• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

১২০ কিলোমিটার রেলপথ যেন মৃত্যুফাঁদ!


মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, কুমিল্লা
প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২২, ১০:৫৯ এএম
১২০ কিলোমিটার রেলপথ যেন মৃত্যুফাঁদ!

★ সাড়ে ৫ বছরে ৩৩৪ জনের প্রাণহানি
★ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা লালমাই, সদর দক্ষিণ ও নাঙ্গলকোট


কুমিল্লা অংশের ১২০ কিলোমিটার রেলপথ যেন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। সাড়ে ৫ বছরে জেলায় ট্রেন দুর্ঘটনায় ৩৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসেই জেলায় ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৪৭ জন। এসব দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যাও ৫ শতাধিক বলে জানা গেছে।

লাকসাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন খন্দকার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

রেলওয়ে পুলিশ জানায়, সাধারণ মানুষের অসচেতনার কারণেই ট্রেনে কাটা পরে মারা যান অনেকে। এছাড়া রেললাইনের ওপর দিয়ে যাওয়া সড়কপথের এলাকায় বিভিন্ন অবৈধ লেভেলক্রসিংয়ে যান চলাচলে অসাবধানতার কারণে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহনের সঙ্গে ট্রেনের সংঘর্ষেও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, অবৈধ লেভেলক্রসিংগুলো বৈধ করার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া লেভেলক্রসিং এলাকা এবং অতিগুরুত্বপূর্ণ একটি বিদ্যালয়ের সীমানায় রেললাইনে কাঁটাতারের বেড়া বা ফ্যান্সিং করা হবে।  

লাকসাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন খন্দকার জানান, লাকসাম রেলওয়ে থানার আওতাধীন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গঙ্গাসাগর রেলস্টেশন থেকে ফেনীর ফাজিলপুর রেলওয়ে স্টেশন এবং লাকসাম-চাঁদপুর ও লাকসাম নোয়াখালী রুট।

পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০১৭ সালে ৭৪ জন, ২০১৮ সালে ৬৮ জন, ২০১৯ সালে ৬৬ জন, ২০২০ সালে ৩৭ জন, ২০২১ সালে ৪২ জন ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এছাড়া ২০২২ সালের ৬ মাসে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা ৪৭ জন। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা কুমিল্লার লালমাই, সদর দক্ষিণ ও নাঙ্গলকোট। ট্রেন দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে এই জেলার অধীনে রেল রুটগুলোকে চারটি বিটে ভাগ করে পুলিশ কাজ করছে।

কুমিল্লা রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী লিয়াকত আলী মজুমদার জানান, কুমিল্লা জেলায় রেলপথ রয়েছে ১২০ কিলোমিটারের বেশি। এর মধ্যে লাকসাম থেকে আখাউড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলরুটের ডাবল লাইন নির্মাণকাজ চলছে। লাকসাম থেকে আখাউড়া ৭২ কিলোমিটার রেলপথে বৈধ লেভেলক্রসিংয়ের সংখ্যা ১৪টি, অবৈধ লেভেলক্রসিংয়ের সংখ্যা ৬৪টি। এর মধ্যে ২০টি লেভেলক্রসিং নতুন করে বৈধ করা হচ্ছে। এছাড়া লাকসাম-চাঁদপুর রেলপথে ২০টি বৈধ লেভেলক্রসিং রয়েছে এবং ৩৭টি লেভেলক্রসিংয়ের মধ্যে ১৪টি নতুন করে বৈধ করা হচ্ছে। লাকসাম-নোয়াখালী রেলপথে বৈধ লেভেলক্রসিংয়ের সংখ্যা ২২টি এবং অবৈধ ৪২টি লেভেলক্রসিংয়ের মধ্যে নতুন করে বৈধ করা হচ্ছে ১৬টি।

তিনি আরও জানান, দুর্ঘটনা এড়াতে প্রতিটি লেভেলক্রসিংয়ে ১০০ ফুট করে ফ্যান্সিং করা হবে এবং বিজয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এলাকায় ৫০০ ফুট ফ্যান্সিং করা হবে। আর রেললাইনে যেহেতু সব সময় ১৪৪ ধারা বলবত থাকে সে ক্ষেত্রে জনসাধারণকেই সচেতন হতে হবে।

রেল দুর্ঘটনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলা চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন কালু জানান, একসময় নাঙ্গলকোট এলাকায় অনেক ট্রেন দুর্ঘটনা বা ট্রেনে কাটা পড়ে মানুষ মারা যেত। কিন্তু লেভেল ক্রসিংগুলোতে গেট ও গেটম্যান দিয়ে দেওয়াতে মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে।

গত ৯ মার্চ কুমিল্লায় স্কুলে যাওয়ার পথে ট্রেনে কাটা পড়ে ৩ শিশু শিক্ষার্থী নিহত হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল পথের কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হচ্ছে সদর দক্ষিণ উপজেলার বারপাড়া ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের মো. মাসুমের মেয়ে মিম (১৪), একই গ্রামের রিপন মিয়ার মেয়ে রিমা (১২) ও বরুড়া উপজেলার অর্জুনতলা গ্রামের ভুলু মিয়া মেয়ে তাসফিয়া (১৩)। তারা তিনজন বিজয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। এ ঘটনায় কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই ট্রেন দুর্ঘটনা সারা দেশে আলোচনা সৃষ্টি করে। 

Link copied!