• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

বিকি বিল যেন রঙিন শাপলার ইন্দ্রজাল


জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া, সুনামগঞ্জ
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২২, ০৮:২৫ এএম
বিকি বিল যেন রঙিন শাপলার ইন্দ্রজাল

যেদিকে চোখ যায় শুধু লাল শাপলা। শাপলার সৌন্দর্য পূর্ব আকাশে সূর্যের রক্তিম আলোকচ্ছটাকেও হার মানায়। যেন পানির ওপর ফুলে ফুলে সাজানো লালগালিচা। এখন লাল শাপলায় ঢেকে গেছে পুরো বিল। যেন বিলজুড়ে লাল শাপলার মেলা। দেশীয় নানা প্রজাতির পাখির কিচিরমিচির শব্দ প্রকৃতি তার রূপের সঙ্গে নিজেই যেন বাদ্যযন্ত্রে সুরের ঝরনাধারা ছড়িয়ে দিয়েছে। এই সৌন্দর্য যেকোনো পর্যটককে মায়ার ইন্দ্রজালে জড়িয়ে রাখে।

বলছিলাম দেশের উত্তরে মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে সম্ভাবনাময় লাল শাপলার হাওর বিকি বিলের কথা। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি শাপলার উপস্থিতি দেখা যায় এই বিলে। এ বিলটি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের কাশতাল গ্রামের পাশে অবস্থিত। পাহাড় আর হাওড়ের পাশাপাশি বিকি বিলের এমন সৌন্দর্য স্থানীয়দের পাশাপাশি মুগ্ধ করছে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকদের।

উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের কাশতাল, বরোখাড়া ও আমবাড়ি গ্রাম বিকি বিলটিকে তিন দিক থেকে ঘিরে রেখেছে। বিকি বিল হাওরের ১০০ কিয়ারের অধিক (৩০ শতাংশে এক কিয়ার) জমি নিয়ে এই শাপলার গালিচা বিছিয়েছে। এখানে লাল শাপলার পাশাপাশি সাদা ও বেগুনি রঙের শাপলাও জন্মে। কোনো রকম চাষাবাদ ছাড়াই ১৫-১৬ বছর ধরে প্রাকৃতিক ভাবে লাল শাপলা ফুলের বিপুল সমারোহ ঘটে। তবে ৭ বছরের বেশি সময় ধরে লাল শাপলার এই অপরূপ দৃশ্য দেখতে দর্শনার্থীরা আসেন। ২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ এ বিলটিকে পর্যটন স্পট হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সূর্যের উপস্থিতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শাপলা তার আপন সৌন্দর্যকে গুটিয়ে নিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সূর্যোদয় থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত লাল শাপলার সৌন্দর্য দৃশ্যমান থাকে। প্রাকৃতিকভাবেই এই হাওরে ফুটছে আকর্ষণীয় লাল শাপলা। যা হাওরের আশপাশের পরিবেশ আর গ্রামগুলোকে মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে। বর্ষায় হাওরটি পানিতে নিমজ্জিত থাকে। আর বাকি ছয় মাস এখানে বোরো ধানের চাষাবাদ হয়। মাত্র কয়েক মাসের জন্য এখানে শাপলা ফোটে।

সাদা ও বেগুনি রঙের শাপলা মূলত লাল শাপলার তুলনায় অপ্রতুল। স্থানীয় ভাবে সহজলভ্য হওয়ায় এলাকার লোকজন শাপলা তুলে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করেন এবং বিভিন্ন হাটে বিক্রি করে থাকেন।

উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুক মিয়া জানান, বাদাঘাট বাজার থেকে কাশতাল গ্রামের দূরত্ব এক কিলোমিটারের মত হবে। সড়কের বাঁ পাশে চোখে পড়বে বিকি বিল। ডানে তাকালে মেঘালয় পাহাড়। পাহাড়ের ওপরে মেঘের খেলা। হাওর-পাহাড়ের সৌন্দর্য মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী জানান, টাংগুয়ার হাওরসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটের পাশাপাশি লাল শাপলার বিকি বিল প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি। ভবিষ্যতে পর্যটন আকর্ষণে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। বিকি বিলের উন্নয়নসহ এলাকার রাস্তাঘাট উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

Link copied!