• ঢাকা
  • সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

টাঙ্গাইলে ১২৮৪টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গাপূজা


টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৩, ০৯:৩৮ এএম
টাঙ্গাইলে ১২৮৪টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গাপূজা

নরম কাদা-মাটি দিয়ে শৈল্পিক ছোঁয়ায় তিল তিল করে গড়ে তোলা দশভূজা দেবী দুর্গার প্রতিমায় ভরে উঠেছে প্রতিটি মণ্ডপ। শিল্পীর নিপুণ হাতে তৈরি করেন দেবী দুর্গাকে। এ যেন প্রতিমাশিল্পীদের মায়ার বাঁধন। আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর দিগন্তজুড়ে কাশফুল জানান দিচ্ছে শারদীয় দুর্গা উৎসবের। প্রকৃতি যেন ছড়িয়ে দিচ্ছে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা। একটু একটু করে দেবী দুর্গা রূপ নিচ্ছেন নিজ অবয়বে। নানান রং আর তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে দেবীর প্রতিচ্ছবি। তাই ঘুম নেই প্রতিমা শিল্পীদের। রঙের আঁচড় আর সাজসজ্জায় দুর্গা দেবীকে সাজাতে শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন টাঙ্গাইলের প্রতিমাশিল্পীরা।

আগামী ১৯ অক্টোবর পঞ্চমী পূজার মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা শুরু হবে। ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গাপূজা।

টাঙ্গাইল জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, এ বছর টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় ১ হাজার ২৮৪টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। জেলার সদর উপজেলার পূজামণ্ডপে ২১৫টি, মির্জাপুরে ২৪৩টি, বাসাইলে ৬৫টি, নাগরপুরে ১৩৩টি, দেলদুয়ারে ১৩০টি, গোপালপুরে ৫৬টি, ভূঞাপুরে ৪১টি, কালিহাতীতে ১৯২টি, ঘাটাইলে ৮১টি, সখীপুরে ৩৭টি, মধুপুরে ৫৪টি ও ধনবাড়ীতে ৩৭টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর পূজা মণ্ডপের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ২৬৭টি ও চলতি বছর ১ হাজার ২৮৪টি। গত বছরের তুলনায় পূজামণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে ১৭টি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, তারটিয়া পাল পাড়া, পূর্ব আদালত পাড়া, বাসাখানপুর পাল পাড়া, প্যারাডাইস পাড়াসহ প্রতিটি মণ্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। মাটির কাজ শেষ করেছেন এখন রংতুলির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। আবার কেউ রং মিশে দিচ্ছেন। তাদের যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। রাতদিন কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিমাশিল্পীরা।

সদর উপজেলার তারটিয়া পাল পাড়া এলাকার প্রতিমাশিল্পী পরিমল পাল বলেন, “এ বছর পাঁচটি প্রতিমা করছি। টাঙ্গাইলে ৩টি, ঢাকায় ১টি ও বরিশালে ১টি। রংতুলির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছি। আমাদের কাজ প্রায় শেষের দিকে।”

প্রতিমাশিল্পী সুজয় পাল বলেন, “রংতুলির কাজে আমরা ব্যস্ত সময় পার করছি। রঙের কাজ প্রায় শেষের দিকে। রাতদিন পরিশ্রম করে কাজ শেষ করছি। এই কাজ আমাদের বংশপরম্পরায় থেকে এসেছে। আমার দাদা করছে, বাবা করছে, এখন আমি করতেছি। এ বছর রঙের প্রচুর দাম, রঙের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। আমরা যে পারিশ্রমিক পাচ্ছি, সেই পারিশ্রমিকে আমাদের হচ্ছে না। আমাদের আরও পারিশ্রমিক হলে ভালো হতো। পরিবার নিয়ে ভালোভাবে চলতে পারতাম।”

আরেক প্রতিমাশিল্পী হেমন্ত পাল বলেন, “আমরা প্রতিমাতে যে রং ও মাটি ব্যবহার করি, এই রঙের দামটা বেশি। এ বছর পাঁচটি প্রতিমা তৈরি করেছি। গত বছরের চেয়ে এ বছর রঙের দাম, মাটির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা যে পরিশ্রম করি সে অনুযায়ী পারিশ্রমিক পাই না। রঙের দামের তুলনায় আমাদের পারিশ্রমিক হয় না। তবু কাজটি করি ফুটিয়ে তুলার জন্য সবাইকে আনন্দ দেওয়ার জন্য।”

টাঙ্গাইল পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার গুণ ঝন্টু বলেন, “এ বছর জেলার ১২টি উপজেলায় মোট ১ হাজার ২৮৪টি পূজামণ্ডপে পূজা হবে। প্রতিটি পূজামণ্ডপে ৫০০ কেজি করে জিআর চাল দেওয়া হবে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের আলোচনা সভা হয়েছে। প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।”

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, পূজার সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে নেওয়া হয়েছে বিশেষ পরিকল্পনা। প্রতিটি পূজামণ্ডপে পর্যাপ্তসংখ্যক আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, আনসার সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া মোবাইল টিম ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর সদস্যরা কাজ করবেন। 

Link copied!