যুক্তরাষ্ট্র কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা আর ভয়ানক মারণাস্ত্র দিচ্ছে ইসরায়েলকে। ইসরায়েল সেই অস্ত্র ব্যবহার করছে ফিলিস্তিনিদের ওপর। মারা যাচ্ছে শিশু, নারীসহ হাজার হাজার ফিলিস্তিনি। এটি মেনে নিতে পারেননি যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর সদস্য অ্যারন বুশনেল। গাজায় ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞ হৃদয় ছুঁয়েছিল তার। প্রতিবাদ জানাতে শরীরে আগুন লাগিয়ে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন।
টগবগে ২৫ বছরের এই তরুণের নামে ফিলিস্তিনের একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে।
সড়কটি অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেরিকো শহরে। রোববার (১০ মার্চ) সড়কের নতুন নামফলক উন্মোচন করেন জেরিকোর মেয়র আবদুল করিম সিদর। সেখানে তখন মানুষের জমায়েত। সবার উদ্দেশে মেয়র বলেন, “আমরা তাকে চিনতাম না। তিনিও আমাদের চিনতেন না। আমাদের মধ্যে কোনো সামাজিক, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক বন্ধন ছিল না। তার সঙ্গে আমাদের যে বিষয়টি মিলে যায়, তা হলো—স্বাধীনতার প্রতি ভালোবাসা, আর (গাজায়) ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আকাঙ্ক্ষা।”
অ্যারন বুশনেল গাজায় হামলার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে চরম পথটাই বেছে নিয়েছিলেন। দিনটি ছিল গত ২৫ ফেব্রুয়ারি। সামরিক বাহিনীর পোশাকে তিনি হাজির হন ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি দূতাবাসের বাইরে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভ করছিলেন। সেখানেই ঘোষণা দেন, ‘গণহত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে চান না’। এরপর নিজের শরীরে আগুন দেন। এ সময়ও তাঁর আকুল আবেদন ছিল একটাই—‘ফিলিস্তিনের মুক্তি চাই।’ এর পরপরই বুশনেলকে উদ্ধার করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে বাঁচানো যায়নি।
গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় রক্তক্ষয়ী হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে প্রতিদিনই উপত্যকাটিতে বাড়ছে ফিলিস্তিনিদের লাশের সারি। এখন পর্যন্ত সেখানে ৩১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের এই নৃশংস হামলা যখন যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশির ভাগ পশ্চিমা দেশের সরকারের সমর্থন পাচ্ছে, তখনই বিশ্বজুড়ে সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন গাজার বাসিন্দারা। প্রাচ্য থেকে সুদূর পাশ্চাত্য—ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে রাজপথে নেমেছেন তাঁরা। এই সাধারণ মানুষের কাতারেই যোগ দিয়েছিলেন বুশনেল।
ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বুশনেল যে আত্মত্যাগ করেছেন, তাকে সংহতির সবচেয়ে শক্তিশালী প্রকাশ হিসেবে দেখছেন জেরিকোর বাসিন্দারা। এমনই একজন শহরটির কাউন্সিল সদস্য আমানি রায়ান। গাজায় বেড়ে ওঠা এই মানুষটি ১৯ বছর বয়সে পড়াশোনার জন্য পশ্চিম তীরে এসেছিলেন। আমানি বলেন, ‘তিনি (বুশনেল) নিজের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটিই উৎসর্গ করে দিয়েছেন। গাজার শিশুদের জন্য এই মানুষটি নিজের সব সুযোগ–সুবিধা ত্যাগ করেছেন।’
আপনার মতামত লিখুন :