এক দিনে এত মৃত্যু আগে দেখেননি গাজাবাসী


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২৩, ০৩:২৮ পিএম
এক দিনে এত মৃত্যু আগে দেখেননি গাজাবাসী
গাজার খান ইউনিসে আর্তনাদ করছে নিহতের স্বজনরা। ছবি-রয়টার্স।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের বিমান হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৭০০ বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে। একসঙ্গে এত মৃত্যু আগে দেখেননি গাজার বাসিন্দারা। নিহতদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে তারা ৪০০ ‘সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে’ হামলা করেছে এবং কয়েকজন হামাস কমান্ডারকে হত্যা করেছে। তারা আরও বলেছে, হামাস নতুন করে দুজন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার পরেও তারা হামলার মাত্রা কমাবে না।

এদিকে জাতিসংঘের সাহায্য সংস্থাগুলো গাজায় ত্রাণ সরবরাহের জন্য একটি নিরাপদ ও স্থায়ী ব্যবস্থা তৈরির আহ্বান জানিয়েছে।

বিদ্যুৎ, ওষুধ, পানি ও কর্মী সংকটের কারণে গাজায় আরও একটি হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে হামাসের নজিরবিহীন হামলার ঘটনায় ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত ও আরও ২২২ জনকে জিম্মি করা হয়। এরপর থেকেই গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৫ হাজার ৮০০ মানুষের মৃত্যুর দাবি করেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

রাতে গাজায় শত শত হামলা
গাজার চার শর বেশি জায়গায় রাতভর বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিস ও রাফাহ এলাকায় এসব হামলায় অনেক মানুষ মারা গেছেন।

স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে বহু মানুষ এই এলাকাগুলোতে এসেছে।

নিহতদের মধ্যে খান ইউনিসের উত্তর পূর্ব এলাকার শহরতলিতে একটি আবাসিক ভবনে থাকা একই পরিবারের ১৩ জন আছে। খান ইউনিসের ১২ লাখ মানুষের মধ্যে এখন চার লাখের মতো সেখানে অবস্থান করছে। খান ইউনিসের ঘনবসতিপূর্ণ আমাল এলাকার একটি আবাসিক ভবনে হামলার ঘটনায় ২০ জন মারা গেছে।

হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৭০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে ইসরায়েলের হামলায়। এর মধ্যে ৩০৫ জন শিশু, ১৭৩ জন নারী ও ৭৮ জন বয়স্ক মানুষ।

বিবিসির একজন সংবাদদাতা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ভোরে মৃতদেহগুলো যখন হাসপাতালে আনা শুরু হয়, তখন সেখানে ক্ষোভ ও শোকাতুর পরিস্থিতির তৈরি হয়।

ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ মঙ্গলবার ভোরে জানিয়েছে সন্ত্রাসীরা ব্যবহার করত এমন ৪০০ স্থানে তারা বিমান হামলা করেছে। এর মধ্যে ভূমধ্যসাগরের উপকূলীয় এলাকায় হামাসের সক্রিয় টানেলও আছে।

‘হামাসের হামলা শূন্য থেকে আসেনি’
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্থোনিও গুতেরেস গাজায় মানবিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইনগুলোর লঙ্ঘনের অভিযোগ করে বলেছেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। উভয়পক্ষ বেসামরিক নাগরিকদের ‘মানববর্ম’ হিসেবে ব্যবহার করা এবং গাজার দক্ষিণাঞ্চলে বোমা বর্ষণের নিন্দা করেছেন।

গুতেরেস বলেন, “এটা স্বীকার করা গুরুত্বপূর্ণ যে হামাসের হামলা শূন্য থেকে আসেনি। ফিলিস্তিনের মানুষ ৫৬ বছর ধরে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির শিকার। তবে ফিলিস্তিনের দুর্গতির জন্য হামাসের হঠকারী হামলা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এবং ওই হঠকারী হামলার জন্য ফিলিস্তিনের মানুষ সার্বিকভাবে শাস্তি পেতে পারে না।”

এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, মঙ্গলবারের মন্তব্যের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবের পদত্যাগ করা উচিত।

তিনি বলেছেন, জাতিসংঘ মহাসচিবের বক্তব্যে হামাস সন্ত্রাসীদের নিষ্ঠুরতার বিষয়টি নেই বরং সেখানে ‘সন্ত্রাসের যৌক্তিকতা’ দেওয়া হয়েছে।

“আক্রান্তদের পাশে না দাঁড়িয়ে তিনি নিষ্ঠুরতার শিকার মানুষের দায়ী করছেন, যা আর কখনো দেখা যায়নি”।

গাজায় ত্রাণবাহী আরও ট্রাক
ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট বা পিআরসিএস জানিয়েছে যে পানি, খাবার ও ওষুধ নিয়ে আরও আটটি ট্রাক মিসরের রাফাহ ক্রসিং দিয়ে গাজায় প্রবেশ করেছে। সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ দেওয়া পোস্টে তারা জানিয়েছে একটি ট্রাকে ওষুধ, দুটিতে খাবার ও পাঁচটি ট্রাকে করে পানি নেওয়া হয়েছে। সূত্র: বিবিসি

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর

Link copied!