• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

মিয়ানমারে ভয়াবহ সংঘর্ষ, থাইল্যান্ডে পালাচ্ছে মানুষ


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ৭, ২০২৩, ১১:২৪ এএম
মিয়ানমারে ভয়াবহ সংঘর্ষ, থাইল্যান্ডে পালাচ্ছে মানুষ

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও সশস্ত্র বিদ্রোহীদের মধ্যে নতুন করে ভয়াবহ সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। প্রাণে বাঁচতে দেশটির হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশী থাইল্যান্ডে পালিয়ে গেছে। থাই কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।

শুক্রবার (৭ এপ্রিল) সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এ খবর জানিয়েছে। এতে বলা হয়, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক বাহিনী অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করার পর দেশটিতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। জনগণ ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদে প্রথমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। পরে তারা সশস্ত্র প্রতিরোধের পথ অবলম্বন করে।

থাইল্যান্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, মিয়ানমারের দক্ষিণাঞ্চলীয় কারেন প্রদেশের মায়াওয়াদ্দি শহরের আশপাশের অঞ্চলকে কেন্দ্র করে বর্তমানে তুমুল সংঘর্ষ চলছে। মিয়ানমারের এই অঞ্চলটি থাইল্যান্ডের তাক প্রদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা এবং এটি কায়িন নামেও পরিচিত।

থাইল্যান্ডের তাক প্রাদেশিক কর্মকর্তারা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ১০টি এলাকাজুড়ে ‘প্রায় ৩ হাজার ৯৯৮ জন লোক থাইল্যান্ডে অস্থায়ী আশ্রয়ে পালিয়ে এসেছে’। পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলেও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

থাই ইংরেজি দৈনিক খাওসোদ ও বার্মিজ বিবিসি জানায়, সশস্ত্র কারেন গ্রুপ কারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির  কেএনএলএ গেরিলারা সীমান্ত চৌকিতে হামলা চালানোর পর সেখানে সংঘর্ষ শুরু হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্বেচ্ছাসেবক রয়টার্সকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার লোকেরা থাইল্যান্ডে পালিয়ে আসে এবং এখনো সীমান্তের কাছে সমবেত বহু লোক প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছেন। আশ্রয়ের খোঁজে থাকা এসব মানুষের কাছে এখন পর্যাপ্ত পানীয় জল বা কোনো টয়লেট সুবিধা নেই বলেও জানিয়েছে তিনি।

কারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির মতো কিছু জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী কয়েক দশক ধরে সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে। আর দুই বছর আগে অভ্যুত্থানের পর থেকে জেনারেলদের ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করার জন্য অভ্যুত্থানবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে তারাও যোগ দেয়।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী তার বিরোধীদের দমন করতে তাদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

অ্যাসিসটেন্স অ্যসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স জানিয়েছে, সামরিক বাহিনী দেশটিতে প্রায় ৩ হাজার ২১২ জনকে হত্যা করেছে এবং ১৭ হাজারেরও বেশি মানুষকে কারাগারে আটকে রেখেছে।

অবশ্য মিয়ানমার সামরিক বাহিনী দাবি করছে যে তারা ‘সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে লড়াই করছে এবং অসামরিক লোকজনের ওপর কোনো হামলা চালানোর কথা অস্বীকার করছে।

এর আগে বিমানে জ্বালানি সরবরাহকারী মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তি ও ছয়টি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখলের পর থেকে জান্তা সরকারের ওপর চাপ বাড়াতেই একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদেশগুলো। এরই জেরে এমন পদক্ষেপ বলে জানানো হয়।

মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, নিষেধাজ্ঞার তালিকাভুক্ত এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে জ্বালানি সরবরাহের পাশাপাশি তা আমদানি ও মজুতে সহায়তা করে থাকে। যা জান্তা বাহিনীকে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর অবিরাম বিমান ও বোমা হামলা চালাতে সক্ষম করে তুলেছে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নৃশংসতা চালানোর উপাদানগুলো জোগান যেন সহজে না পায়, সে লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করে যাবে।

এ নিষেধাজ্ঞার খবর আসার আগেও যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো সরকারের কর্মকর্তা, কোম্পানি ও অস্ত্র ব্যবসায়ীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ৮০ জন ব্যক্তি ও ৩০টির বেশি সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

Link copied!