• ঢাকা
  • সোমবার, ১৯ মে, ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২০ জ্বিলকদ ১৪৪৬

‘সুস্থ’ ছাত্রলীগ নেতাকে প্রতিবন্ধী ভাতা


লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২১, ০৫:৫৮ পিএম
‘সুস্থ’ ছাত্রলীগ নেতাকে প্রতিবন্ধী ভাতা

লালমনিরহাটে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী প্রকল্পের অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা তুলেছেন মাইদুল ইসলাম বাবু নামের এক সুস্থ ছাত্রলীগ নেতা। প্রতিবন্ধী কার্ড করে ছাত্রলীগ নেতা মাইদুল প্রতিবন্ধী কোটায় সরকারি চাকরি নেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। তিনি জেলার আদিতমারী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি জাতীয় দৈনিকের শেষ পৃষ্ঠায়  “চেয়ারম্যান-মেম্বারদের পেটে যাচ্ছে গরিবের ভাতা” এবং গত ১৬ সেপ্টেম্বর “মোবাইল নম্বর পাল্টে ভাতার টাকা আত্মসাৎ” শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে বেরিয়ে আসে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য।

জানা গেছে, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয়ে কর্মরত অসাধু লোকজনের সহায়তায় ছাত্রলীগ নেতা মাইদুল ইসলাম বাবুর নামে একটি অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা বই ইস্যু হয়। বই নম্বর ৭৯৬। সোনালী ব্যাংক আদিতমারী শাখায় তার সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর ৫২০১৯০১০১৯৬০৯। ওই বইয়ের বিপরীতে মাইদুল দুই দফায় সর্বমোট ১১ হাজার ২৫০ টাকা উত্তোলন করেছেন।

সোনালী ব্যাংক আদিতমারী শাখা সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর সেখানে ৯ হাজার টাকা অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা হিসেবে জমা হয়। এই টাকা মাইদুল ওই বছর ২০ অক্টোবর উত্তোলন করেন। এরপর দ্বিতীয় দফায় গত ১৫ মার্চ আরও ২ হাজার ২৫০ টাকা জমা হয়। আর এই টাকা তিনি গত ২৩ মার্চ উত্তোলন করেন।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, ওই উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের বসিনটারী গ্রামের নজরুল ইসলামের তিন ছেলের মধ্যে মেজ মাইদুল ইসলাম বাবু। তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে ২০১৬ সালে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর করেন। ২০১৯ সালে বিয়ে করেন এবং বর্তমানে তিনি এক কন্যাসন্তানের জনক। রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসায় যুক্ত মাইদুল গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নিয়ে হেরে যান। মাইদুল ২০১৫-১৭ মেয়াদে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। ওই কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও নতুন করে আর কমিটি না হওয়া তিনি এখনো ওই পদে বহাল আছেন। তবে এ ছাত্রলীগ নেতা সম্পূর্ণ সুস্থ-সবল মানুষ। চালান দামি মোটরসাইকেল। তবু তিনি অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে সরকারি ভাতা তুলেছেন।

ছাত্রলীগ নেতা মাইদুল ইসলাম বাবু বলেন, “২০১৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত হন। হামলায় ডান হাতের একটা আঙুল বিকলাঙ্গ হয়। তখন চিকিৎসকের প্রত্যয়ন নিয়ে প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ জরিপ ফরম ২০১৮ পূরণ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেন।”

রাজনীতি বাদ দিয়ে প্রতিবন্ধী কোটায় সরকারি চাকরি নেওয়ার কথাও ভাবেন তিনি। পরে তার নামে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা হয় এবং সরকারি টাকা গ্রহণ করেন।

আপনি প্রতিবন্ধী কি না, জবাবে মাইদুল বলেন, “আমি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।”

মাইদুল ইসলাম বাবু আরও বলেন, “এটা করা ঠিক হয়নি, টাকাটা ফেরত দিতে চাই।”

এদিকে প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ জরিপ ২০১৮’ এ দেখা যায়, মাইদুল দুর্ঘটনাজনিত শারীরিক মৃদু প্রতিবন্ধী বলে ফরমে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে চিকিৎসকের প্রত্যয়নে মাইদুল মাঝারি মাত্রার শারীরিক প্রতিবন্ধী বলে উল্লেখ করেছেন চিকিৎসক। প্রত্যয়নটি করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) নূর আরেফিন প্রধান।

প্রত্যয়নটি তার স্বাক্ষরের স্থানে ২০২০ সালের ২৩ জুন তারিখ উল্লেখ রয়েছে। একই তারিখে প্রতিবন্ধিতাসংক্রান্ত সরকারি ফরমে স্বাক্ষর করেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রওশন আলী মণ্ডল।

রওশন আলী মণ্ডল বলেন, “মাইদুল ইসলাম বাবু এখন আর প্রতিবন্ধী ভাতা তুলছেন না। এখন ভাতার টাকা বিকাশে দেওয়া হচ্ছে। মাইদুল ইসলাম অনলাইনে নিবন্ধন করেননি। আদিতমারীর ভাদাই ইউনিয়নে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাপ্রাপ্ত ৯৯০ জনের মধ্যে মাইদুল ইসলাম বাবুসহ মোট ৬ জন অনলাইনে নিবন্ধন করেননি। তাদের সবার ভাতার বই বর্তমানে ফাঁকা আছে।

ছাত্রলীগ নেতাকে কার্ড করে দেওয়ার বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বলেন, “সে সময় মাত্র ১৯ দিন আগে আমি এই উপজেলায় যোগদান করি। সময় না থাকায় আমি দ্রুত স্বাক্ষর করি।”
 
ছাত্রলীগ নেতাকে প্রতিবন্ধীর প্রত্যায়ন দেওয়া চিকিৎসক নূর আরেফিন প্রধান আদিতমারী থেকে বদলি হওয়ায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। এ ব্যাপারে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কামাল হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

Link copied!