মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত সিনেমা ‘হাওয়া’। দর্শকমহলে বেশ সাড়া ফেলেছে সিনেমাটি। চতুর্থ সপ্তাহেও অর্ধশত প্রেক্ষাগৃহ ধরে রেখেছে ‘হাওয়া’। তবে এর মধ্যেও বিপত্তি দেখা দিয়েছে। ‘হাওয়া’ সিনেমায় একটি শালিক আটকে রাখার দৃশ্য নিয়ে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে সিনেমাটির প্রদর্শন নিষিদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
সোমবার (২২ আগস্ট) বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের কাছে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার। নোটিশপ্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার জানান, "বন্য প্রাণী হত্যা করে খাওয়ার দৃশ্য থাকায় হাওয়া সিনেমা প্রদর্শন বন্ধে আইনী নোটিশ পাঠানো হয়েছে।"
নোটিশে বলা হয়েছে, হাওয়া সিনেমাটির ছাড়পত্র বাতিল করে বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশের বাইরে প্রচার, সম্প্রচার ও প্রদর্শন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি করা হয়েছে। পাশাপাশি সেন্সরবোর্ড পুনঃগঠন করে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের সদস্য, আইনজীবী ও পরিবেশবিদদের সেন্সর বোর্ডের সদস্য হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করতে হবে।
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে কোন সিনেমার ছাড়পত্র প্রদানের পূর্বে চলচ্চিত্রটিতে যেন ভায়লেন্স পূর্ণ খুনের দৃশ্য, অশ্লীল গালি এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ এর কোন ধারার লঙ্ঘন না হয় সেই ব্যাপারে বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখতে হবে।
নোটিশকারি আইনজীবী শাহরিয়ার বলেন, "বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেয়ে গত ২৯ জুলাই বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে মুক্তি পাওয়া মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত `হাওয়া` সিনেমায় ট্রলারে থাকা একটি খাঁচায় শালিক পাখি বন্দী অবস্থায় দেখা যায়। এক পর্যায়ে সেটিকে হত্যা করে খাওয়ার দৃশ্য দেখানো হয়েছে। `হাওয়া` সিনেমার কয়েকটি দৃশ্য রয়েছে যা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন, ২০১২-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করেছে। বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত এ ধরনের অপরাধের ফলে সাধারণ মানুষ পাখি শিকার, খাঁচায় পোষা ও হত্যা করে খাওয়ায় উৎসাহিত হবে।"
তিনি আরও বলেন, `এই দৃশ্য ধারণের জন্য বনবিভাগের কোনও অনুমতিও নেয়া হয়নি। বন্যপ্রাণী হত্যা এবং খাওয়ার দৃশ্য দেখে মানুষ মনে করতে পারেন যে, এটা করা যায়। তারা এগুলো দেখে উৎসাহিত হতে পারেন। সিনেমা নাটকে ধূমপানের দৃশ্যে যেমন লেখা থাকে যে, এটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, কিন্ত `হাওয়া` সিনেমার ওই অংশে এই ধরনের কোনও বার্তা ছিল না।"
এই ধরনের চলচ্চিত্র শুধু বাংলাদেশেই নয় বর্হিবিশ্বেও প্রচার, সম্প্রচার ও প্রদর্শন হলে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার জম্ম দিবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
ইতিমধ্যে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের চার কর্মকর্তা `হাওয়া` সিনেমাটি দেখে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ এর ধারা ৩৮(১), ৩৮(২), ৪০ ও ৪৬ ধারা লঙ্ঘনের সত্যতা পেয়ে ১৭ই আগষ্ট ২০২২ ইং তারিখে বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।"
আলোচিত ‘হাওয়া’ সিনেমার বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন—চঞ্চল চৌধুরী, শরিফুল রাজ, সুমন আনোয়ার, নাজিফা তুষি, সোহেল মণ্ডল, নাসির উদ্দিন খান, রিজভী রিজু প্রমুখ।