• ঢাকা
  • শনিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

পুরুষের বন্ধ্যাত্ব কেন হয়, এর চিকিৎসা কেমন


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৪, ০৯:০০ পিএম
পুরুষের বন্ধ্যাত্ব কেন হয়, এর চিকিৎসা কেমন
ছবি: সংগৃহীত

পুরুষের বন্ধ্যাত্ব কেন হয়, এর চিকিৎসা কেমন

সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারী উভয়েরই গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকে। একজনের শারীরিক সমস্যা থাকলেই সন্তান জন্মে বাধা দেখা যায়। অনেক দম্পতিই এই বিষয়ে বেশ উদ্বিগ্ন থাকে। সমাজের প্রচলিত ধারণা রয়েছে, মেয়েদের বন্ধ্যাত্বের কারণেই সন্তান জন্ম হয় না। কিন্তু আধুনিক চিকিত্সা বিজ্ঞান নিশ্চিত করেছে, সন্তান জন্ম না নেওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে পুরুষের বন্ধ্যাত্ব। অর্থাত্ পুরুষদের শারীরিক সক্ষমতা না থাকলেও সন্তান জন্মের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

পুরুষের বন্ধ্যাত্ব কেন হয়?

 

বিশেষজ্ঞরা জানান, দম্পতিরা যদি এক বছর কোনো ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার না করেও সন্তান ধারণ করতে না পারে তখনই তা বন্ধ্যাত্ব হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়। আর এই বন্ধ্যাত্ব নারী কিংবা পুরুষ যেকোনো একজনের হতে পারে। সাধারণত পুরুষের শুক্রাণু যা ভ্রুণ গঠনে মূখ্য ভূমিকা রাখে তা যদি কোনোভাবে ফিমেল জেনিটাল ট্র্যাক্ট বা নারীর যৌনাঙ্গে পৌঁছাতে অক্ষম থাকে তবে তা বন্ধ্যাত্ব হবে। পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব হওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। যেমন_ শুক্রাণু তৈরি না হওয়া, কিংবা শুক্রাণুর পরিমাণ খুবই কম অথবা শুক্রাণুর গতিশীলতা ঠিক নেই, আবার শুক্রাণুর পরিমাণ ঠিক আছে কিন্তু গতিশীলতা ঠিক না থাকলেও গর্ভধারণ সম্ভব নয়। আবার শুক্রাণুর আকৃতিগত কোনো সমস্যা থাকলে এবং শুক্রাণু তৈরি হচ্ছে, কিন্তু সহবাসে অক্ষমতা বা অপারগতার কারণে নারীর যৌনাঙ্গে তা পৌঁছাতে পারে না- এমন কারণেও পুরুষের বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, পুরুষের শুক্রাণুর পরিমাণ কম হওয়ার পেছনে জেনেটিক কারণ থাকতে পারে। তবে  ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। কিন্তু কিছু কারণ বাকি ১০ শতাংশের জন্য দায়ী। যেমন_

·         পরিবেশগত দূষণ, আধুনিক জীবনযাপনের ধরনের কারণে শুক্রাণু কমে যেতে পারে। সারাক্ষণ  কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন ব্যবহার করা হয়। এসব যন্ত্র থেকে নির্গত রশ্মি ক্ষতিকর হতে পারে। আবার দূষিত বাতাস ও পানি, কীটনাশকযুক্ত খাবার খাওয়া, ভিটামিনের ঘাটতি, অ্যালকোহল ও ধূমপানের অভ্যাস শুক্রাণু তৈরিতে বাধা দেয়। এগুলো শুক্রাণুর গতিশীলতা নষ্ট করে, শুক্রাণু ঝিল্লির ক্ষতি করতে পারে। যা ডিম্বাণুর সঙ্গে মিশতে বাধা দেয়।

·         অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা থাকলেও শুক্রাণুর পরিমাণ ও গতিশীলতা কম হতে পারে।

·         দীর্ঘমেয়াদী কোরো রোগের ওষুধ সেবনে শুক্রাণু কমতে পারে। হেপাটাইটিস চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিহেপাটিক, গ্যাস্ট্রিকের জন্য অ্যান্টি আলসারেন্ট জাতীয় ওষুধ, হার্টের ব্যথার জন্য সালফাসালাজিন, মেথোট্রেক্সেট, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপির মতো ক্যানসারের ওষুধ শুক্রাণুর পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে।

·         অনেক সময় পুরুষদের শুক্রাণু বন্ধও হয়ে যেতে পারে। একে এজোস্পার্মিয়া বলে। দুটি কারণে এটি হতে পারে। দুটি নালীর মাধ্যমে শুক্রাণু অণ্ডকোষ থেকে বাইরে চলে আসতে পারে। কিংবা  সংক্রমণ, আঘাত বা কোনো কারণে নালীগুলো বন্ধ হয়ে যায় তাহলে পর্যাপ্ত শুক্রাণু তৈরি হলেও বীর্যে মিশতে পারে না। তখন বন্ধু হয়ে যায়। আবার কারো কারো জন্মগতভাবে নালী তৈরি হয় না। তাই শুক্রাণু বাইরে আসতে পারে না। যা বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ।

·         প্রজনন অঙ্গে আঘাত, সংক্রমণ এবং মাম্পস রোগের কারণে পুরুষদের অর্কাইটিস হতে পারে। এতে অণ্ডকোষে সংক্রমণ হয়। অণ্ডকোষ ফুলে যেতে পারে। তীব্র ব্যথা হতে পারে। শিরাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

·         কোনো কোনো পুরুষের অন্ডকোষ জন্মগতভাবে পেটের ভেতরে থাকে। এতে শুক্রাণু তৈরি হয় না। তাই বাচ্চা জন্ম দেওয়া অসম্ভব হয়ে যায়।

 

পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের চিকিত্সা কেমন

বিশেষজ্ঞরা জানান, পুরুষদের যদি গুরুতর এজোস্পার্মিয়া তবে সুনির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই। এক্ষেত্রে শুক্রাণুর পরিমাণ বাড়ানোর একমাত্র উপায় জীবনযাপনে পরিবর্তন। যেমন-

·         পুরুষরা হরমোন চিকিৎসা নিলে স্পার্মাটোজেনেসিস বা শুক্রাণু তৈরি হবে।

·         দীর্ঘ সময়ে খুব গরমে কাজ করা যাবে না। ঠাণ্ডায় অবস্থান করতে হবে। অর্গানিক খাবার বেশি খেতে হবে। ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করতে হবে।

·         যারা কৃষিকাজ করেন, তারা রাসায়নিক ও কীটনাশক ব্যবহার বেশি করেন। তাই তাদের এজোস্পার্মিয়া বেশি হয়। এগুলো যতটা সম্ভব পরিহার করা উচিত।

·  কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় বন্ধ্যাত্বজনিত সমস্যা হতে পারে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে তা বন্ধ রাখতে হবে।

·  ক্যানসারের চিকিৎসা কিংবা কেমোথেরাপি নেওয়ার আগে শুক্রাণু সংরক্ষণ করে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

·  আইইউআই বা আইভিএফ চিকিৎসার সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। আইইউআই চিকিৎসার জন্য শুক্রাণুর সংখ্যা কমপক্ষে ১০ মিলিয়ন হতে হবে। শুক্রাণুর সংখ্যা ১০ মিলিয়নের নিচে হলে টেস্টটিউব পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে।

·    শুক্রাণু তৈরি হচ্ছে কিন্তু বীর্যে আসতে পারছে না বা শুক্রাণু বের হওয়ার নালী বন্ধ থাকলে  সার্জারি করে তা খুলে নেওয়া যাবে।

Link copied!