লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে রোববার (৫ নভেম্বর)। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জাতীয় পার্টির (জাপা) লাঙ্গল প্রতীকের মুহাম্মদ রাকিব হোসেন এবং জাকের পার্টির গোলাপ ফুল প্রতীকের সামছুল করিম খোকন। তারা রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ প্রশাসনকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন।
জাকের পার্টির প্রার্থী সামছুল করিম খোকন অভিযোগ করে বলেন, “ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ও নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দিয়েছেন। তারা ব্যানার চুরি ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছেন। দলীয় লোকজনকে এজেন্ট না হতে হুমকিও দিচ্ছেন।”
সামছুল করিম আরও জানান, গত ২২ অক্টোবর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তার দুটি ব্যানার চুরি হয়েছে। সদর উপজেলার কুশাখালীর শান্তিরহাট এলাকায় প্রচারণার মাইক ভাঙচুর করেছে। বিভিন্ন জায়গায় গোলাপ ফুলের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছে। যারা ক্ষমতায় আছে, এগুলো তারাই করছে।
এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু এ বিষয়ে তারা কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কি না, আমি জানি না। আমাকে জানানোও হয়নি। এতে আমি শঙ্কা প্রকাশ করছি। নির্বাচনের দিন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর লোকজন ভোটারদের কাছ থেকে ব্যালট পেপার টানাটানি করতে পারেন।”
একই শঙ্কার কথা জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী রাকিব হোসেন। তিনি বলেন, “সদর উপজেলা পূর্বাঞ্চলের ভোটকেন্দ্রগুলোতে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। ভোটারদের কাছ থেকে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিতে পারে এমন আভাস আমরা পেয়েছি। প্রশাসনকেও বিষয়টি জানিয়েছি।”
ভোটগ্রহণের দিন এ দুই প্রার্থী প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও গণমাধ্যমকর্মীদের সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী গোলাম ফারুক পিংকু বলেন, “সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে, এমন কোনো কাজ আমি করি না। আমি গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমি নির্বাচিত হব। কোনো প্রার্থীর প্রচারণায়ও আমি বাধা দিইনি।”
প্রার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে কথা হয় রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে। সংবাদ প্রকাশকে তিনি বলেন, “গোলাপ ফুলের প্রার্থী অভিযোগ করেছেন, তার ব্যানার-ফেস্টুন চুরি হয়েছে। এ নিয়ে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কিন্তু ঘটনাস্থলে কখন ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো হয়েছে, তা তিনি জানাতে পারেননি। এখন পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে। নির্বাচনের দিন সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রার্থীরা কোনো অভিযোগ করলে অবশ্যই তা গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিস্থিতি স্বাভাবিক। সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে প্রশাসনকে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা মিটিং হয়েছে। আশা করি ৫ নভেম্বর সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে পারব।”
গত ৩০ সেপ্টেম্বর বার্ধক্যজনিত কারণে লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শাহজাহান কামাল মারা যান। তার মৃত্যুতে ৪ অক্টোবর আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একই সঙ্গে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৩ হাজার ৭৪৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৯ হাজার ৯৬ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৯৪ হাজার ৬৪৮ জন। ৫ নভেম্বর এই উপনির্বাচনে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মোট ১১৫টি কেন্দ্রে ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জার্তীয় পার্টি, জাকের পার্টি ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদিকে উপনির্বাচন উপলক্ষে ইতোমধ্যে ভোটের সরঞ্জাম বিতরণ শুরু হয়েছে। শনিবার বেলা ১১টার দিকে লক্ষ্মীপুর শহরের আদর্শ সামাদ স্কুল মাঠ থেকে ব্যালট বাক্সসহ অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ করেন রিটানিং কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন। ভোটের দিন ভোর ৫টায় ১১৫টি কেন্দ্রে ব্যালেট পেপার পাঠানো হবে।
এ ছাড়া সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা মোতায়েন থাকবেন। টহলে থাকবে ৭ ব্যাটালিয়ন র্যাব ও ৬ ব্যাটালিয়ন বিজিবি। ১৫ টিম স্ট্রাইকিং ফোর্স ম্যাজিস্ট্রেট টিম থাকবে মাঠে।
আপনার মতামত লিখুন :