• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ব্যবসায়ীদের অজুহাতেই বাড়ে দাম


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২৩, ০৯:৫৬ পিএম
ব্যবসায়ীদের অজুহাতেই বাড়ে দাম

‘খেতে হলে, কিনতে হবে। আর কিনতে চাইলে, যেতে হবে বাজারে।’ খাদ্য চাহিদা পূরণে বাজার যেন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু এই বাজার নিয়েই যেন অভিযোগের শেষ নেই ক্রেতাদের। অভিযোগের তালিকায় প্রথমেই রয়েছে ‘নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও, বাড়ছে না আয়’। দ্বিতীয়ত, ‘লাগাম টানার লক্ষণ নেই ঊর্ধ্বগতির বাজারে’। এ ছাড়া অভিযোগের তির রয়েছে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের দিকেও। শুধু তা-ই নয়ম, অভিযোগের তালিকা ছেয়ে গেছে মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাসের ছাপে। আর সবশেষে ক্রেতারা বলছেন, ‘দেশের বাজারে অজুহাতেই দাম বাড়ে।’  

বাজার ঘুরে দেখা যায়, ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ১২৫ থেকে ১৮০ টাকা দরে। একইভাবে প্রকারভেদে চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা, ডাল ৯০ থেকে ১২৫ টাকা, মসলা ৭৫০ থেকে ৩৪০০ টাকা, মুরগি ১৮০ থেকে ৩৫০ টাকা, মাছ ১৯০ থেকে ২৫০০ টাকা, মাংস ৭৫০ থেকে ১০৫০ টাকা এবং ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি হালি ৪৮ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত।

ক্রেতাদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, পণ্যের সর্বনিম্ন বাজারমূল্য শুরু হয়েছে অর্ধশত ছাড়িয়ে। এমন পরিস্থিতি যেন ক্রেতাদের অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ করেছে। অপর দিকে ক্রেতার এমন অভিযোগে সহমত রয়েছে খুচরা বিক্রেতাদেরও। বিক্রেতারা বলছেন, দাম বাড়াতে বড় ব্যবসায়ীদের অজুহাতের যেন শেষ নেই।

বাসা থেকে নিয়ে আসা তালিকা ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব শ্যামল ভট্টাচার্য্য। তিনি বলেন, “বাজারটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। মানুষ বর্তমানে যে টাকা আয় করে। সেই অনুপাতে বাজার নিয়ন্ত্রণে নেই। আমি যে টাকা আয় করি, তা দিয়ে সম্পূর্ণ বাজার করতে পারি না। কারণ দাম বাড়লেও, বেতন আমার বাড়েনি। ফলে ১ কেজির জায়গায়, এখন ৫০০ গ্রাম কিনতে হচ্ছে।”  

মুরগি কিনতে আসা পিজুস কুমার মণ্ডল বলেন, “দেশের বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অনেকাংশই দুর্বল। একটা জিনিসের দাম বাড়লে তা আর কমে না। বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ার ফলে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের প্রভাব বেড়ে যায়। কয়েক দিন আগে মুরগি কিনছি ১৫০ টাকা কেজি। আজকে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা। দোকানদার বলেছেন ‘দাম আজকে ৩০ টাকা বেশি’। তা ছাড়া কারও কোনো জবাবদিহি নেই। যেন চাইলেই বাড়াতে পারছে। একটা যে নীতিমালা থাকবে, তা কিন্তু নেই। রমজানের অজুহাতে ছোলা বুটের দাম বাড়ে। হুজুগে লবণের দাম বাড়ে। একটার পর একটা বাড়ছেই।”

সুমন হাওলাদার নামের এক ব্যক্তি কারওয়ান বাজারে মসলা কিনতে এসেছেন। আলাপের একপর্যায়ে তিনি বলেন, “আমি গাড়ি চালাই। যে বেতন পাই এতে হয় না। প্রতিটি জিনিসের যে হারে দাম বাড়ছে। আমার মনে হয়, ব্যবসায়ীরা অজুহাত দিয়েই জিনিসপত্রের দাম বাড়ায়। যেমন ধরি চালের দাম বাড়ছে, তাহলে ডালের দাম বাড়বে না কেন? তখন চালের সঙ্গে ডালের দামও বাড়ে। এইভাবে একে একে সব জিনিসপত্রের দাম বাড়ে।”

‘নিত্যপণ্যের দাম কেন বাড়ে’ জানতে চাইলে খুচরা বিক্রেতা জসীম উদ্দীন বলেন, “এর কারণ বলতে পারবে বড় বড় ব্যবসায়ীরা। আমরা খুচরা বিক্রেতা। দুই টাকা লাভ হলেই বিক্রি করে দিই। তবে একটা কথা সত্য, যদি কোনো কোম্পানি তার পণ্যের দাম বাড়ায়। এই দাম বাড়ানো দেখে অন্য কোম্পানিও তার পণ্যের দাম বাড়ায়। চাল, ডাল, চিনির ক্ষেত্রেও একই রকম হয়। আমরা যখন মাল কিনতে যাই। তখন ব্যবসায়ীরা অজুহাত দিয়ে বলে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায়, ভাড়া বাড়ছে। তাই দাম বেশি।”

দুলাল মিয়া নামের আরেক খুচরা বিক্রেতা বলেন, “গত এক বছরে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। কিন্তু লক্ষ করলে দেখা যাবে, মানুষের বেতন বাড়েনি। আমরা যখন চাল কিনতে যাই। তখন আমরা শুনি, মোকামেই দাম বাড়ছে। আরও অনেক অজুহাত দেয়। দাম বৃদ্ধির ফলে আমাদের বিক্রিও কিছুটা কমেছে। এক কেজি কিনতে আসা ক্রেতা এখন হাফ কেজি (৫০০ গ্রাম) কেনে।” 

Link copied!