লাগামহীন নিত্যপণ্যের দামে রীতিমতো নাভিশ্বাস নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের। প্রতিদিনই বেড়েই চলেছে নিত্যপণ্যের দাম। দাম নিয়ন্ত্রণে তিনটি পণ্যর Iপর দাম বেঁধে দিয়েছিল সরকার। বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী এখন থেকে প্রতিটি ফার্মের ডিম ১২ টাকা, আলু খুচরা পর্যায়ে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজের দাম হবে ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা। বাজারভেদে সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি হলেও আলু-পেঁয়াজ এখনো আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে।
শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। বাজারগুলোতে সরকার দাম বেঁধে দেওয়ার আগে যেমন প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৮৫-৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, এখনো সেই দামেই বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে আলুর দাম ৪৫-৫০ টাকার নিচে নেই। এ ছাড়া মুরগির লাল ডিম প্রতিটি ১২ টাকা, হালি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, ডজন ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা, ফার্মের সাদা ডিম ১৪০ টাকা ডজন, হাঁসের ডিম ২০০ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে।
সরকার নির্ধারিত আলু বিক্রি নিয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী নাহিদ হোসেন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আলু বর্তমানে ৪২ থেকে ৪৫ টাকা পাইকারি দরেই কিনে আনতে হয়েছে। ৪৪-৪৫ টাকার নিচে কিনতে পারাই কঠিন। তাহলে সরকার নির্ধারিত ৩৫ টাকা করে বিক্রি করবো কী করে? আমরা যদি কমে কিনতে পারি, তাহলে অবশ্যই কমে বিক্রি করব।”
একই বাজারের পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসায়ী আবুল কালাম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমদানিকারকরা পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করেন। তারা দাম বাড়ালে সারা দেশে বেড়ে যায়। আর কমালে দাম কমে। তাই সেখানে অভিযান পরিচালনা করা দরকার।”
সারা দেশের কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির অজুহাত দেখিয়ে সব সবজিতে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ বাড়তি বিক্রি করতে দেখা যায়। বাজারে বেগুন, ফুলকপি, শসা, কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন সবজির দাম বেড়েছে। দুই দিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে বেগুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায়, ফুলকপি ৮০ টাকায়, গাজর ৭০ টাকায়, শসা ৬০ টাকায়, কাঁচা মরিচ ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাউ পিস ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছ বাজারের চিত্রও একই রকম। বাজার আকারভেদে রুই-কাতলা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি, তেলাপিয়ার ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, চাষের নলা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, পাঙাশ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, সিলভার কার্প ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা, চিংড়ি ছোট আকারের ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, মাঝারি আকারের চিংড়ি ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা, বড় আকারের চিংড়ি প্রায় ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ৮০০ গ্রামের ইলিশ ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা, পুঁটি ৮০০ টাকা, টেংরা ৫০০ টাকা, কই ২৬০ টাকা, পাবদা ৪৫০ টাকা, টাটকিনি ২২০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগির কেজিপ্রতি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩০০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩৮০ টাকা, কক মুরগি ৩০০ টাকা ও দেশি মুরগি ৬৫০ টাকা, গরুর মাংস ৮০০ টাকা ও খাসির মাংস ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কারওয়ান কাঁচাবাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী রিজভী আহম্মেদ। সংবাদ প্রকাশকে তিনি বলেন, সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। এটা সম্পূর্ণ কারসাজি। বাজার তো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বাজারে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজি নেই। বাজারে পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি, আর বেগুন ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে আসা কামরুল হাসান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “বাজারে সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। এসব দেখার যেন কেউ নেই। দাম বাড়ার কারণে অল্প অল্প করে কিনছি। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।”