• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বঙ্গবন্ধু টানেলে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে টোল দিলেন প্রধানমন্ত্রী


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২৩, ০১:০৯ পিএম
বঙ্গবন্ধু টানেলে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে টোল দিলেন প্রধানমন্ত্রী
ছবি : সংগৃহীত

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে টোল দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে টানেলের টোল কালেকশন করেন ঝুমুর আক্তার।

শনিবার (২৮ অক্টোবর) দুপুর ১২টা ১ মিনিটে টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে পৌঁছে টোল দেন তিনি।

এ সময় ঝুমুর আক্তারের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধন ও টোল দেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর কর্ণফুলীর কেইপিজেড মাঠে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভার উদ্দেশে রওনা দেন।

টোল আদায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান ঝুমুর আক্তার। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “প্রধানমন্ত্রী টানেলের প্রথম টোল প্রদানকারী ব্যক্তি। তার কাছ থেকে টোল নিতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। বাংলাদেশ আজ নতুন গৌরবময় এক অধ্যায়ে পা রাখছে। এর মধ্য দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল।”

এর আগে শনিবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম তীরে একটি ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে টানেলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

শনিবার উদ্বোধন হলে টানেলটি রোববার (২৯ অক্টোবর) থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এদিন তিনি আনোয়ারা নদীর দক্ষিণ তীরে আরেকটি ফলক উন্মোচন করবেন। প্রধানমন্ত্রী এ উপলক্ষে একটি বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী দিনের খাম এবং প্রথম নদীর তলদেশে সড়ক টানেলের উদ্বোধন উপলক্ষে একটি বিশেষ সিলমোহরও অবমুক্ত করবেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের মাধ্যমে দেশের শিল্পায়ন, পর্যটন, অর্থনীতিসহ অন্যান্য খাতে নতুন মাত্রা যুক্ত হচ্ছে। টানেল চালু হওয়ার ফলে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে শূন্য দশমিক ১৬৬ শতাংশ। এ ছাড়া ফিন্যানশিয়াল এবং ইকোনমিক্যাল ‘বেনিফিট কস্ট রেশিও (বিসিআর)’-এর পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে ১ দশমিক শূন্য ৫ এবং ১ দশমিক ৫০।

এই টানেলের মাধ্যমে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ হিসেবে রূপ নেবে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলকে দেশের অর্থনীতির জন্য গেম চেঞ্জার হিসেবে মনে করা হচ্ছে। এ টানেল চালুর মাধ্যমে দেশের শিল্পায়ন, অর্থনীতি, পর্যটনসহ অন্যান্য খাতে নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে।

টানেলকে কেন্দ্র করে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড় আনোয়ারা উপজেলায় গড়ে উঠছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। নদীর অপর প্রান্তে শিল্পায়নের ফলে এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন হবে। পূর্ব প্রান্তে শিল্প-কারখানার কাঁচামাল ও প্রস্তুতকৃত পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর, বিমানবন্দর এবং দেশের উত্তর- পশ্চিমাঞ্চলে পরিবহন প্রক্রিয়া সহজ হবে। নদীর পূর্বাঞ্চলে নতুন করে গড়ে উঠবে জাহাজশিল্প, ইলেকট্রনিকস পণ্য, ফার্নেস ও সিমেন্ট শিল্পকারখানাসহ নানা প্রতিষ্ঠান। টানেলের মাধ্যমে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর ও মহেশখালীর আগামীর বাণিজ্যিক হাবের সঙ্গে যুক্ত হবে পুরো দেশ।

এ ছাড়া নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন এলএনজি টার্মিনাল, এলপিজি টার্মিনাল, অয়েল টার্মিনাল, গ্যাস ট্রান্সমিশন, অয়েল রিফাইনারি, এনার্জি ও ফুড স্টোরেজ, ট্যুরিজম, এমব্যাঙ্কমেন্ট ও ওয়াটারফ্রন্ট ইকোনমিক জোন। এসব মেগা প্রকল্পে বিভিন্ন এলাকা থেকে পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য প্রতিদিন চলাচল করবে শত শত গাড়ি। বঙ্গবন্ধু টানেলকে যাতায়াতের সহজ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এ টানেলে শুধু দেশের যোগাযোগব্যবস্থা নয়, দক্ষিণ এশিয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থাতেও প্রভাব ফেলবে।

এ টানেলের মাধ্যমে দেশ যুক্ত হবে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে। এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়- টানেল পুরোদমে চালু হলে প্রতিদিন গড়ে ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি চলাচল করবে। বছরে সে সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৬৩ লাখ। ২০২৫ সালে টানেল দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে। যার মধ্যে অর্ধেক থাকবে পণ্যবাহী যানবাহন।

২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন গড়ে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০৬৭ সাল নাগাদ ১ লাখ ৬২ হাজার যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে।

টোলের পরিমাণ  

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের ভেতর দিয়ে ১২ ধরনের যানের জন্য টোলের হার চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। তবে টানেলের ভেতর দিয়ে মোটরসাইকেল কিংবা তিন চাকার কোনো যান চলাচল করতে পারবে না।

গত জুলাই মাসে সেতু কর্তৃপক্ষের উপসচিব মো. আবুল হাসান স্বাক্ষরিত গেজেট অনুযায়ী পিকআপ, কার ও জিপকে দিতে হবে ২০০ টাকা। মাইক্রোবাসকে পরিশোধ করতে হবে ৩০০ টাকা, ৫ টন ট্রাক, ৩২ আসন কিংবা বেশি বাসগুলোকে পরিশোধ করতে হবে ৪০০ টাকা। বাস (৩ এক্সেল) ৫০০ টাকা। ৫ থেকে ৮ টনের ট্রাকের ৫০০ টাকা, ৮ থেকে ১১ টনের ট্রাক ৬০০ টাকা, ৩ এক্সেলের ট্রাক বা ট্রেইলার ৮০০ টাকা, ৪ এক্সেলের ট্রাক বা ট্রেইলার ১০০০ টাকা, ৪ এক্সেলের বেশি হলে প্রতি এক্সেলের জন্য বাড়তি ২০০ টাকা করে টোল দিতে হবে।

চীনের সাংহাইয়ের ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’র আদলে চট্টগ্রাম শহর ও আনোয়ারাকে এক সূত্রে যুক্ত করতে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দিয়ে টানেল তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৫ সালের নভেম্বরে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৬ সালে প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি টানেলের নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। বাংলাদেশ সরকার ও চায়নিজ এক্সিম ব্যাংক এ প্রকল্পে যৌথভাবে অর্থায়ন করেছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা।

Link copied!