আবারও খোলামেলা অকপট পরীমনি


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২৫, ১২:৫৮ পিএম
আবারও খোলামেলা অকপট পরীমনি
পরীমনি। ছবি : সংগৃহীত

ঢাকাই সিনেমার আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি এবার জন্মদিন উদযাপন করলেন মালয়েশিয়ায়। বাংলা চলচ্চিত্রে খুব কম নায়িকা আছেন, যাঁরা ব্যক্তিজীবনকে এত খোলামেলা ভাগ করেছেন। ভালোবাসা, বিয়ে, বিচ্ছেদ, মাতৃত্ব—সবকিছুই পরীমনি করেছেন অকপটে। কখনো সেই খোলামেলাটাই তাকে টেনে এনেছে সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে, আবার কখনো বানিয়েছে প্রতিবাদের প্রতীক। রুপালি পর্দার বাইরে বাস্তব জীবনের এক ফাইটার পরীমনি—যিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেন, নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন, আর প্রয়োজনে ভুল স্বীকার করতেও ভয় পান না।

নিজের জন্মদিনের কিছু মুহূর্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাগ করেছেন তিনি, সঙ্গে সহকর্মীরাও ছবিগুলো শেয়ার করে আবেগঘন শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এবারও তিনি রাখঢাক না রেখে খোলামেলা অকপটে বলেছেন অনেক কথা।
 
পরীমনির জন্মদিন মানেই একসময় ছিল জমকালো আয়োজনের প্রতীক। বছরের পর বছর পাঁচতারা হোটেলের আলোকছটা, সহকর্মীদের কোলাহল, থিম ধরে রঙিন গাউন, কেক কাটায় ক্যামেরার ফ্ল্যাশ—সব মিলিয়ে ঢাকাই শোবিজ অঙ্গনের এক অনিবার্য উৎসব হয়ে উঠেছিল তার জন্মদিন। সেই ঝলমলে জন্মদিনগুলো এখন যেন অতীতের গল্প। সময় বদলেছে, পরীমনিও বদলেছেন। এবারের জন্মদিনে (২৪ অক্টোবর) তিনি নেই দেশে, নেই আয়োজনের আড়ম্বরও।

জন্মদিনে, পরীমনি লিখলেন, ‘বাঁচা জীবন উদ্‌যাপন করাই শ্রেয়’

কয়েক দিন আগে নিজের ফেসবুকে আগাম কেক কাটার ছবি পোস্ট করেছিলেন পরীমনি। ক্যাপশনে জানালেন, ‘দেশ ছাড়ছি দশ দিনের জন্য। গন্তব্য মালয়েশিয়া।’ আর জন্মদিনের দিন শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) সেখান থেকেই লিখলেন সেই আত্মবিশ্বাসী সুরে—‘এ জীবন শুধু বেঁচে থাকার চেয়ে বাঁচা জীবন উদ্‌যাপন করাই শ্রেয়। জীবনের আনন্দ, বেদনা, কষ্ট, সুখ—সবকিছু নিয়েই আজকের এই জীবন।’ পোস্টের শেষে লিখলেন—‘হ্যাপি বার্থডে মাইসেলফ!’ মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পোস্টে রিঅ্যাকশন ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যায়, মন্তব্য পড়ে সাড়ে চার হাজারের বেশি। যা প্রমাণ করে—ভক্তদের আগ্রহ একটুও কমেনি। আলো হয়তো বদলে গেছে, কিন্তু নিভে যায়নি।

১৯৯২ সালের ২৪ অক্টোবর পরীমনির জন্ম হয়েছিল সাতক্ষীরায়। তবে তিনি বড় হয়েছেন পিরোজপুরের শঙ্করপাশা গ্রামে। চলচ্চিত্রজগতে তিনি পরীমনি নামে পরিচিত হলেও তাঁর জন্মনাম শামসুন্নাহার স্মৃতি। বয়স যখন মাত্র তিন বছর, তখন তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়। আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন সালমা সুলতানা। সে সময় মা–হারা পরীমনিকে বাবা মনিরুল ইসলাম রেখে আসেন তাঁর নানাবাড়ি পিরোজপুরে। সেখানে নানা শামসুল হক গাজীর তত্ত্বাবধানে ছোটবেলা কাটে অভিনেত্রীর। ২০২৩ সালে সেই নানাকেও হারিয়েছেন। বার্ধক্যের কারণে নানার মৃত্যু হয়।

নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টসে (বাফা) নাচ শিখতে ভর্তি হন পরী। নাচ করতেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। এভাবে সুযোগ পান টিভি নাটকে অভিনয়ের। ‘সেকেন্ড ইনিংস’, ‘এক্সক্লুসিভ’, ‘এক্সট্রা ব্যাচেলর’ নামের নাটকে দেখা গেছে তাঁকে। এরপর ‘নারী ও নবনীতা তোমার জন্য’ নামের একটি নাটকে মূল চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান। ২০১৫ সালে সিনেমায় নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয় পরীর। ওই সময় নজরুল ইসলাম খানের পরিচালনায় ‘রানা প্লাজা’ নামের একটি ছবিতে অভিনয় করেন পরী। কিন্তু ছবিটির মুক্তি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। এরপর প্রযোজক হয়ে শাহ আলম মণ্ডলের পরিচালনায় নির্মাণ করেন ‘ভালোবাসা সীমাহীন’ নামের একটি ছবি। এটিই পরীর মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম ছবি। রোমান্টিক চরিত্রে সহজ–সাবলীল অভিনয়ে নজর কাড়েন নতুন এই মুখ। সে সময় একসঙ্গে দুই ডজনের মতো সিনেমায় চুক্তি করে তিনি সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর চুক্তিবদ্ধ হওয়া অধিকাংশ সিনেমাই নির্মিত হয়নি। কয়েকটি আবার নির্মাণের পর মুক্তির আলো দেখেনি। পরের বছর ‘রূপবান’-এ গ্রামীণ মাটির মেয়ে হয়ে তিনি জানান দেন গ্ল্যামারের বাইরেও তাঁর ভেতরে আছে এক অন্তরঙ্গ সংবেদনশীল অভিনেত্রী। গিয়াস উদ্দিন সেলিমের স্বপ্নজাল-এ রূপার চরিত্রে পরীমনি ছিলেন একদম অন্য রকম। সীমান্তঘেরা দুই জীবনের ভালোবাসা আর আকাঙ্ক্ষার ভেতরে তিনি ছিলেন নরম অথচ দৃঢ়।

এক সাক্ষাৎকারে পরীমনি বলেছিলেন, ‘আমার জীবনে যা কিছু ঘটেছে, তা আমাকে থামায়নি। বরং এগিয়ে যেতে শিখিয়েছে। আমি ভাঙি, আবার নিজেকে গড়ি।’ এই বাক্যটাই যেন তাঁর শিল্পীসত্তার আত্মপ্রতিকৃতি।

‘আমার অর্ধেক জীবন সুন্দর করেছো পরী, আই লাভ ইউ’

পরীমনির জীবনের প্রেমকাহিনি নিয়েও জনমাধ্যমে আলোচনার শেষ নেই। এ বিষয়ে তিনি নিজেই এক সাক্ষাৎকারে হেসে বলেছিলেন, ‘আমার না আসলে ১২টা বিয়ে করার ইচ্ছা আছে। ছোটবেলা থেকে বলতাম, আমি এক ডজন বিয়ে করব। কিন্তু রিউমারটা এত জোরে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল যে এখন মনে হয় বলা ভুল ছিল।’ কৈশোর পার করেই নাকি তাঁর প্রথম বিয়ে, যা টেকেনি খুব বেশি দিন। ২০১২ সালে পরিচালক কামরুজ্জামান রনির সঙ্গে প্রেম ও বিয়ের খবরও শোনা যায়। পরে তাঁদের পথ আলাদা হয়ে যায়। এরপর ‘গুণিন’ সিনেমার শুটিংয়ে পরিচয় শরীফুল রাজের সঙ্গে। পরিচয় থেকে প্রণয়, প্রণয় থেকে সংসার। সেই সংসারে আসে তাঁদের ছেলে রাজ্য। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বদলে যায় সম্পর্কের সমীকরণ। বিচ্ছেদ আসে নীরবে, কিন্তু রাজ্য থাকে দুজনেরই কেন্দ্রবিন্দুতে। আজও সন্তানের কারণে পরীমনি ও রাজের দেখা হয় মাঝেমধ্যে, তবে তাঁদের জীবন এখন দুটো ভিন্ন স্রোতে বয়ে চলেছে।

বিনোদন বিভাগের আরো খবর

Link copied!