শান্তিরক্ষা মিশনে নিহত শরিফের দাফন সম্পন্ন

শান্তি রক্ষা মিশনে নিহত সৈনিক মো. শরীফ হোসেনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (১৫ অক্টোবর) বাদ জোহর গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌরসভার বেড়া খারুয়া কবরস্থানের পাশের মাঠে জানাযা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা গার্ড অব প্রদান শেষে দাফন করা হয়।

এর আগে, দুপুর সোয়া ১টায় আর্মি ওয়েল ফেয়ার ট্রাষ্ট্রের একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লাশবাহী গাড়িতে সেনাবাহিনীর হেডকোয়ার্টার থেকে শরিফের কফিন গ্রামের বাড়ি বেড়া খারুয়ায় এসে পৌঁছায়। এসময় অপেক্ষমান জনতা, স্বজনসহ সকলের মধ্যে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

জাতীয় ও সেনাবাহিনীর পতাকা মোড়ানো কফিন গ্রহণ করেন শহীদ শরীফের বাবা লেবু তালুকদার। তার পরিবারের অন্য সদস্য ও স্বজনসহ এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।

কফিনে ছেলের মুখ দেখে মা পাঞ্জু আরা বার বার মুর্ছা যাচ্ছিলেন। এসময় শরিফের স্ত্রী, ভাই  ও বোন কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে।

শরিফের বাড়িতে তার মা-বাবা, স্ত্রী, ভাই- বোনসহ স্বজনদের সান্তনা দেন সেনাবাহিনীর অফিসাররা। এসময় সেনাপ্রধানের পক্ষ থেকে নগদ ১ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এর আগেও ১ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া শান্তিুরক্ষা সম্মানা স্মারকসহ সেনাপ্রধানের পক্ষ থেকে সম্মাননা পত্র তুলে দেওয়া হয়। তাছাড়া শান্তি রক্ষা মিশনে শরীফের ব্যবহৃত সকল কাপড়সহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাগজপত্র হস্তান্তর করা হয়।

বেলা ২টা ৩০ মিনিটে নামাজে জানাজা পূর্ব সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বেলকুচি উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সাজেদুল, থানার ওসি তাজমিলুর রহমান, পৌর মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজা, স্থানীয় এমপির ব্যক্তিগত সহকারী সেলিম সরকার, উপজেলা নির্বাচন অফিসার রায়হান কুদ্দুস, গ্রামবাসির পক্ষে বীরমুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান মাখন, পরিবারের পক্ষে মাহদুল হাসান শান্ত ও এক্সসোলজারস অ্যাসোসিয়েশনের বেলকুচি উপজেলা সভাপতি সার্জেন্ট (অব) আইয়ুব আলীসহ গন্যমান্য ব্যক্তিরা বক্তব্য রাখেন।

বক্তারা বলেন, “শরিফ হোসেন ছোটবেলায় যেমন নম্র ও ভদ্র ছিল তেমনি পড়ালেখায়ও মেধাবী ছিল। সে তাঁতের কাজ করে পড়াশোনা করেছে। বাবাও তাঁত শ্রমিক, মা চড়কায় সুতা কাটতো। দরিদ্র একটি পরিবারের সন্তান। তার অকাল মৃত্যুতে পরিবারের সবাই দিশেহারা। সেনাপ্রধান ও প্রধানমন্ত্রী যেন শরিফের ছোট ভাই কিংবা বোনকে যোগ্যতা অনুযায়ী একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। তাহলে বাকি সময় তার পরিবার কিছুটা হলেও দুঃখ লাগব হবে।

মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সময় পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে নিহত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনী সদস্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক শরিফ। তিনি তিন-ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়। বেলকুচির আলহাজ সিদ্দিক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করার পর ২০১৭ সালে বাংলাদেশ  সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগদান করেন। এরপর গত বছর ডিসেম্বর জাতিসংঘে মিশনে যান।