করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কঠিনভাবে আঘাত করেছে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের উপর। অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত এই শিল্প। সৈকত ও বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে বিধি-নিষেধের কারণে পর্যটকের আসা-যাওয়া না থাকায় দিনের পর দিন খালি পড়ে আছে প্রায় সাড়ে চার শতাধিক হোটেল-মোটেল।
গত ৫ এপ্রিল থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও বিনোদনকেন্দ্রগুলো বন্ধ রয়েছে। মাত্র গত সপ্তাহে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল-মোটেলগুলো খুলতে প্রশাসনের অনুমতি পেয়েছিল। ঠিক কয়েকদিন পরেই ১ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউনের কবলে আবারও কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প। যার ফলে এই শিল্পে লোকসান হয়েছে সাড়ে তিনশত কোটি টাকারও বেশি। অনেকেরই মতে এই সংখ্যা আরো বেশি হবে। বর্তমানে করোনায় আক্রান্তের হার উর্ধ্বগতির কারণে ব্যাপক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। অন্যদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো সংক্রমণ বৃদ্ধি, অন্যদিকে স্থানীয়দের মধ্যেও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন।
এমন অবস্থায় গোটা পর্যটন শহর কক্সবাজার স্থবির হয়ে আছে। বন্ধ রয়েছে কক্সবাজারের সাড়ে চার শতাধিক হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস। তিন শতাধিক রেস্টুরেন্ট, বিপণিবিতান, সৈকত সংলগ্ন শপিং মল, সৈকতের কিটকট, ট্যুর অপারেটরদের কার্যক্রম, বিচ বাইকসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা বন্ধ থাকলেও যন্ত্রপাতি ঠিকিয়ে রাখতে স্বল্প সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশপাশি বিদ্যুৎ চালু রাখতে হচ্ছে। এতে দিনদিন লোকসানের পরিমাণ বাড়লেও করোনাভাইরাসের কারণে কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না এ শিল্পের উদ্যোক্তারা।
জানাতে চাইলে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ বলেন, “করোনার কারণে পুরো পর্যটন শিল্পে ঘোর আঁধার নেমে এসেছে। দফায় দফায় লকডাউনের কারণে পর্যটন শিল্প ধরে রাখাটাই এখন আতঙ্ক। করোনার দ্বিতীয় ঢেউতে পর্যটন বন্ধ থাকায় কক্সবাজারের সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউসগুলোতে কর্মকর্তাসহ এক লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। এরা সবাই প্রশিক্ষিত এ পর্যটন শিল্পের জন্য। এদের পরিবার রয়েছে পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করত পর্যটন শিল্পের আয় থেকে যার কারণে অনেকই পরিবারে অর্ধাহারে অনাহারে রয়েছে। সার্বিক বিষয়ের পাশাপাশি এটাও ভাবা উচিত বলে মনে করেন তিনি। তার মতে স্বাস্থবিধি মেনে পর্যটন খোলা যেতে পারে।”
জানতে চাইলে কক্সবাজার কলাতলী মেরিনড্রাইভ রোড হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুখিম খান বলেন, “প্রতিদিনের হিসেবে কক্সবাজার পর্যটন শিল্পে পাঁচ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়। কক্সবাজার পর্যটন এতে বেকার হয়ে পড়ছে অন্তত অর্ধলাখ মানুষ। করোনা অস্বাভাবিক থাকলে লোকসানের মাত্রা আরও ভয়াবহ হবে। পর্যটন সংশ্লিষ্ট অনেকই এই পেশা থেকে চলে যাবে, যাদেরকে ফিরিয়ে আনা বা বিকল্প সৃষ্টি করা কষ্টসাধ্য বিষয়।”
কক্সবাজার বিচ কিটকট মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, “দীর্ঘ প্রায় আড়াই মাস কক্সবাজার পর্যটন শিল্প বন্ধ সেই সঙ্গে সমুদ্র সৈকত পর্যটক একেবারেই নেই। সবখানে শূন্যতা বিরাজ করছে। এই শূন্যতা পর্যটন ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট সকলের মনে বিরাজমনা। যার ফলে মালিক কর্মচারী ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী সকলে মানবেতন জীবন যাপন করছে। দীর্ঘ দুইমাস সৈকতে কোনো ধরণের মানুষ প্রবেশ করতে দেয়নি প্রশাসন। কাজেই কিটকট ব্যবসায়ীরা ভালো থাকার কথা না। সৈকতে কিটকট মালিক-কর্মচারীসহ এক হাজার মানুষ এই দুই মাস ধরে বেকার। তাদের কোনো প্রকার আয় রোজগার নেই। ইতিমধ্যে অনেকেই অর্থসংকটে পড়েছেন। ফলে আমরা সবাই বেকার-অসহায় হয়ে পড়েছি।”
ট্যুয়াকের সভাপতি তোফায়েল আহমদ বলেন, “করোনার কারণে কক্সবাজার পর্যটন শিল্পের যে লোকসান হয়েছে তা সারা বিশ্বের মতো এখানে হয়েছে। তবে এই লোকসানের বোঝা বহন করা দীর্ঘদিন সম্ভব নয়। অন্তত কঠোর লকডাউনের পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেওয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করেন।”
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আমিন আল পারভেজ বলেন, “সারা দেশে করোনার কঠিন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। চলছে কঠোর লকডাউন। পর্যটন শিল্পের ক্ষতির বিষয়ে অবগত সরকার। তবে আগে জীবন পরে জীবিকা। করোনা পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে খুলে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটনের হোটেল মোটেল খুলে দেওয়া হয়েছিল। করোনা পরিস্থিতি উর্ধ্বগতির কারণে আবারো বাধ্য হয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আশাবাদী কিছুদিনের মধ্যে সবকিছু স্বাভাবিক হবে সংক্রমণ কমে আসবে।পর্যটন শিল্পও স্বাভাবিক হবে।”