আমদানি শুরু করার পর কিছুদিন পেঁয়াজের বাজারে স্বস্তি ছিল। কিন্তু বৃষ্টি-বন্যার অজুহাতে আবার বাড়তে শুরু করেছে দাম। দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। এখন বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। আর ভারতের আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। সেই সঙ্গে বন্যার অজুহাতে সব ধরনের সবজি ও মাছের দামও বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি রুই ও তেলাপিয়া মাছের দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৮০ টাকা।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। মাছ ও সবজির মতই দাম বেড়েছে ব্রয়লার মুরগী ও ডিমে। প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা। সঙ্গে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগীর কেজিতে দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। প্রতি কেজি সোনালি মুরগী বিক্রি হচ্ছে ২৯০ থেকে ৩২০ টাকা। প্রতি ডজনে ১০ টাকা বেড়ে ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। হাসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ডজন ২১০ টাকায়।
কারওয়ান বাজার কাঁচাবাজারে প্রতিকেজি বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কচুর লতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কচুর মুখি ৮০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, ঢেড়স ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর (দেশি) ৮০ থেকে ৯০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধন্দুল-চিচিংগা ৫০ টাকা, আলু ৪০ টাকা কেজিতে। জালি ৪০ টাকা পিস, লাউ ৪০ থেকে ৬০ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।
কেজিতে ৫০ থেকে ৭০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে কাঁচা মরিচ। কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা মাছ বাজার ঘুরে দেখা যায়, টেংরা মাছ ৮০০ টাকা, পাবদা ৫৫০ টাকা, শিং ৫৫০, তেলাপিয়া ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি, রুই ৪০০ থেকে ৪৫০, মৃগেল ৩২০ টাকা কেজি, কই মাছ ২৫০ টাকা, পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকা কেজিতে। ভালো মানের চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। সরপুঁটি ২০০, সামুদ্রিক কোরাল ৪০০, রূপচাঁদা ৬০০, সিলভার কার্প ২০০, চাষের শিং ৩৫০-৪০০,বড় সাইজের বোয়াল ৬০০-৭০০ ও ছোট সাইজের বোয়াল ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, ইলিশের ভরা মৌসুমেও দাম চড়া। তবে গত সপ্তাহে দাম কমে ৫০০ গ্রাম ইলিশ ৯০০ টাকায় পাওয়া গেলেও আজ তা হাজার থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। জাটকা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজি দরে। অপরিবর্তিত রয়েছে গরুর মাংস, খাসির মাংসের দাম।
কারওয়ান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী মোকাম্মেল হোসেন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “সবধরনের মাছের দাম বাড়তি। আড়ত থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এ কারণে বেশি দামে বিক্রি করছি। চাহিদা কম থাকলে মাছের দাম কমবে।”
বাজারে মাছের দাম এত বাড়তি কেন এ বিষয়ে আরেক মাছ বিক্রেতা নাছির উদ্দিন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “প্রতিটি আড়ত ও পাইকারি বাজারেই মাছের দাম বাড়তি যাচ্ছে। আমাদের বেশি দামে কিনে আনতে হচ্ছে। যার কারণে বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। বন্যায় অনেক মাছের ঘের ভেসে যাওয়ায় বাজারে কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে।”
বাজারে মাছ কিনতে আসা আব্দুল কাদের সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “গরিবের মাছ পাঙাশ, তেলাপিয়া, চাষের কই, রুই মাছের দামও অনেক বেশি। আগে যা কিনেছি এখন একই মাছ বাড়তি দামে কিনতে হয়। পাঙাশ মাছও কিনতে হচ্ছে ২২০থেকে ২৪০ টাকায়। আগে এটাই কিনেছি ১৬০/১৮০ টাকা কেজিতে। আর এসব মাছের দামও যদি এতটা বেড়ে যায় তাহলে আমরা নিম্নআয়ের ক্রেতারা কীভাবে কিনব।”
বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আজাহার মোল্লা। তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বাড়তি। কোনো সবজির দাম জিজ্ঞেস করলেই অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে। এত দাম দিয়ে সবজি কেনা সম্ভব? গত সপ্তাহে তবু সবজির দাম কম ছিল, আজ বাজারে এসে দেখছি দাম বেড়ে গেছে। এক কেজির জায়গায় আধাকেজি কিনতে হচ্ছে আমাদের।”
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা সুজন কবির সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “সবজির বাজার ঠিক থাকে না। সকাল-বিকাল দাম ওঠা-নামা করে। বেশি দামে কিনলে আমরাও বেশি দামে বিক্রি করি। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলায় সবজির অনেক ক্ষতি হয়েছে। ফলে বাজারে চাহিদার তুলনায় সবজি আসছে কম।”
বেসরকারি চাকরিজীবী বিল্লাল হোসেন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “রুই মাছ কিনলাম ৪৫০ টাকা কেজি। সবজির বাজারেও একই অবস্থা। ৩০-৪০ টাকার মধ্যে কোনো সবজি নেই। এককথায় সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে।”