শ্রাবণ শেষের দিকে এলেও শ্রাবণের ধারায় ঝড়ছে না কাঙ্খিত বৃষ্টি। ছিটেফোটা বৃষ্টি কাজে আসছে না কৃষকের। খড়ার প্রভাবে একদিকে আমন চাষ ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে পানি স্বল্পতার কারণে পাট জাগ দিতে সমস্যায় পড়ছেন তারা। সব মিলিয়ে এবার পাট জাগে কৃষকের বাড়তি খরচ পোহাতে হচ্ছে।
ফরিদপুর উপজেলার কৃষক মহররম আলী জানান, দুই বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করে চরম বিপাকে পড়েছেন তিনি। উৎপাদিত পাট জাগ দেয়ার জন্য আশপাশের দু কিলোমিটারের মধ্যে পানি মিলছে না। বাধ্য হয়ে (শ্যালো ইঞ্জিন চালিত) গাড়ি ভাড়া করে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে নদীতে পাট পচানোর জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। এতে প্রতি বিঘার অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে ৪ হাজার টাকা।
পাবনা সদর, আটঘরিয়া, বেড়া, সুজানগর, ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহর উপজেলার কয়েকজন পাটচাষির সাথে আলাপকালে তারা বলেন, পাট কেটে দূরের কোনো নদী বা জলাশয়ে নিতে প্রতি বিঘার জন্য ট্রলি অথবা ঘোড়ার গাড়ি ভাড়া লাগছে ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকা। এছাড়া দূরে নিয়ে সেখানে পচানোর জন্য জাগ দেওয়ার জায়গা তৈরি ও শ্রমিক বাবদ অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। দৈনিক ৭০০ টাকা হিসেবে কাজ করছেন এসব শ্রমিকরা।
গত বছরগুলোতে বাড়ি বা জমির কাছে পাট পচানোর পর বাড়ির নারী-শিশুরা পাটের আঁশ ছাড়ানোতে অংশ নিয়েছিল। এবার এ কাজের বাড়তি লোক নিয়োগ করতে হচ্ছে টাকা খরচ করে। ফলে পাট ছাড়ানো বাবদও অতিরিক্ত খরচ গুনতে হচ্ছে।
এদিকে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আমন আবাদ নিয়েও বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। তারা জানান, তীব্র খরার কারণে মাটি শক্ত হয়ে ফেটে গেছে। সেচের মাধ্যমে পানি দিয়েও চারা রোপন করা যাচ্ছে না।
পাবনার খামারবাড়ি সূত্রে জানা যায়, জেলায় চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৮০ হাজার ২১৭ টন উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরে ৫৫ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১২ শতাংশ জমিতে ধানের চারা লাগানো হয়েছে। সেচের জন্য মাঠে গভীর নলকূপ, অগভীর নলকূপ ও এলএলপি (লো লিফট পাম্প) সেচযন্ত্র মিলিয়ে জেলায় ২ হাজার ২৫৩টি সেচযন্ত্র রয়েছে। এর মধ্যে ৭৮৩টি বিদ্যুৎ চালিত সেচযন্ত্র। বাকি ১ হাজার ৪৭০টি সেচযন্ত্র ডিজেলচালিত। খরা মোকাবিলায় বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত সেচযন্ত্রের প্রায় সবগুলোই চালু রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সেচের কারণে চলতি বছর বিঘা প্রতি অতিরিক্ত তিন থেকে চার হাজার টাকা খরচ হচ্ছে আমন চাষিদের।

ঈশ্বরদী, আটঘরিয়া, সাঁথিয়া উপজেলার কয়েকজন কৃষক বলেন, আমন আবাদে জমি প্রস্তুত ও ধানের চারা বাঁচাতে কৃষকদের ভরসা ভূগর্ভস্থ পানি। এতে খরচ বাড়ছে তাদের। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে এলাকায় ছিটে ফোটা বৃষ্টি হলেও মাটি ভেজেনি। ফলে চারা লাগানোর জন্য প্রস্তুত করা জমির মাটি ফেটে যাচ্ছে। যেসব জমিতে চারা লাগানো হয়েছে, পানির অভাবে ওই সব চারা মরে যেতে বসেছে। খরার কারণে মাটি শুকনা কাঠের মতো হয়ে থাকায় সেচ দিয়ে মাটি ভেজাতে অনেক বেশি পানি লাগছে। আমনের চারা লাগানোর জন্য জমি প্রস্তুত ও খরার কবলে পড়া আমনের চারা বাঁচাতে ইতোমধ্যে দুবার সেচ দিতে হয়েছে। এই মৌসুমে এভাবে অনিয়মিত বৃষ্টিপাত চললে কমপক্ষে আরও ছয়বার সেচ দিতে হবে। একদিকে খরা, আরেক দিকে চলছে লোডশেডিং। এক বিঘা জমিতে বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র দিয়ে সেচ দিতে বর্তমানে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ছে।
জেলা কৃষি খামারের এক র্কমর্কতা বলেন, খরার কারণে গত বছরের তুলনায় এবার পাটের ফলন ও মান কিছুটা খারাপ হয়েছে। এর আগে বিঘায় ১০ থেকে ১২ মণ ফলন পাওয়া গেলেও এবার পাওয়া যাচ্ছে আট মণের কাছাকাছি। এছাড়া পাটের আঁশের মানও আগের তুলনায় কিছুটা খারাপ বলে দাবী তার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাবনার উপপরিচালক জামাল উদ্দীন বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় পাট আবাদ হয়েছিল ৪৩ হাজার ২৪৫ হেক্টও জমিতে। এ পর্যন্ত কাটার হার ২৩ শতাংশ। অপর্যাপ্ত বৃষ্টির কারণে পানির অভাবে পাট জাগ দিতে সমস্যা হচ্ছে কৃষকদের। তবে র্বতমানে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বর্ষার পানি চলে আসায় এই সমস্যা কিছুটা লাঘব হবে বলে দাবী এই কৃষি কর্মকর্তার।
আমন চাষের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমনের মৌসুম কেবলই শুরু হয়েছে। আগস্ট মাস জুড়েই আমনের চারা লাগানো যাবে। ইতিমধ্যে ১২ শতাংশ জমিতে চারা লাগানো সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি, সঠিক সময়েই আমনের চারা লাগানো সম্পন্ন হবে। তবে যেসব কৃষক সেচ দিয়ে চাষাবাদ করছেন, তাদের খরচ বাড়বে। গত বছরেও মৌসুমের শুরুতে তেমন বৃষ্টি ছিল না। তবে শেষের দিকে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়েছিল।
 
                
              
 
																                   
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    





































