যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বল শ্রমবাজারের তথ্যের পর ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমাতে পারে, এমন প্রত্যাশা জোরালো হয়েছে। ফলে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববাজারে প্রথমবারের মতো প্রতি আউন্স সোনার দাম ৩ হাজার ৬০০ ডলার ছাড়িয়ে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
সোমবার সকালে স্পট গোল্ডের দাম ১.৩ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স ৩ হাজার ৬৩১.৬৬ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর আগে এটি সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৬৩৬.৬৯ ডলারে পৌঁছেছিল।
ডিসেম্বর ডেলিভারির জন্য মার্কিন সোনার ফিউচার ০.৫ শতাংশ বেড়ে ৩ হাজার ৬৭০.৮০ ডলারে লেনদেন হয়েছে।
জ্যানার মেটালসের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং সিনিয়র মেটাল স্ট্র্যাটেজিস্ট পিটার গ্রান্ট বলেছেন, স্বল্প মেয়াদে সোনা তার গতি ৩ হাজার ৭০০ থেকে ৩ হাজার ৭৩০ ডলারের দিকে নিয়ে যেতে পারে এবং যেকোনো ছোট পতনকে কেনার সুযোগ হিসেবে দেখা হবে।
আগস্ট মাসে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি তীব্রভাবে কমেছে। সিএমই ফেডওয়াচ টুল অনুযায়ী, ব্যবসায়ীরা এখন ফেডারেল রিজার্ভের সেপ্টেম্বরের বৈঠকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদের হার কমানোর ৯০ শতাংশ সম্ভাবনা দেখছেন, যেখানে ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমানোর সম্ভাবনা প্রায় ১০ শতাংশ।
ডলারের দুর্বলতা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর শক্তিশালী মজুত, সহজ আর্থিক নীতি এবং বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা বৃদ্ধির কারণে ২০২৪ সালে ২৭ শতাংশ বৃদ্ধির পর এই বছর সোনার দাম এখন পর্যন্ত ৩৮ শতাংশ বেড়েছে।
রোববার প্রকাশিত সরকারি তথ্যে দেখা গেছে, চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগস্ট মাসে টানা ১০ মাস ধরে সোনা কিনেছে।
বিনিয়োগকারীরা এখন ফেডারেল রিজার্ভের নীতির বিষয়ে আরও ইঙ্গিত পেতে বুধবার মার্কিন উৎপাদক মূল্য এবং বৃহস্পতিবার ভোক্তা মূল্যের তথ্যের জন্য অপেক্ষা করছেন।
সোনার ব্যবহার কেবল গয়নার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনার রিজার্ভ আবার বাড়ছে। মানুষও সোনার বার ও সোনাভিত্তিক এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডে (ইটিএফ) বিনিয়োগ বাড়ছে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, গত বছর সারা বিশ্বে সোনা বেচাকেনা হয়েছে ৪ হাজার ৯৭৪ টন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সোনা কেনা বাড়ছে। ২০২৪ সালে এ নিয়ে টানা তিন বছর বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সম্মিলিতভাবে এক হাজার টনের বেশি সোনা কিনেছে। গত বছর সবচেয়ে বেশি সোনা কিনেছে পোল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারা কিনেছে ৯০ টন সোনা।
দেশে টানা দুই দিন সোনার সর্বোচ্চ দামের রেকর্ড
টানা দ্বিতীয় দিনের মতো সোনার দাম বাড়ছে। এতে এক দিনের ব্যবধানে দেশে সোনার সর্বোচ্চ দামের আরেকটি নতুন রেকর্ড হতে যাচ্ছে। এবার বাড়ছে ভরিতে ১ হাজার ২৬০ টাকা। নতুন এই দর মঙ্গলবার থেকে সারা দেশে কার্যকর হবে।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) সোমবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোনার দাম সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। এতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে বিশুদ্ধ সোনার দাম বেড়েছে। এ জন্য সোনার দাম পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।
সোমবার দেশের বাজারে প্রতি ভরি সোনার দাম ২ হাজার ৭১৮ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৮১ হাজার ৫৫০ টাকা। এটি দেশের ইতিহাসে সোনার সর্বোচ্চ দাম।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মঙ্গলবার থেকে দেশের বাজারে হলমার্ক করা প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেট মানের সোনার দাম বেড়ে হবে ১ লাখ ৮২ হাজার ৮১০ টাকা। এর মাধ্যমে সোনার সর্বোচ্চ দামের আরেকটি রেকর্ড।
এ ছাড়া কাল থেকে প্রতি ভরি ২১ ক্যারেট সোনার দাম ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫০৫ টাকা এবং ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৭ টাকা হবে। এ ছাড়া সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম বেড়ে হবে ১ লাখ ২৩ হাজার ৯৪২ টাকা।
দেশের বাজারে আজ সোমবার প্রতি ভরি হলমার্ক করা ২২ ক্যারেট সোনা ১ লাখ ৮১ হাজার ৫৫০ টাকা, ২১ ক্যারেট ১ লাখ ৭৩ হাজার ৩০৪ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫৪১ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনা ১ লাখ ২৩ হাজার ৬৭ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
সেই হিসাবে কাল মঙ্গলবার থেকে ২২ ক্যারেট সোনায় ১ হাজার ২৬০ টাকা, ২১ ক্যারেটে ১ হাজার ২০১ টাকা, ১৮ ক্যারেটে ১ হাজার ২৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনায় ৮৭৫ টাকা দাম বাড়বে।