পূজা চেরি ছিল শাবনূরের মতো সম্ভাবনাময়। প্রেমের সিনেমায় সে ভালো করতো। ছোট ছোট ভুলের কারণে আজ সে বেশিদূর এগোতে পারেনি। পূজা একজন ভালো অভিনেত্রী। আগে বেশ কয়েকটা ভালো ছবিতে অভিনয় করেছে। বিশেষ করে “পোড়ামন টু”তে সিয়ামের সঙ্গে ভালো একটা জুটি গড়েছিল। কিন্তু “গলুই” সিনেমা ও এর পরের সিনেমাগুলো সিলেকশনে তার ভুল ছিল। সে যদি তিনটা জিনিস যদি খেয়াল করতো, সিনেমার গল্প, পরিচালক এবং তার বিপরীতে কে অভিনয় করছে, তাহলে আজ তাকে এই সংকটে পড়তে হতো না। পূজাকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে কথাগুলো বললেন, ‘দুই নয়নের আলো’, ‘মন ছুঁয়েছে মন’, ‘জান্নাত’ ছবিগুলোর নির্মাতা মোস্তাফিজুর রহমান মানিক।

পূজা চেরিকে নিয়ে বড় আশা ছিল ঢালিউডের। সিয়ামের সঙ্গে ‘পোড়া মন টু’ করে সেই আশার পালে হাওয়া লাগিয়েছিলেন এই তরুণ অভিনেত্রী। তারপর হঠাৎ তার কপাল পুড়লো যেন ‘গলুই’ ছবিতে অভিনয়ের পর। বড় তারকার সঙ্গে অভিনয় করতে গিয়ে পূজাকে আর খুঁজেই পাওয়া গেল না। কেন এমন হলো পূজার পরিণতি? এ দায় কার? পূজার, নাকি নির্মাতাদের? কী করলে তারকা হিসেবে আরও এগিয়ে যেতে পারতেন এই তরুণ তারকা?
শিশুশিল্পী হিসেবে পর্দায় হাজির হয়েছিলেন পূজা চেরি। এখন তিনি পুরোদস্তুর নায়িকা। ২০১৮ সালে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘নূর জাহান’ দিয়ে নায়িকা হিসেবে অভিষেক হয় তার। তারপর সম্ভাবনাময় নায়িকা হিসেবে তাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেন অনেক নির্মাতা। তারপরই ‘পোড়া মন টু’ ছবিতে অভিনয় করে দর্শকদের মন কেড়ে নেন পূজা। ‘দহন’ ছবিতে অভিনয় করেও প্রশংসা কুড়ান তিনি।

তবে শাকিব খানের বিপরীতে ‘গলুই’ সিনেমায় অভিনয় করে পূজা চেরি তার ক্যারিয়ারে বিপদ ডেকে আনেন। সরকারি অনুদানে নির্মিত এ সিনেমাটি বেশ আলোচনায়ও ছিল। এ সিনেমার পর শাকিবের সঙ্গে পূজার প্রেমের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লে নায়িকার ক্যারিয়ার ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। কারণ সামাজিক মাধ্যমে রসিকতাচ্ছলে অনেকে বলতে শুরু করেন, শাকিব খানের তৃতীয় স্ত্রী হতে যাচ্ছেন পূজা।
ওই গুঞ্জন সত্যি হয়নি। তবে পূজাও আর ফিরতে পারেননি ছন্দে। যে ছবিই করেছেন, সফল হয়নি। এমনকি আলোচনাও হয়নি। যারা কাজ করেছেন তাকে নিয়ে, তারা হয়েছেন আশাহত। ২০২০ সালে মুক্তি পায় পূজা অভিনীত সিনেমা ‘হৃদিতা’, ২০২৩ সালে ‘জ্বীন’, ২০২৪ সালে ‘লিপস্টিক’, ‘আগন্তুক’ ও সর্বশেষ চলতি বছরের ঈদুল আজহার মুক্তি পায় ‘টগর’। একটি সিনেমাও সুবিধা করতে পারেনি। এর মধ্যে ‘টগর’ সিনেমাটি ছিল সুপারফ্লপ। মুক্তির এক সপ্তাহ পর সিনেপ্লেক্স থেকে নামিয়ে ফেলা হয়েছিল ছবিটি।
২০০০ সালের আগস্ট মাসে খুলনার গাজিরহাটে জন্মগ্রহণ করেন জয়িতা রায় পূজা। নায়িকা হিসেবে পূজা চেরি রায় নামে পরিচিতি পান তিনি। গত ২০ আগস্ট ২৫তম জন্মদিন উদযাপন করলেন পূজা। সবচেয়ে কম বয়সী ও সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ঢালিউড তারকার এমন নিস্তেজ উদযাপনের কারণ কী?
পূজা চেরির প্রশংসা করলেন ‘মোস্ট ওয়েলকাম’, ‘নবাব এলএলবি’, ‘দরদ’ ছবিগুলোর নির্মাতা অনন্য মামুন। পূজাকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে মামুন বলেন, ‘পূজা দেখতে সুন্দর, অভিনয় ও ডান্স ভালো পারে। এই সময়ের অন্য অনেক নায়িকার থেকে দেখতে অনেক ভালো। কিন্তু অভিভাবকের অভাব আছে পূজার, যে তার ক্যারিয়ারের বিষয়টা ভালো করে ডিল করতে পারবে। তার এখন এ রকম একজন মানুষ দরকার।’
প্রযোজক মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, ‘পূজা যে একজন ভালো অভিনেত্রী, এটা সে নিজে বোঝে না। তাকে আগে এটা বুঝতে হবে। একজন শিল্পীর স্বাধীনতা দরকার। যারা এই ইন্ডাস্ট্রিতে দাঁড়িয়েছে, তাদের সবার স্বাধীনতা ছিল। এক একবার এক এক প্রযোজনা সংস্থার অধীনে স্থায়ী হওয়ার কারণে আজ তার এই অবস্থা। সে কার কাজ করবে, এ বিষয়ে তাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করতে হবে। যারা স্বাধীন থাকতে পারে, তারা দাঁড়াতে পারে।’
সূত্র: জাগোনিউজ