রণজিৎ গুহ দক্ষিণ এশিয়ার আধুনিক ইতিহাসের রচনার ধারা পরিবর্তন করে দিয়েছেন বললে অত্যুক্তি হয় না। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বাংলার কৃষি অর্থনীতির, শ্রেণি বিন্যাসের এবং এমন কি বাংলা ভাগের পূর্বেকার সমাজের মধ্যে হিন্দু জমিদার এবং মুসলমান কৃষকদের মধ্যে পূর্ববাংলায় মেরুকরণ সবের পিছনে হলো চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত। কিন্তু চিরস্থায়ীর নীতির পিছনে বৌদ্ধিক সূত্র কী? কীভাবে ব্যক্তি সম্পত্তির ধারণার পরিবর্তন হলো? পশ্চিম ইউরোপের সমাজের মধ্যে সম্পত্তির ধারণা কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে mercantilism থেকে ফিজিওক্রেটদের মধ্যে দিয়ে। উদার অর্থনীতির ধারণা কীভাবে সম্পত্তি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারণার সঙ্গে যুক্ত তার একটি ছবি আঁকলেন বইটিতে। রণজিৎ গুহর পূর্বে এরিক স্টোকস ইংরেজ উটিলিটারিয়ানদের ভারতের উপনিবেশ পরিচালনার সঙ্গে কীভাবে যুক্ত তার একটি বৌদ্ধিক ইতিহাস লিখেছিলেন। রণজিৎ গুহ তারপরে ১৯৬৩ সালে রুল অফ প্রপার্টি অফ বেঙ্গল লিখেছিলেন। কিন্তু তার মধ্যেই ছিল ইতিহাসের রচনার নতুন দিগন্ত।
কৃষক চৈতন্য কী? কৃষকদের বিদ্রোহের মধ্যে কৃষকদের চৈতন্য কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে? কৃষক চৈতন্যের রূপরেখা কীভাবে কৃষকদের প্রতিদিনকার অভিজ্ঞতা থেকে সঞ্জাত? তার নিজস্ব রাজনীতি কি আছে? তার সীমাবদ্ধতা কী? রণজিৎ গুহ সেখানে আবার প্রথা ভাঙলেন। মার্ক্সবাদীদের সঙ্গে বিতর্ক করলেন, হবসবাউমের মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক কাঠামোর ধারণা কৃষক আন্দোলন প্রাক্রাজনৈতিকতাকে আক্রমণ করলেন এবং কৃষক চৈতন্যের নিজস্ব কাঠামো কৃষক বিদ্রোহের বিশ্লেষণের মধ্যে দিয়ে তৈরি করলেন। তার আগেই শুরু করেছিলেন নিম্নবর্গের ইতিহাস রচনার ধারা। প্রায় ছয়টি খণ্ডে নিম্নবর্গের ইতিহাস সম্পাদনা করলেন। বিতর্কিত, তার্কিক প্রথা ভাঙার ঐতিহাসিক রণজিৎ গুহ। প্রায় এক শতাব্দী জুড়ে তাঁর কর্মকাণ্ডের ছায়া রেখে গেছেন। ইতিহাসের রচনার মধ্যে নতুনত্বের সৃজনী শক্তির জন্য তিনি তাঁর স্বাক্ষর রেখে গেলেন দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস রচনায়।