শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিলেন তিন বছরের অসুস্থ মেয়েকে দেখতে। সেখানে কলহে জড়ান শ্বশুর ও শ্যালকের সঙ্গে। আর তার জের ধরে শ্বশুর খোরশেদ মোল্লা, শ্যালক আরিফ মোল্লা ও শ্যালকের বন্ধু দেলোয়ার হোসেন ছুরিকাঘাতে খুন করেন মো. হানিফকে। হত্যার পর হানিফের শ্বশুর আবার সেই ছুরি ধুয়ে রেখে দেন বাড়িতে।
সোমবার নিহত হানিফের শ্বশুর, শ্যালকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। উদ্ধার করা হয় হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি। এর মধ্যে মধ্যে শ্বশুর ও শ্যালক আদালতে জবানবন্দি দেন গত মঙ্গলবার। সেই জবানবন্দিতেই বেরিয়ে আসে এই হত্যাকাণ্ডের আদ্যোপান্ত।
গত রোববার সকালে চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকার মাঝের ঘোনা গলাচিপা কাঁচা রাস্তার মোড়ে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। জরুরি সেবা ৯৯৯ থেকে কল পেয়ে পুলিশ সেদিনই হানিফের লাশ উদ্ধার করে। তার শরীরে ১৭টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল। এ ঘটনায় হানিফের বাবা জামাল মিয়া বাদী হয়ে বায়েজিদ বোস্তামী থানায় মামলা করেন।
পুলিশ জানায়, শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে বনিবনা ছিল না হানিফের। দুই বছর ধরে হানিফের স্ত্রী থাকছিলেন বাবার বাড়িতে। তবে মেয়ের অসুস্থতার খবর শুনে তিনি দেখতে গিয়েছিলেন তাকে। সেখানেই পারিবারিক কলহের জের ধরে খুন করা হয় তাকে।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচজন হলেন হানিফের শ্বশুর খোরশেদ মোল্লা, শ্যালক আরিফ মোল্লা, তাঁর বন্ধু দেলোয়ার হোসেন, হানিফের স্ত্রী নুরজাহান আক্তার ও শাশুড়ি রহিমা বেগম। এর মধ্যে আদালতে জবানবন্দি দেন হানিফের শ্বশুর খোরশেদ মোল্লা ও শ্যালক আরিফ মোল্লা।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দি থেকে জানা যায়, সাত বছর আগে হানিফের সঙ্গে খোরশেদের বড় মেয়ে নুরজাহানের সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে পারিবারিক কলহের কারণে দুই বছর ধরে হানিফের স্ত্রী তার বাবার বাড়িতে থাকছেন। এরই মধ্যে পারিবারিক আদালতে হানিফের বিরুদ্ধে মামলাও করেন তার স্ত্রী। তিন বছরের মেয়ে হাবিবা আক্তার অসুস্থ হয়ে পড়েছে শুনে শ্বশুরবাড়িতে যান হানিফ। এর আগেই শ্বশুর খোরশেদ তার অপেক্ষায় ছুরি নিয়ে বাড়ির সামনে অপেক্ষা করছিলেন। বিষয়টি হানিফ নিজের মোবাইল ফোনে ধারণ করেন। এ সময় উত্তেজিত হয়ে হানিফকে ধাক্কা দেন তার শ্বশুর খোরশেদ। এরপর শ্বশুর, শ্যালক ও শ্যালকের বন্ধু মিলে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন তাকে।
বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, বড় মেয়ের জামাই হানিফকে হত্যাকাণ্ডের পর শ্বশুর খোরশেদ ছুরিগুলো ঘরে নিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে ঘরে রেখে দেন। তাকে গ্রেপ্তারের পর ঘরে অভিযান চালিয়ে একটি ছুরি ডাইনিং টেবিলের নিচ থেকে, আরেকটি ছুরি ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার পাঁচ আসামির মধ্যে শ্বশুর ও শ্যালক আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।