• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

বুয়েট শিক্ষার্থীদের অন্যায়ভাবে আটক করা হয়েছে, দাবি অভিভাবকদের


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২৩, ০৬:৩৬ পিএম
বুয়েট শিক্ষার্থীদের অন্যায়ভাবে আটক করা হয়েছে, দাবি অভিভাবকদের

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওড়ে বেড়াতে গিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ২৪ শিক্ষার্থীকে অন্যায়ভাবে আটক করা হয়েছে। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে তারা জড়িত নয় বলে দাবি জানিয়েছেন তাদের অভিভাবকরা।

মঙ্গলবার (১ আগস্ট) বুয়েটের শহীদ মিনারে ওই শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের আয়োজনে এমন দাবি করা হয়। এছাড়া ওই শিক্ষার্থীদের অন্যায়ভাবে আটক করে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করে শিক্ষাজীবন হুমকির মধ্যে ফেলা হয়েছে বলে দাবি করা হয়।

লিখিত বক্তব্যে বুয়েটের আলী আম্মার মৌয়াজের ভাই জুনায়েদ বলেন, “সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে যাওয়া আমাদের সন্তান বুয়েটের ২৪ জন সহ ৩৪ জন পর্যটককে পুলিশ আটক করে মামলা করেছে। হঠাৎ এমন অনাকাঙ্ক্ষিত সংবাদ আমাদের মর্মাহত করেছে। আমাদের সন্তানদের অন্যায়ভাবে আটক করা, সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দায়ের আমাদের সন্তানদের শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে ফেলেছে। গত ২৯ জুলাই আমাদের সন্তান ও স্বজনরা ক্যাম্পাসের বন্ধুদের নিয়ে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়াতে যায়। যাওয়ার পর সেখানে তারা সুনামগঞ্জের বেশ কয়েকজন বুয়েটিয়ানকে পায় এবং সবাই একসঙ্গে ঘুরার কথা জানাই। রোববার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যার পর থেকে তাদের ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না। আমরা ধরে নিয়েছিলাম হাওর এলাকা হওয়ার কারণে, আছে সে কারণে নেটওয়ার্ক জটিলতায় তাদের পাওয়া যাচ্ছিল না।”

তিনি আরও বলেন, “ওইদিন প্রায় তিন ঘণ্টা পরে রাত ১০টার দিকে আমাদের অনেকের কাছে সন্তানরা তাদের নিজেদের ও অভিভাবকদের জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার জানতে চায়। তারা আমাদের বলে, হাওরে নৌকায় ভ্রমণের সময় জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে তাহেরপুর থানায় নিয়ে এসেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এরপর জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর পাওয়ার পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে বলে তাদের জানানো হয়। কিন্তু এর বেশি আর কথা বলতে দেওয়া হয়নি। তাদের ফোন নিয়ে নেওয়া হয়, এরপর থেকে তাদের খোঁজখবর নেওয়ার জন্য ওসি, এসপির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও কেউ ফোন রিসিভ করেনি। তাই আমরা জানতেও পারছিলাম না কেন তাদের আটক করা হয়েছে। অনেক উদ্বিগ্নতার পরে গতকাল সোমবার সংবাদমাধ্যমে জানতে পারি। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে তারা নাকি নাশকতার সৃষ্টির পরিকল্পনা নিয়েছে সেখানে গেছে।”

ওই অভিভাবক বলেন, “আমরা মনে করি এরকম হাস্যকর ও বানোয়াট অভিযোগ সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দুরভিসন্ধিমূলক। স্থানীয় ওসি এবং এসপিকে ফোন দেওয়ার পাশাপাশি আমরা রাত থেকে ভিসি স্যারকেও ফোন দিয়েছি অসংখ্যবার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা কারও সঙ্গেই যোগাযোগে সক্ষম হইনি। সোমবার বিকালে আমাদের হাতে পৌঁছানো মামলার বিবরণীতে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ঘটিয়ে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, জানমালের প্রতি ক্ষতি সাধন, রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ডসহ ধর্মীয় জিহাদ সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অপরাধ ইত্যাদি অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে।”

ওই অভিভাবক আরও বলেন, “স্বাভাবিকভাবেই পুরো বিষয়টি আমাদের প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এমন বাস্তবতায় সোমবার সন্ধ্যায় আমরা কয়েকজন অভিভাবক বুয়েটের ভিসি স্যারের দেখা করতে যাই। সেখানে গিয়ে ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের সঙ্গে দেখা হয় এবং তাকে পুরো বিষয়টি অবহিত করি। আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মহোদয় আমাদের জানান যে, তাদেরও পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে বিকাল চারটা বা পাঁচটার দিকে। সেসময় এরকম ষড়যন্ত্রমূলক প্রচেষ্টা কারা করছে এবং কোনো উদ্দেশ্যে করছে এ বিষয়টি নিয়ে যে আমরা উদ্বিগ্ন এবং আমাদের সন্তানদের শিক্ষাজীবন ও ক্যারিয়ার হুমকির সম্মুখীন সেটা জানিয়েছি আমরা এবং এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধও জানিয়েছি আমরা। তারা তাদের প্রসিডিওর অনুযায়ী চেষ্টা করবেন বলেছেন।”

মৌয়াজের ভাই জুনায়েদ বলেন, “একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, জব্দ করা মালামাল হিসেবে কতগুলো জিনিসপত্র তাদের কাছ থেকে উদ্ধারের যে প্রসঙ্গ অবতারণা করা হয়েছে। এটি অত্যন্ত হাস্যকর এবং পরিষ্কারভাবে বানোয়াট বিষয়। তারা টার্ম-ব্রেকের বন্ধের সেঙ্গ বন্ধু-বান্ধব ঘুরতে ওখানে গেছে। আর টাঙ্গুয়ার হাওড়ে যেয়ে কেউ নাশকতার পরিকল্পনা করবে এমন অভিযোগও হাস্যকর। পরবর্তীতে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তারা এটা পরিষ্কার করেছে যে, তাদের কাছে এবং সঙ্গে থাকা মোবাইলে প্রত্যাশিত কিছুই না পেয়ে তাদের সামনেই জব্দকৃত মালামাল হিসেবে সেগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে এবং ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড দিয়ে প্রিন্ট করা হয়েছে তাদের মামলা সাজানোর জন্য।”

তিনি বলেন, “কোনো ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে আমাদের সন্তানেরা জড়িত নয়। কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলছি তারা সাধারণ শিক্ষার্থী মাত্র। সার্বিক পরিস্থিতিতে ভিক্টিম শিক্ষার্থীদের পরিবারের আপনজন হিসেবে আমরা মানসিকভাবে বেদনাদায়ক সময় পার করছি ও তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শংকায় আছি।”

এর আগে রোববার বিকেলে তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকবাহী নৌকা থেকে জামায়াত-শিবির সন্দেহে ৩১ বুয়েট শিক্ষার্থীসহ ৩৪ জনকে আটক করে স্থানীয় থানা পুলিশ। এ সময় দুই নৌকাচালককেও আটক করা হলেও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় এসআই মো. রাশেদুল কবির বাদী হয়ে তাহিরপুর থানায় মামলা রুজু করেন। এরপর তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

এদিকে রাত সাড়ে ১১টার দিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো বিষয়টি নিশ্চিত করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সাঈদ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, জানমালের ক্ষতিসাধন, রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ডসহ সাম্প্রতিক সময়ে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তোলার লক্ষ্যে একত্রিত হয়েছিলেন। এতে নেতৃত্বে দেন বুয়েট শাখার বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের বায়তুলমালবিষয়ক সম্পাদক আফিফ আনোয়ার।

এতে আরও বলা হয়, তাদের আটক করে তাহিরপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। আটকদের কাছ থেকে তল্লাশি করে ৩৩টি বিভিন্ন মডেলের মোবাইল ফোন, ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন কার্যক্রম সংক্রান্ত স্ক্রিনশর্টের কপি, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কল্যাণ তহবিল সংক্রান্ত প্রচারপত্র, সদস্য, সাথীদের পাঠযোগ্য কোরআন ও হাদিসের সিলেবাস, কর্মী ঘোষণা অনুষ্ঠান সংক্রান্ত স্ক্রিনশর্টের কাগজপত্র জব্দ করা হয়।

Link copied!