• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২০ মুহররম ১৪৪৫

ঝুঁকি থাকলেও শিশুদের স্কুলে পাঠান, বলছেন বিশেষজ্ঞরা


দেওয়ান জামিলুর রহমান
প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০২১, ০৫:৫৯ পিএম
ঝুঁকি থাকলেও শিশুদের স্কুলে পাঠান, বলছেন বিশেষজ্ঞরা

বিশ্বজুড়ে করোনার ডেল্টা ধরনের প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে বাড়ছে অভিভাবকদের চিন্তা। মহামারীর মধ্যে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানো নিরাপদ হবে কি না - তা নিয়ে বিভ্রান্ত সবাই। তাই অভিভাবকদের আশ্বস্ত করতে নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

মহামারির মধ্যে বাচ্চাদের কি স্কুলে পাঠানো উচিত হবে?

করোনা সংক্রমণ বাড়া সত্ত্বেও আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি স্কুল ২০২১-১১ শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম পুরোদমে শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। করোনা সংক্রমণের কেন্দ্রস্থল তথা কোভিড হট স্পটের অঞ্চলগুলোর মধ্যে অ্যালাবামা, জর্জিয়ার, টেক্সাস, লুইজিয়ানা ও ফ্লোরিডা রাজ্যসহ বিভিন্ন জেলা শহরেও স্কুল খোলার প্রস্তুতি চলছে।

জনস্বাস্থ্য নিয়ে সরকারের উদ্যোগগুলোর মধ্যে এখন সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে টিকাদান। তবে যেসব বাবা-মায়ের সন্তানেদের এখনো টিকা নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত বয়স হয়নি তাদের দুশ্চিন্তা যেন কমছেই না। সামাজিক মাধ্যম থেকে শুরু করে স্কুল কমিটির মিটিংয়েও অভিভাবক-শিক্ষকদের মুখে একই প্রশ্ন। সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাবো? নাকি বাড়িতে রেখে বাচ্চাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও শিক্ষাকে ঝুঁকিতে ফেলবো?

যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের মানসিক স্বাস্থ্যের অধ্যাপক লিজ স্টুয়ার্টের দুই সন্তান পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে পড়ছে। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, “পরিবারগুলো এমন কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে - যেটা খুবই দুঃখজনক। আমি মনে করি এই মুহূর্তে শিশুদের স্কুলে পাঠাতে ঠিক কি করণীয় সেটা অনেক বাবা-মাই জানেন না।”

জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তারা স্কুলে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিলেও শিশুদের নিরাপত্তা নির্ভর করছে স্কুল, এলাকার করোনা পরিস্থিতি কিংবা সবার স্বাস্থ্যবিধি মানা, না মানার ওপর।

মহামারি চলাকালীন ক্লাসরুমে কিভাবে শিশুদের নিরাপদ রাখা যেতে পারে?
আপনি জেনে অবাক হবেন, এখনো পর্যন্ত কোন দেশেই করোনার প্রধান উৎস হিসেবে স্কুলকে শনাক্ত করা হয়নি। বিশেষ করে যেসব স্কুলে স্বাস্থ্য সতর্কতা মেনে ক্লাস পরিচালনা করা হচ্ছে সেখানে করোনার প্রাদুর্ভাব নেই বললেই চলে। এসব সতর্কতার মধ্যে রয়েছে - বদ্ধ ক্লাসরুমে মাস্ক পরিধান করা, শিক্ষার্থীদের কমপক্ষে তিন ফুট দূরে বসার ব্যবস্থা রাখা, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য আলাদা ডেস্ক নিশ্চিত করা, হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা, শিক্ষার্থীদের করোনা পরীক্ষায় উৎসহ দেওয়া ও অসুস্থ হলে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো।

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি প্রকল্প অ্যামেরিকান রেস্কিউ প্ল্যানের মাধ্যমে স্কুলগুলোকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ১ লাখ ২২ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের তহবিল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ দপ্তর, সিডিসি থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের নিয়মিত করোনা পরীক্ষার জন্য ১ হাজার কোটি ডলার বরাদ্দ রেখেছে।

স্কুল খোলা রাখার সিদ্ধান্তকে বাস্তবসম্মত বলেই মনে করছেন ইয়েল স্কুল অফ পাবলিক হেলথের চিকিৎসক ও মহামারি বিশেষজ্ঞ ডা. আলবার্ট কো। তিনি বলেন, “গত বছর স্কুল খোলা রেখে আমরা খুব ভালো কাজ করেছি। মহামারির সময় আমরা অনেক কিছু শিখেছি। এসব অভিজ্ঞতা পরে কাজে আসবে।”

মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের স্কুলগুলোতে শুরু থেকেই মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক ছিল। এছাড়াও ৭৩ শতাংশ স্কুলেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে তিন থেকে ছয় ফুট দূরত্ব বজায় রাখা হয়েছে। সেখানে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্কুলগুলোতে করোনা সংক্রমণের হার প্রায় শূন্যের কোটায়।

এছাড়াও উটাহ ও নর্থ ক্যারোলিনায় গবেষণায় দেখা গেছে, লোকালয়ে করোনা সংক্রমণ হার অনেক বেশি থাকলেও, স্কুলগুলোতে স্বাস্থ্য সতর্কতা মেনে চলায় সংক্রমণ খুবই কম ছিল। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর্কডিওসিস অব শিকাগো ক্যাথলিক স্কুলে পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, শিক্ষার্থী ও স্কুল কর্মকর্তাদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের হার গোটা অঞ্চলের করোনার হারের তুলনায় অনেক কম।

তবে কোন এলাকায় হুট করে করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেলে স্কুলের কার্যক্রমে বাধা পড়তে পারে। ফলে শিশুদের ক্লাসরুমে পাঠদান আবারও স্থগিত রাখতে হতে পারে। কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, স্কুলগুলোয় ঢিলেঢালাভাবে স্বাস্থ্যবিধি পালন করা হলে এলাকায় সংক্রমণ হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদেরও করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। 

২০২০ সালের মে মাসে ইসরায়েলে ঠান্ডাজ্বরের উপসর্গসহ দুই শিক্ষার্থীকে স্কুলে পাঠায় তাদের অভিভাবক। এর দুই সপ্তাহের মধ্যে স্কুলটির ১৫৩ শিক্ষার্থী ও ২৫ কর্মকর্তার দেহে করোনা ধরা পড়ে। স্কুল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।

এখানে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল, স্কুলটিতে করোনা ঠেকানোর জন্য কোন কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। উল্টো প্রচণ্ড গরমের কারণে শিশুদের মাস্ক পড়ার ওপর বাধ্যবাধকতা তুলে নিয়েছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ। ক্লাসরুমগুলোও বাতাস চলাচলের উপযোগী ছিল না বলে অভিযোগ রয়েছে। শিশুরা গাদাগাদি করে একসঙ্গে বসেই ক্লাস করতো।

এসব গবেষণার বেশিরভাগই উচ্চ সংক্রমণের সময় পরিচালিত হয়েছে। তবে শিশুদের করোনার ডেল্টা ধরনের ঝুঁকি নিয়ে আলাদাভাবে কোন গবেষণা হয়নি। যদিও স্কুলের সব শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের টিকাদান নিশ্চিত করা গেলে স্কুলগুলো সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে রেহাই পাবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

শিশুদের জন্য করোনার ডেল্টা ধরনের ঝুঁকিগুলি কী কী?
সামগ্রিকভাবে করোনায় শিশুদের ঝুঁকিগুলো আশাব্যঞ্জক বটে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ডেল্টা ধরন গুরুতর অসুস্থতার কারণ হলেও এখনো পর্যন্ত শিশুদের জন্য ততটা ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হয়নি। প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের উপসর্গগুলোও মৃদু হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে সংক্রমিত হওয়ার পরেও দেহে করোনার লক্ষণ দেখা যায় না। শিশুদের করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বা মৃত্যুর সম্ভাবনাও অনেক কম।

যুক্তরাষ্ট্রে ন্যাশনাল সেন্টার ফর হেলথ স্ট্যাটিস্টিক্সের তথ্য বলছে, দেশটিতে (২৮ জুলাই পর্যন্ত) ৩৫ লাখ শিশু করোনায় আক্রান্ত হলেও মৃত্যু হয়েছে মাত্র ৫১৯ জনের। দেশের যা মোট মৃত্যুর মাত্র শূন্য দশমিক এক পাঁচ শতাংশ। এদের মধ্যে ৩৪৬ জন ছিল ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী। আর চার বছর বা তার চেয়ে কম বয়সী ছিল ১৭৩ জন। তবে যেসব শিশুদের আগে থেকে অন্য কোন অসুখ ছিল তারাই বেশি আক্রান্ত হয়েছে। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর অনেক শিশু এলার্জিজনিত সমস্যাতে ভুগেছে। তবে মৃত্যুঝুঁকি আশঙ্কার বিষয় হলেও শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ক্ষতির তুলনায় করোনা কম ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।  

সিডিসির তথ্যমতে, ২০১৮-২০১৯ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রান্ত হয়ে ৪৮০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে শিশুমৃত্যুর প্রধান কারণ দুর্ঘটনা। বিভিন্নভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে প্রতি বছর প্রায় ১২ হাজার শিশু মারা যাচ্ছে। এদের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় ১ থেকে ১৯ বছর বয়সী অন্তত ৪ হাজার শিশু। এছাড়াও পানিতে ডুবে ৯০০ এবং বিষক্রিয়া ও ওষুধের মাত্রা ভুলের কারণে বছরে ৭৬১ শিশু মারা যায়।

পরিসংখ্যান দেখে কি অভিভাবকরা আশ্বস্ত হতে পারেন?
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, মহামারির সময় বাচ্চাদের বাড়িতে আটকে রাখার ফলে তাদের শিক্ষা ও মানসিক স্বাস্থ্যের ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন গবেষণায় শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর মহামারি বিরূপ প্রভাব দেখা গেছে। সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের তুলনায় পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা গণিতসহ পড়াশোনার অন্যান্য দক্ষতায় চার থেকে সাত মাস পিছিয়ে আছে।

সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বিভাগের অধ্যাপক ও ভাইস ডিন নিরাজ সৌদ বলেন, “আমরা অভিভাবকদের এত বেশি ভয় দেখিয়েছি যে তারা এখন কী করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। সেজন্য অনেকেই বাচ্চাদের বাড়িতে রাখার কথা ভাবছে। আমাদের সামগ্রিকভাবে শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করতে হবে। সার্বিক দিক বিচেনা করেই তাদের যত্ন নিতে হবে।”

শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ?
এক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি হল পরিবারের টিকা নেওয়ার উপযুক্ত প্রত্যেককে আগে টিকা দেওয়া। এতে করে বাড়িতে শিশুর আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমবে এবং শিশুরা স্কুল থেকে সংক্রমিত হলেও পরিবারের বাকি সদস্যরা নিরাপদ থাকবে। তাই এবছরের মধ্যেই প্রাপ্তবয়স্ক সবার টিকা নিয়ে ফেলা উচিত।

স্কুলবয়সী শিশুদের অভিভাবকদের মনে রাখা উচিত, ঝুঁকি সবসময়েই থাকবে। তবে আপনাকে ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে এবং বাড়িতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে হবে। শিশুদের এমন স্থানে নিয়ে যাবেন না - যেখানে সবাই টিকা নিয়েছে কিনা তা নিয়ে আপনার সন্দেহ রয়েছে। এছাড়াও দেশের টিকা কর্মসূচীর অগ্রগ্রতি ও মাস্ক পড়ার প্রতিও সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।

স্টুয়ার্ট আরও বলেন, “কোন ব্যাপারটি আপনার নিয়ন্ত্রণ আছে আর আপনি নিজে কী করতে পারেন সেটি চিন্তা করুন। অপ্রয়োজনীয় মেলামেশা ও বিনা কারণে বাড়ির বাইরে যাওয়া বন্ধ করুন। আর স্কুলকে সবার জীবনেরই অপরিহার্য অংশ – এটাও বুঝতে চেষ্টা করুন। স্কুল থেকে করোনা সংক্রমণ হতে পারে, তবে তার আগে আপনার বাসায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করুন।”

ব্যয়বহুল হলেও বাসায় করোনা পরীক্ষা করাটাও একটি বিকল্প উপায় হতে পারে। এছাড়াও বাচ্চাদের নিয়মিত করোনা পরীক্ষার মাধ্যমে বাবা-মাও তাদের সংক্রমণের ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারেন। স্কুলগুলোও শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের জন্য নিজস্ব করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখতে পারে।

তবে আপনার শিশুর যদি শ্বাসকষ্টের কোন উপসর্গ থাকে তবে তাদের বাড়িতেই রাখুন। মনে রাখবেন, ফুসফুসের সমস্যা থাকলে করোনা ছাড়াও অন্যান্য ভাইরাসজনিত সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়।

মাস্ক পরা নিয়ে স্কুলে কোন নির্দেশনা না থাকলে কী করা উচিত?
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের কমিটি অ্যামেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্সের মতে, দুই বছরের বেশি বয়সী সব শিশুদের স্কুল ও বাড়ির বাইরে জনবহুল জায়গায় মাস্ক পরা উচিৎ। যদিও অনেক এলাকায় কোভিড সতর্কতা নিয়ে স্কুলগুলো রাজ্য বা সরকারে সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। যেমন, আরকানসাস রাজ্যের মাস্ক পড়ায় কোন বাধ্যবাধকতা নেই, তাই স্থানীয় স্কুল কমিটি শিশুদের মাস্ক পড়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। আবার নিউজার্সি আর ক্যালিফোর্নিয়ায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাই মাস্ক পড়ার বিরোধিতা করছেন। অরেঞ্জ কাউন্টিতে সাম্প্রতি এক স্কুল কমিটির সভায়, স্কুলে মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক হবে কিনা তা নিয়ে অভিভাবকড়া বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। তবে সব বয়সী শিশুদের টিকা না দেওয়া পর্যন্ত মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক করা উচিৎ বলেই মনে করেন অধিকাংশ অভিভাবক।

করোনা প্রতিরোধে মাস্ক পড়া জরুরি বলেই মনে করেন বেশিরভাগ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। সিডিসির জরিপ বলেছে, যেসব স্কুলে মাস্ক বাধ্যতামূলক সেখানে করোনার প্রকোপ অন্য স্কুলের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ কম। তবে বাধ্যতামূলক হলেও, অনেক ক্ষেত্রে শিশুরা মাস্ক পড়তে চায় না। তাই মাস্ক বাধ্যতামূলক না হলেও স্কুল থেকে করোনা পরীক্ষা করতে সবাইকে সচেতন করতে হবে এবং ক্লাসরুমে বাতাস চলাচল ও ন্যূনতম দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষার্থীদের বসার ব্যবস্থা রাখতে হবে। ডা. সুদ বলেন, “আমি আমার সন্তানের মানসিক সুস্থতা নিয়ে বেশি চিন্তিত। ক্লাসে মাস্ক না পড়লে করোনার ঝুঁকি থাকলেও বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা ও শিক্ষকের সাথে কথা বলতেও বাচ্চাদের সুবিধা হবে।”
তবে বাচ্চাদের করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কম থাকলেও তাদের মাস্ক পরতে অভিভাবকদের উৎসাহিত করা উচিৎ বলে একমত তারা। কারণ করোনা ঠেকানোর প্রথম উপায়ই হচ্ছে মাস্ক পরা।

স্কুলগামী শিশুদের কি বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে মেলামেশা করা উচিত?
এই প্রশ্নের উত্তরটি সামগ্রিকভাবে এলাকার করোনা সংক্রমণ, টিকা দেওয়ার হার ও পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাসায় সবার টিকা দেওয়া হলে, পরিবারের সঙ্গে কাটাতে কোন সমস্যা নেই। পরিবারের সবার টিকা দেওয়া হয়ে গেলে, শিশুরা টিকা না দিলেও অন্যদের সংক্রমণের ঝুঁকি কম। তবে কিছু ক্ষেত্রে পরিবার অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে পারে। যেমন - একসঙ্গে বাইরে ঘুরতে গেলে ও বদ্ধ জায়গায় মাস্ক পড়া কিংবা দাদা-দাদী, নানা-নানী আলাদা বাসায় থাকলে তাদের সঙ্গে দেখা করার আগে সবার করোনা পরীক্ষা করে নেওয়া।

ভার্জিনিয়া টেক ক্যারিলিয়ন স্কুলের ভাইরাসজনিত রোগ বিশেষজ্ঞ ও ইন্টার্নাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. পল স্কলনিক বলেন, “কিছু কিছু পরিস্থিতিতে বয়োজ্যেষ্ঠদের শিশুদের কাছ থেকে আলাদা রাখাই ভালো। আপনার এলাকায় ডেল্টা ধরনের সংক্রমণ অনেক বেশি হলে, শিশুরা সংক্রামিত হওয়ার পরও হয়তো তাদের মধ্যে কোন লক্ষণ থাকবে না। তবে তারা ঠিকই ভাইরাসটি বাড়িতে নিয়ে আসবে। তাই ঝুঁকি কমাতে বাড়ির বাইরে মাস্ক পড়ুন, বাচ্চাদের পড়তে বলুন, আর সন্দেহ হলে নিজের কিংবা শিশুর করোনা পরীক্ষা করুন। তারপর নিশ্চিন্ত থাকুন।”

যেসব শিশুদের শারীরিক সমস্যা রয়েছে তাদের সুরক্ষায় কি করা উচিৎ?
এ বিষয়ে ডা. কো বলেন, “এমন পরিস্থিতিতে বস্বাস্থ্যগত জটিলতায় থাকা শিশুরা কিভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যাবে? - সেটা খুব কঠিন সিদ্ধান্ত। দুর্ভাগ্যবশত একেক জায়গায় পরিস্থিতি একেক রকম। সব শিশুর জন্যেও এক সমাধান কাজ করবে না। তাই শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি মূল্যায়ন করে স্কুলের কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।”

বিশেষজ্ঞরা বলেন, কোন শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে, শ্বাসকষ্ট, অ্যানিমিয়া বা ক্যান্সারের মত রোগে চিকিৎসাধীন থাকলে তাদের স্কুলে ফেরত পাঠানোর আগে অভিভাবকদের আরেকটু ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রয়োজনে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞদের পরামর্শের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পাশাপাশি এলাকার করোনা পরিস্থিতি ও স্কুলের পরিবেশও বিবেচনায় রাখা উচিত।

Link copied!