা করে ইসরায়েলের বাহিনী। তখন গাজা উপত্যকার নাগরিকরা আতঙ্কে ঘর ছাড়তে শুরু করেন। ইসরায়েলের আক্রমণে এখন পর্যন্ত মারা যাওয়া ৪১৩ জনের অধিকাংশই ‘নারী ও শিশু’ বলে দাবি করছে হামাস।

এরই মধ্যে গাজা উপত্যকায় বিদ্যুৎসহ খাদ্য, পানি ও জ্বালানি সরবরাহও বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। গাজার নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ঐ এলাকার বিদ্যুৎ চাহিদার সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পূরণ করতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে গাজা উপত্যকায় বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় উদ্ধারকৃতদের চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাপকভাব ব্যহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে সেখানকার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।

হামাসের প্রতি ইরানের সমর্থন
দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাস সদস্যদের হামলার পর ইরানের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ হামাসের প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দোল্লাহিয়ান সাম্প্রতিক এই সহিংসতাকে ‘বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা অপরাধ আর হত্যার সমুচিত প্রতিক্রিয়া’ বলে আখ্যা দিয়ে একটি টুইট করেছেন।

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি টেলিভিশনে প্রচারিত এক বক্তব্যে এই ঘটনাকে ‘ফিলিস্তিনি সেনা ও সব ফিলিস্তিনি দলের বিজয়’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এর আগে শনিবার সকালে দক্ষিণ ইসরায়েলে রকেট হামলার পর হামাস দাবি করেছিল যে তারা ইরানের সমর্থন ও সহায়তায় এই হামলা চালিয়েছে। তবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে ইরানের প্রতিনিধি এই হামলার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে বলে খবর প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

বড় ধরনের সেনা অভিযান 
বিবিসি’র আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সম্পাদক জেরেমি বোয়েনের বিশ্লেষণ অনুযায়ী হামাস গোষ্ঠীকে দমন করতে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় বড় ধরনের সেনা অভিযান চালাবে। আর তা হলে, হামাস আর ইসরায়েলের বাহিনীর মধ্যে বড় ধরনের সংঘাত চলমান থাকতে পারে সামনের কিছু দিন।

এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই ধরনের হামলায় না গিয়ে গাজা উপত্যকাকে বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমেই হামাসকে সেখানে আটকে রাখার চেষ্টা করেছেন। তবে সেই কৌশল খুব একটা কার্যকর হয়নি। সেখানে বড় ধরনের সেনা অভিযান হয়তো খুব দ্রুতই পরিচালিত হতে পারে। এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে বহু ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক মারা যাবে।

ইসরায়েলের সেরকম পদক্ষেপে যদি পুরো অঞ্চলে যুদ্ধ ছড়িয়ে না পড়ে এবং শুধু গাজা উপত্যকা আক্রমণ করে তারা হামাসকে দমন করতে পারে, তা সত্ত্বেও বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ থেকেই যায়।

ঐ পরিস্থিতিতে গাজা কীভাবে পরিচালিত হবে? সংঘাত শেষে ইসরায়েলের সেনারা যখন ফিরে যাবে, তখন গাজার নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে? শুধু সেনাবাহিনী দিয়ে কী ঐ অঞ্চলের শাসন পরিচালনা করা যাবে?

ঐ অঞ্চলের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী কোনো রাজনৈতিক সমাধান বের না করা গেলে ভবিষ্যতে আরো কয়েক প্রজন্ম হয়তো রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ আর সহিংসতার মধ্যে দিয়েই জীবনযাপন করতে বাধ্য হবে।

বিবিসির যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংবাদদাতা বারবারা প্লেট-আশার বলছেন যে যুক্তরাষ্ট্র রণতরী, যুদ্ধবিমান ও অতিরিক্ত গোলাবারুদ পাঠানোর মাধ্যমে মূলত লেবাননের শক্তিশালী হিজবুল্লাহ গ্রুপকে এই সংঘাতে জড়ানো থেকে থামাতে চাচ্ছে।

কট্টরপন্থী শিয়া গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে ইরান সহায়তা করে থাকে। হামাসের অস্ত্রশস্ত্রের সরবরাহের ক্ষেত্রেও সহায়তা করে থাকে ইরান। সূত্র-বিবিসি।

Link copied!