বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে ক্রমাগত ফেসবুক স্ট্যাটাস দিচ্ছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। সেসব পোস্টে তিনি তার বিচ্ছেদের পেছনের নানা কারণ জানাচ্ছেন। কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন তার প্রাক্তন স্বামী হারুন অর রশীদ অপুকে।
তবে এতদিন পর এসব বিষয় সামনে আনায় কেউ কেউ শবনম ফারিয়ার দিকে অভিযোগের আঙুল তুলছেন। রোববার (১৯ ডিসেম্বর) রাতে অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আবারও এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে আরও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন তার সাংসারিক জীবনের চিত্র।
ফারিয়া বলেন, ললেন, ‘‘এতদিন পর এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলা আমার জন্য বিব্রতকর। কিন্তু এত সংবাদকর্মী ভাইদের কল! কয়দিন ফোন বন্ধ করে রাখবো? তাই অনিচ্ছার সত্ত্বেও কিছু কথা বলতে হচ্ছে। প্রথমত, আমি একটা পোস্ট শেয়ার করেছিলাম; যেখানে আমি কিছুটা আবেগের বসে ব্যক্তিগত একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিলাম। শেয়ার করাটা সমস্যা না। সমস্যা হলো, আমার পর্দার বাইরের জীবন এত সাধারণ কিংবা আমার পরিবার এবং চারপাশের মানুষ আমাকে এতই সাধারণভাবে ট্রিট করে আমি হয়তো বুঝি না যে, আমিও সম্ভবত ‘তারকা তালিকায়’ পড়ি কিনা! সম্ভবত সেজন্য প্রায়ই কিছুটা ব্যক্তিগত কথা লিখে ফেলি। মূল কথায় আসি—আমি আমার সেই পোষ্টে কোনোভাবেই কোনও ব্যক্তিকে নিয়ে অভিযোগ করিনি। সম্পূর্ণ অভিযোগ ছিল আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির দিকে! ডিভোর্স জিনিসটা এত নোংরাভাবে না দেখলে হয়তো অনেক মেয়েকে এভাবে জীবন দিতে হতো না!’’
নিজের হাত বা আঙুল ভাঙার প্রসঙ্গে ফারিয়া বলেন, ‘‘আমার পয়েন্ট ছিল, যেদিন হাতের আঙুল ভাঙে সেদিনই আমি বুঝতে পেরেছিলাম, এই বিয়ে অলরেডি টক্সিক হয়ে গেছে! কিন্তু আমরা আমাদের জীবনের প্রায় আড়াই বছর একটা মরা গাছে পানি দিয়ে গেছি শুধু ‘মানুষ কী বলবে’ এটা ভেবে! দ্বিতীয়ত, আমি বিবাহ বিচ্ছেদের পর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, আমার জীবনে যিনি ছিলেন তাকে সম্মান দেখাতে। যদিও ওনার প্রতি আমার অভিযোগ-রাগ-ক্ষোভ কোনোটারই অভাব নেই। আমি নিশ্চিত, ওনারও একই অনুভূতি! আমার বিশ্বাস, তবুও উনিও সর্বোচ্চ সম্মান দেখাতেই চেষ্টা করেছেন! এখন আঙুল ভাঙার বিষয়টা- এটা অবশ্যই সত্যি, কিন্তু এমন না যে, বিষয়টা তিনি ইচ্ছে করেই করেছেন! রাগারাগির এক পর্যায় হাতাহাতি হয়। তারপর আমার আঙুল ভেঙে যায়। তাহলে এখন উনি অস্বীকার কেন করছেন? হঠাৎ এমন পাবলিক প্রতিক্রিয়া হলে আপনি কী করবেন? আপনিও ডিনাই করবেন!’’
বিষয়টি প্রসঙ্গে নিজের আরও অনুধাবন তুলে ধরেন এই তারকা। তার ভাষ্য, ‘‘তৃতীয়ত, নিউজে আমার নামের সাথে যার নাম বারবার আসছে তিনি বিষয়টা অস্বীকার করছেন। আর এত বছর পর যেহেতু কথা উঠছে তখন বিষয়টা প্রমাণ করা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। কিন্তু হাসপাতালের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ কিংবা বিল কার কার্ড থেকে পরিশোধ হয়েছে, সেগুলো বের করার সুযোগ এখনও আছে। কিন্তু যেহেতু সেই ব্যক্তির মা কল করলে আমি তাকে এখনও ‘মা’ ছাড়া অন্য কিছু ডাকতে পারি না, তাই মা এবং আমার নিজের সম্মান রক্ষার্থে বিষয়টা এখানেই শেষ করতে চাই!’’
ফারিয়া মনে করেন, পুরনো বিষয় ঘেঁটে কিছু পাওয়ার নেই। পাওয়ার থাকলে, সেটা তিনি বিচ্ছেদের সময়ই করতেন।
ফারিয়ার মতে, ‘‘এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করার ইচ্ছে থাকলে বিচ্ছেদের সময়ই আমি এত প্রেম না দেখিয়ে এসবই বলতাম। হয়তো তখন আমি যেসব সমালোচনা হজম করেছি, তা করতে হতো না। লাভটা আমারই হতো।
চতুর্থত, কোথায় যেন সংবাদ দেখলাম, ‘এতদিন পর জানা গেল কী কারণে বিচ্ছেদ হয়েছে আমাদের! এই ঘটনাই নাকি কারণ।’ বুঝলাম, এখনও সবার খুব জানার আগ্রহ আমাদের বিচ্ছেদের কারণ কী! আমাদের আসলে সে অর্থে কখনও সংসারই করা হয়নি। কারণ আমাদের নিজেদের কখনো কোনও বাসা ছিল না! ওদের তিন বেডের বাসায় ওর মা, ওরা চার ভাই, ভাবি, ভাতিজি এবং দুইজন বুয়া থাকতেন! সেখানে আমার থাকার জন্য যে ঘর বরাদ্দ ছিল, সেটার সাথে এটাচড কোনও ওয়াশরুম ছিল না। ওর মা’র বেডরুমে ৭ জনের সাথের ওয়াশ রুম শেয়ার করতে হতো। তাই আমি খুব বেশিদিন সেই বাসায় থাকিনি। আমরা তিন বোন। এতো ছেলেদের ঘরে তাই আমার অ্যাডজাস্ট করতে সমস্যা হতো। তাছাড়া আমার শুটিংয়ের জন্য অনেক কস্টিউম/প্রপ্স অনেক কিছু থাকে। আলাদা একটা কস্টিউম রুমই লাগে! আর আমার মায়ের বাসা আর তাদের কাছাকাছি হওয়ায় এবং দুজনেরই বাবা না থাকায় আমরা দুজন দুজনের মার সাথে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতাম! এর ফলে স্বাভাবিক ম্যারিড কাপলের মধ্যে যেসব ইন্টিমেসি থাকে তা আমাদের মধ্যে ছিল না! মূলত এই কারণেই আমরা আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্তে আসি। অবশ্যই এর বাইরে আরও হাজারটা কারণ তো আছেই! সেগুলোও পাবলিক প্লাটফর্মে লিখে আরও আলোচনা চাই না।’’
নিজে আবেগের বশবর্তী হয়ে সম্প্রতি পুরনো বিষয়টি তুলে ছেন, বলে জানালেন এই তারকা। বললেন, ‘‘এতদিন পরে এ কথা উঠলো কেন? উত্তর-আমার দোষ! আমি অতি আবেগী হয়ে ঘরের কথা পরকে জানিয়েছি। এভাবে একটা পাবলিক প্ল্যাটফর্মে লেখার আগে এইটার ফলগুলো আমার ভাবার দরকার ছিল! কিন্তু একটা বিষয় না বললেই নয়, অনেকের মন্তব্য আমার সেই বিচারপতির মতো লাগছে যিনি বলেছিলেন, রেপ হওয়ার তিনদিন পর কেন কেস করেছে? আরও আগে করা উচিত ছিল। তবে এ বিষয়টা নিয়ে তখনও আমি আমার ব্যক্তিগত ফেসবুকে লিখেছিলাম যেখানে আমাদের দুই পরিবারের সদস্যরাই ছিল। কিন্তু পাবলিক প্রোফাইলে এসব লিখলে কী হয় তা তো এবার দেখলামই!’’
সমালোচনাকারীকেও একহাত নিয়েছেন এই তারকা। পাশাপাশি বলেছেন যিনি শান্তিতে ঘুমাচ্ছেন, তাকে শান্তিতে ঘুমাতে দিতে।
‘‘জোর করে একজন ভিলেন বানাতে হবেই! অথচ এখান থেকে শিক্ষণীয় হতে পারতো, আমাদের মতো যেন কেউ জীবনের মূল্যবান সময় এভাবে নষ্ট না করে। এবার আশা করি সবাই সবার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন। যেহেতু শুরুটা আমাকে দিয়ে শেষটাও আমি টানতে চাই। সবার দোয়া চাই। আমাদের প্রতি একটু সহনশীল হোন। আমরা দুইজনই আমাদের জীবনে অনেকখানি এগিয়ে নিয়েছি। দুজনই নতুন করে জীবন শুরু করার মানসিকতার মধ্য যাচ্ছি! আমার কোনও বিষয়ে দয়া করে ওই ভদ্রলোককে টানবেন না! শুনেছি উনি এখন ভালো আছেন। শান্তিমতো ঘুমাচ্ছেন। ওনাকে শান্তিমতো ঘুমাতে দেন’’—বললেন টিভি নাটকের অত্যন্ত জনপ্রিয় এ তারকা।
ফেসবুকে পরিচয়, এরপর বন্ধুত্ব, অতঃপর প্রেম। তিন বছর প্রেম শেষে ২০১৮ সালে বেসরকারি চাকরিজীবী হারুন অর রশীদ অপুর সঙ্গে আংটি বদল হয় অভিনেত্রী শবনম ফারিয়ার। এর পরের বছরে ধুমধামে হয় তাদের বিয়ে। ২০১৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জাঁকালো সে আয়োজনে উপস্থিত হন টিভি নাটকের খ্যাতনামা সব মানুষ। বিয়ের ঠিক এক বছর নয় মাসের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে তাদের।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ইলমার নির্যাতনের কারণে মৃত্যু প্রসঙ্গে বলতে যেয়ে সাবেক স্বামী হারুনুর রশীদ অপুর বিরুদ্ধে ‘নির্যাতনের’ অভিযোগ তুলেন অভিনেত্রী। গত বুধবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি এই নির্যাতনের কথা লিখেন।
তারপর থেকেই নতুন করে আলোচনায় আসতে শুরু হয় পুরনো খবরগুলো। যদিও ফারিয়ার এই অভিযোগকে মিথ্যা দাবি করেছেন অপু। তিনি পুরো ঘটনাকে অতিরঞ্জিত গল্প বলে ব্যাখ্যা করেছেন।