• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
কাতার বিশ্বকাপ

হাজারের পথে প্রথমের দেখা!


সৌরভ কুমার দাস
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৪, ২০২২, ০৪:১৩ এএম
হাজারের পথে প্রথমের দেখা!
ছবিঃ গেটি ইমেজস

নকআউটে ম্যাচে গোল নেই, বড় ম্যাচে তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। নিন্দুকদের এরকম কতশত অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। অথচ রোজারিওতে জন্ম নেওয়া লিওনেল আন্দ্রেস মেসি নামের এই ভদ্রলোকটাই তার দলের বিপদের দিনে সবার আগে এগিয়ে আসেন। ফিনিক্স পাখির মতো দলকে ছাইভষ্ম থেকে টেনে তোলেন।

এই আজকের কথাই ধরুন না। নিজের পেশাদার ক্যারিয়ারে হাজারতম ম্যাচ খেলতে নেমেছেন। অন্যদিকে অধিনায়ক হিসেবে আর্জেন্টিনার জার্সিতে শততম। এরকম একটা বিশেষ দিনে মেসির কাছ থেকে একটা গোল তো সবার প্রত্যাশাই ছিল। নাহ, শুধু গোল নয়, চোখে লেগে থাকার মতো গোল।

আচ্ছা, এখানে সবার কেন বললাম? আপনার কি মনে আছে, কোনো এক বিখ্যাত কোচ একবার বলেছিলেন, মেসি হচ্ছে পর্ণ ভিডিও! যেটা আপনি ঠিকই দেখেন কিন্তু স্বীকার করেন না। লিওনেল মেসিকে যারা ঘৃণা করেন তারাও একই!  তাকে, তার গোল উপভোগ করেন, কিন্তু স্বীকার করেন না!

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ ষোলোর ম্যাচ। এমনিতে প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষে হারের পর টানা দুই ম্যাচ জিতে নকআউট পর্বে আসতে হয়েছে৷ সে সময়টাতে বেশ ভালো মানসিক ধকলও গেছে।

এরপর আবার ম্যাচের আগে অস্ট্রেলিয়ান কোচের হুঙ্কার! সেই সঙ্গে প্রতিবারের মতো এবারও গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে চোটে পড়ে বাইরে অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া।

এত কিছুর পর ম্যাচের শুরুটাও খুব একটা বেশি ভালো হলো না। বল দখলে রেখে আক্রমণে গেলেও বোঝাপড়ার অভাবটা টের পাওয়া যাচ্ছিল বেশ ভালোভাবেই।

কিছু একটা মিল পাচ্ছেন? মেক্সিকোর বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচের মতো? পুরোপুরি না হলেও প্রায় একই হয়তো! তখনও মেসি যাদুতেই দল জেগে উঠেছিল। এবারও তাই!

ম্যাচের তখন ৩২তম মিনিট। প্রথমে বাঁ পাশ থেকে একটা ফ্রি কিক মেরেছেন, সেটা অস্ট্রেলিয়ার রক্ষণে প্রতিহত হলেও বল পড়েছে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের পায়েই।

সেখান থেকে যখন বলটা মেসির পায়ে এলা, তখন তার সামনে অন্তত ৫ জন অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড় দাঁড়ানো। এ সময়ে আপনি হলে কী করতেন? বা অন্য কোনো খেলোয়াড় হলে কী করতো?

উত্তরটা কঠিন! তবে স্বাভাবিকভাবেই শট না নিয়ে অন্য অ্যাঙ্গেলে সতীর্থকে পাস দিতেন বলেই ধারণা করি। তবে মেসি যদি অন্যদের মতো সেটাই করবেন, তাহলে তিনি কেন মেসি হলেন!

নাহ, মেসি সেটা করেননি। তিনি ওই জায়াগা থেকেই শট নিয়েছেন এবং ওই পাঁচ ডিফেন্ডারের কারো গায়েই বল স্পর্শ করেনি। ৫৩ কিলোমিটার বেগে যাওয়া বলটি যে তখনই আসবে অস্ট্রেলিয়ান গোলরক্ষক সেটা হয়তো স্বপ্নেও ভাবেননি!

তবে গোলরক্ষকরা যেটা ভাববেন না সেটা করবেন বলেই তো তাকে ফুটবল যাদুকর বলা হয়। মেসির নেওয়া শট খুব বেশি দূর দিয়ে যায়নি। তবে যতটুকু দূর দিয়ে গেছে সেটাই একজন গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে জালে ঢুকে যেতে যথেষ্ট!

এটা অবশ্য শুনলে একটু বিষ্ময় প্রকাশ করতে পারেন, কিন্তু এটাই বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে মেসির প্রথম গোল। তবে গোল না করেও যে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হওয়া যায়, সব আলো নিজের দিকে নেওয়া যায় এটা তো মেসি কতবারই দেখিয়েছেন।

শেষদিকে বেশ কয়েকবার বল নিয়ে যে দৌড় দিয়েছেন, প্রতিপক্ষ ভড়কে গেছে স্বাভাবিকভাবেই!  একপর্যায়ে তো ধারাভাষ্যকক্ষ থেকে ভেসে আসলো, ‘এ যেন ২৫ বছরের মেসি।’ অথচ তার বয়স ৩৫, পাক্কা ১০ বছর বেশি! এজন্যই বয়স কোনো সমস্যা না, সেটা মুখে নয় মাঠে প্রমাণ করতে হয়। আর সেটা করতেই বরাবরই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এই পাঁচ ফুট ৭ ইঞ্চির ফুটবল যাদুকর।  

তবে এবার শুধু আলো নয়, গোলটাও যে বড্ড দরকার! আগেই বলেছেন, অধরা বিশ্বকাপ জিততে এটাই শেষ চেষ্টা। তবে সেই চেষ্টাটা এবার আর চেষ্টাতে আটকে না থাকুক, হয়ে উঠুক সাফল্যে।

Link copied!