• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মেয়েকে ‘নাস্তিক’ আখ্যা, ‘সমাজচ্যুত’ পরিবার


সিলেট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২২, ০৮:১৮ পিএম
মেয়েকে ‘নাস্তিক’ আখ্যা, ‘সমাজচ্যুত’ পরিবার

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বাসিন্দা ঝর্ণা চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়ায় ‘নাস্তিক’ আখ্যা দিয়ে তার পরিবারকে সমাজচ্যুত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে‌। ঝর্ণা উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান গত ২৬ ডিসেম্বর।

পরিবারকে সমাজচ্যুত করায় সোমবার (৩১ জানুয়ারি) লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ঝর্ণা চৌধুরীর বাবা আব্দুল হাই চৌধুরী।

ঝর্ণা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি বিদেশে পাড়ি জমান। বিদেশে যাওয়ায় তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে দেশে তার পরিবারকে সমাজচ্যুত করেছে স্থানীয় মসজিদ কমিটি।

ইউএনও বরাবর দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ঝর্ণা ২০০৭ সাল থেকে বিভিন্ন সামাজিক কাজে যুক্ত ছিলেন। একটি সামাজিক সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। নারীর অধিকার রক্ষায় তিনি বিভিন্ন কাজে যুক্ত ছিলেন। এ কারণে এলাকার কিছু মানুষ তাকে সবসময় অন্য চোখে দেখত।

ঝর্ণার বাবা আব্দুল হাই মুঠোফোনে বলেন, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আমার মেয়ের নামে কুৎসা রটায় কিছু লোক। এ ঘটনায় শাহপরাণ থানায় জিডি করেছিল ঝর্ণা। পরে গত ২৬ ডিসেম্বর উচ্চশিক্ষার জন্য সে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যায়।”

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ঝর্ণার ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে এলাকায় নানা অপবাদ প্রচার করে একটি পক্ষ। ফেসবুকে তারা প্রচার করেন, ঝর্ণা নাস্তিক হয়ে গেছেন। এরপর স্থানীয় মসজিদ কমিটি সভা ডেকে আব্দুল হাইয়ের পরিবারকে সমাজচ্যুত করার ঘোষণা দেয়। এ ঘটনায় ঝর্ণার বাবা সামাজিকভাবে চাপে আছেন।

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ঝর্ণা চৌধুরী বলেন, “গত ২৬ ডিসেম্বর আমি উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় পাড়ি জমাই‌। এরপর থেকে স্থানীয় একটি মৌলবাদী গোষ্ঠী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাকে নিয়ে কুৎসা রটাতে থাকে। বিদেশে গিয়ে আমি ছোট কাপড় পরছি, নাস্তিক হয়ে গেছি- এমন কথা তারা প্রচার করতে থাকে। এতে করে আমি বিব্রত বোধ করছি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার ব্যাপক মানহানি হচ্ছে।”

ঝর্ণা চৌধুরী আরও বলেন, “স্থানীয় ভাটেরা বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটি আমার বাবা আব্দুল হাইকে সালিশ বৈঠকে ডাকেন। গুরুতর অসুস্থ থাকায় বাবা যেতে পারেননি। তাই ক্ষিপ্ত হয়ে মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মাখন মিয়া ও সম্পাদক আমিন মিয়ার নির্দেশে আমার পরিবারকে একঘরে করে দেওয়া হয়।”

ঝর্ণা অভিযোগ করে বলেন, সমাজচ্যুতির খবর পেয়ে আমি মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমিন মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন- আমি না কি আমেরিকায় এসে আমার এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বী একজনকে বিয়ে করেছি। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তাছাড়া আমার বাবা কেন তাদের নির্দেশ মানেননি, তাই আমার পরিবারকে সমাজচ্যুত করেছেন।

সমাজচ্যুতির বিষয়ে জানতে পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকের মোবাইলে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা কল ধরেননি।

ভাটেরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এটি সমাধানে আমরা চেষ্টা করছি।

কুলাউড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, সমাজচ্যুতির বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ পাওয়ার পরই সমজিদ কমিটিকে সতর্ক করা হয়েছে। এছাড়া আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি তাদেরকে আমার অফিসে আসতে বলেছি। ঝর্ণার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় থানাকেও অবগত করা হয়েছে।  

Link copied!