বার্লিন প্রাচীর ভেঙে পড়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের অস্তিত্ব নেই হয়ে গেছে। এসব কিছু ঘটেছে গত শতাব্দীতে। এবং সেটা তিন দশক আগে। তারপর গোটা সাতেক বিশ্বকাপ হয়েছে। কিন্তু ‘দেবদূত ’দের হাতে কেউ আর বিশ্বকাপ দেখেনি! ইতিহাসের পাতা ওল্টালে দেখা যায় `ঈশ্বরের হাত` আর দিকভ্রষ্ট এক ফুটবল রাজপুত্রের বাঁ পায়ের জাদুতে শেষবার বিশ্বকাপ উচিয়ে ধরতে পেরেছিলেন দেবদূতরা। সেও গেলো শতাব্দীর আশির দশকের মাঝামাঝি। তারপর গত তিনি যুগে তাদের ফুটবল শিল্পের প্রতিশব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্বকাপের অপেক্ষা!
এই অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে কি এবার? হচ্ছে,হবে! নিষ্পাপ এক দেবদূতের বাঁ পায়ের ট্যাংগো নাচে কাপ আর্জেন্টাইনদের হাতে! এভাবে স্বপ্নের জাল বোনা সেও নয় নয় করে ১৬ বছর ধরে! মাঝে চারটে বিশ্বকাপ চলে গেলো। খুদে জাদুকরের চোখের জল গড়িয়ে পড়লো আমাজন পাড়ে। নিঃশব্দ হাহাকার ফুটবল বিশ্বের বড় একটা অংশ জুড়ে। ব্রাজিলের মাটিতে ফাইনালে জার্মানির কাছে হারের দুঃখে, হতাশায় আর জাতীয় দলের জার্সি পরবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন লিওনেল মেসি।
কিন্তু না। আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ জিততে না পারার হাতাশা নিয়ে বাকি জীবন কাটাতে চান না বলে সেই ঘোষণা থেকে সরে আসেন এল এম টেন। ম্যারাডোনার জার্সির ভার বয়ে বেড়াচ্ছেন লম্বা সময় ধরে মেসি। ম্যারাডোনা এখন স্বর্গবাসী। মেসিও খেলতে নামছেন তার শেষ বিশ্বকাপ। কাতারেই কি হতে যাচ্ছে মেসির স্বপ্নপূরণ! ভুল! মেসির স্বপ্নপূরণ মানে ফুটবল পাগল আর্জেন্টিনা সমর্থকদের অপেক্ষার অবসান।
কাতার বিশ্বকাপে মাঠে নামার আগেই সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন হিসেবে উপরের দিকে রাখা হচ্ছে মেসির দেশকে। দারুণ ফর্মে গোটা দল। দারুণ ফুটবলও খেলছে তারা।টানা ছত্রিশ ম্যাচে অপরাজিত। এদিকে বিজ্ঞান আর জ্যোতিষশাস্ত্রের ভবিষ্যদ্বাণী পারস্য সাগর পারে মিলছে এক মোহনায়। বলা হচ্ছে মেসির হাতেই উঠতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ! ১৮ ডিসেম্বর কাপ হাতে নিয়েই কী আর্জেন্টিনার জার্সি খুলে রাখবেন মেসি? ফুটবল বিশ্বে শুরু হয়ে গেছে সেই চর্চা।
মেসির হাতে বিশ্বকাপের সম্ভাবনা দেখছেন ব্রাজিলিয়ান জ্যোতিষি অ্যাথোস সালেমি। যার অনেক ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি প্রমাণিত হওয়ায় তারকা বনে গেছেন তিনি। ব্রিটেনের রানীর মৃত্যু নিয়ে করা তার ভবিষ্যতবানী সত্যি হওয়ায় তার কথাকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না সমর্থকরা।তবে তিনি বলেছেন মধ্যে ইউরোপের একটা দেশ আর ট্যাংগোর দেশ ফাইনাল খেলবে! ট্যাংগো নাচটাই নাকি হবে কাতার বিশ্বকাপের সেরা মূহুর্ত! তাহলে মেসি ছাড়া আর কার হাতেই বা কাপ উঠছে!
অন্যদিকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাও বলছে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। জ্যোতিষীর বাণী।গনিত নির্ভর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা যা বলে বলুক।ফুটবল পন্ডিতরা বলছেন এবারের আর্জেন্টিনা তাদের খেলার ধরণও পাল্টে ফেলেছে।পজেশনাল ফুটবল নয়, প্রতিআক্রমণ নির্ভর ফুটবল হবে তাদের জয়ের মন্ত্র।বল পায়ে রাখা নয়,প্রতিপক্ষের পা থেকে দ্রুত বল কেড়ে গোল করা হবে তাদের লক্ষ্য।দেখনদারী ফুটবলের চেয়ে কার্যকরী ফুটবল খেলতে চায় আর্জেন্টিনা । সেই রসায়ন কতোটা কি সফল হবে তার আভাস মিলতে পারে সৌদি আরবের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে।
তবে সেরা দল নিয়ে বিশ্বকাপ জেতা যায় না। তার সেরা উদাহরণ বিরাশির ব্রাজিল। জিকো,সক্রেটিস কী সব ফুটবলার নিয়ে স্পেনে গিয়েছিল ব্রাজিল। কিন্তু কাপ জিততে পারেনি সেই দল।আর্জেন্টিনাও পঞ্চাশ আর ষাটের দশকে কত ভালো দল নিয়ে বিশ্বকাপ খেলেছে। কিন্তু জিতলো কোথায়? অসাধারণ ফুটবলশৈলী যাদের দেবদূত করে তুলেছিল, যাদের বলা হতো `অ্যানজেল উইথ ডার্টি ফেসেস` সেই আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিততে পারেনি!
মেসি পারবেন কি? নাকি তিনিও আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসে অ্যানজেল উইথ ডার্টি ফেসের নয়া সংস্করণ হয়ে থাকবেন!
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট