প্রথমে দুই গোল করে এগিয়ে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। খেলা শেষ হওয়ার কয়েক মিনিট আগে এক গোল শোধ করে নেদারল্যান্ডস। তখনও আর্জেন্টিনার জয়কে সবচেয়ে সম্ভাব্য ফল মনে হচ্ছিল। নির্ধারিত সময় শেষে অতিরিক্ত সময়ও শেষ। তখনও আর্জেন্টিনার ডি বক্সের সামনে ফ্রি কি পায় ডাচরা। ফ্রি কিক মারলেই শেষ বাঁশি বেজে উঠবে। গ্যালারিতে জয় উদযাপন শুরু করে দিয়েছেন আর্জেন্টাইন সমর্থকরা।
ঠিক ওই সময়ে অবিশ্বাস্যভাবে গোল করে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন করে নেদারল্যান্ডস। এরপর অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে কোনো আর গোল করতে পারেনি কোনো দল। ফলে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে প্রথম দুই শট ঠেকিয়ে আর্জেন্টিনাকে শুরুতেই এগিয়ে দেন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। শেষ পর্যন্ত ৪-৩ ব্যবধানে ডাচদের হারিয়ে শেষ চারে উঠে গেল আর্জেন্টিনা।
শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১টায় সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। ম্যাচের শুরু থেকে দুই দল আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে ম্যাচ জমিয়ে তোলে। কিন্তু ফিনিশিং ব্যর্থতায় কেউই গোলের দেখা পাচ্ছিল না।

ম্যাচের ৩৩তম মিনিটে প্রথম গোলপোস্টে অন টার্গেট শট নেয় আর্জেন্টিনা। বক্সের বাইরে প্রতিপক্ষের জন্য ভয়ঙ্কর জায়গা থেকে রদ্রিগো ডি পল শট নিলেও গতি কম থাকায় সহজেই গ্লাভসবন্দী করেন ডাচ গোলরক্ষক। এর মাত্র দুই মিনিটের ব্যবধানে প্রথম গোলের দেখা পায় আর্জেন্টিনা। ম্যাচেড় ৩৪তম মিনিটে মেসির অবিশ্বাস্য নিখুঁত পাস ডাচদের রক্ষণ জমাট এড়িয়ে চলে যায় সতীর্থ মলিনোর কাছে। প্রথম ছোয়ায় ভেতরে টেনে আগোয়ান ডাচ গোলরক্ষকের পাশ দিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন মলিনো।
দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণে আধিপাত্য বজায় রেখেছিল আর্জেন্টিনা। তবে এবারও ফিনিশিং ব্যর্থতায় গোল আসছিল না। ম্যাচের ৭২তম মিনিটে বা পাশ দিয়ে ঢোকার সময় নিজেদের বক্সে আর্জেন্টাই ফুটবলার মার্কোস আকুনেকে ফাউল করেন ডাচ ডিফেন্ডার ড্যামফ্রিস।
সাথে সাথে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। ৭৩তম মিনিটে ডাচ গোলরক্ষককে স্রেফ দর্শক বানিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন মেসি। আর্জেন্টিনা এগিয়ে যায় ২-০ গোলের ব্যবধানে।
এই গোলেই আর্জেন্টিনার জার্সিতে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার ১০ গোলের রেকর্ড স্পর্শ করেন মেসি।

ম্যাচের ৮৩তম মিনিটে ব্যবধান কমান ডাচ ফুটবলার ভেহর্স্ট। স্টিভেন বেহাসের বা পাশ থেকে বাড়ানো ক্রসে দুর্দান্ত হেডে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি।
গোল পেয়েই যেন জেগে ওঠে ডাচ শিবির। একের পর এক আক্রমণে আর্জেন্টিনার রক্ষণ কাপিয়ে দেয় বেশ কয়েকবার। তবুও গোল আসছিল না, আর্জেন্টিনার জয় তখন প্রায় নিশ্চিত।
নির্ধারিত সময় শেষে, অতিরিক্ত ১০ মিনিটও প্রায় শেষ। কয়েক সেকেন্ড বাকি থাকতে ভেহর্স্টককে নিজেদের ডি বক্সের সামনে ফাউল করেন আর্জেন্টাইন ফুটবলার হেরমান।
ফ্রি কিক পেয়ে একেবারে শেষ মুহুর্তে দারূন বুদ্ধিদীপ্ত কৌশলে পুরো আর্জেন্টিনা দলকে বোকা বানিয়ে ডাচদের সমতায় ফেরান ভেহর্টস। এরপর খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

৩০ মিনিটের অতিরিক্ত সময়েও আধিপাত্য দেখিয়েছে আর্জেন্টিনা। ঘর সামলে বেশ কয়েকবার আক্রমণে এসেছে নেদারল্যান্ডসও। তবে কোনো দলই আর গোলের দেখা পায়নি।
ফলে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে ডাচ অধিনায়ক ভ্যান ভাইকের প্রথম শট ঠেকিয়ে আর্জেন্টিনাকে দুর্দান্ত শুরু এনে দেন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। নিজেদের প্রথম শটে আরও একবার ডাচ গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে গোল দেন মেসি।
এরপর দ্বিতীয় শটও অবিশ্বাস্য দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। এরপর তৃতীয় শটে দুই দল গোল করলেও চতুর্থ শট মিস করেন আর্জেন্টাইন এঞ্জো ফার্নান্দেজ। তবে পঞ্চম শটে দুই দলই গোল করলে এক শট বাকি থাকতেই জয় নিশ্চিত হয় আর্জেন্টিনার।