ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ৪২ দিনে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় প্রাণহানির সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়েছে। এই নিহতদের মধ্যে শিশু এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের সংখ্যা অন্তত ৫ হাজার।
শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এছাড়া গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক সংক্ষিপ্ত বিজ্ঞপ্তিতে নিশ্চিত করেছে এ তথ্য।
কাছাকাছি সময়ে পশ্চিম তীর অঞ্চলের ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও পৃথক এক বিজ্ঞপ্তিতে একই তথ্য জানিয়ে বলেছে, ১২ হাজার নিহত ছাড়াও গাজায় এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ৩ হাজার ৫৭০ জন মানুষ। এই নিখোঁজদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৮০০ জন।
এদিকে, গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের মহাপরিচালক ইসমাইল থাওয়াবতা বলেন, `গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পতনের কারণে কয়েকদিন ধরে নিহতের সংখ্যা আপডেট করা হয়নি।`
তিনি জানান, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো এক হাজার ৮০০ শিশুসহ তিন হাজার ৭৫০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। চিকিৎসক, নার্স ও প্যারামেডিক মিলিয়ে অন্তত ২০০ জন নিহত হয়েছেন। সেই সঙ্গে সিভিল ডিফেন্স দলের ২২ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে।
ইসমাইল থাওয়াবতা জানান, ইসরায়েলের হামলায় ৫১ সাংবাদিক ও গণমাধ্যম প্রতিনিধি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩০ হাজারেরও বেশি, যাদের ৭৫ শতাংশই নারী ও শিশু।
প্রায় ২৫টি হাসপাতাল ও ২৫০ চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি জানান, কমপক্ষে ৫৫টি অ্যাম্বুলেন্স ধ্বংস হয়েছে। ৯৫ হাজারেরও বেশি সরকারি স্থাপনা বিধ্বস্ত হয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রবেশ করে উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের কয়েকশ যোদ্ধা। সেখানে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে সামরিক-বেসামরিক লোকজনদের হত্যার পাশপাশি ২৪২ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিককে জিম্মি হিসেবে গাজায় ধরে নিয়ে যায় তারা।
জবাবে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী। পরে ১৬ অক্টোবর থেকে অভিযানে যুক্ত হয় স্থল বাহিনীও।
গত ৪২ দিনের এই অভিযানে এখন পর্যন্ত কোনো বিরতি দেয়নি ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, রাশিয়া, চীনসহ বিভিন্ন দেশ এবং জাতিসংঘ ইসরায়েলকে নিয়মিত মানবিক বিরতি অথবা যুদ্ধবিরতি ঘোষণার জন্য চাপ দিচ্ছে ইসরায়েলকে, কিন্তু তা আমলে নিয়ে ইসরায়েল জানিয়েছে— হামাসকে নির্মূলের আগ পর্যন্ত এই অভিযান চলবে।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে ১৯৫৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর এই প্রথম এত বড় মাত্রার সংঘাত হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের আল আকসা অঞ্চলে।