দেশের বাজারে কিছুদিন আগে ১৬৫ সিসি ক্ষমতা সম্পন্ন মোটরসাইকেল ইঞ্জিনের অনুমোদন ছিল। অবশেষে সরকার ৩৫০ সিসির অনুমোদন দিয়েছে। এমন অনুমোদনের পর নিত্য নতুন মডেল আর ফিচার নিয়ে আসতে যাচ্ছে প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) যাওয়া হয় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে। এ সময় কথা হয় ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে। দেখা যায়, ক্রেতার জন্য বিষয়টি সুখবর হলেও, অনেকেই সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন। আর অনুমোদন নিয়ে দ্বিমত পোষণ করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সবকিছু ছাপিয়ে বিক্রেতাদের কথা একেবারে ভিন্ন।
ক্রেতার কাছে সংবাদ প্রকাশ জানতে চায়, ৩৫০ সিসি মোটরসাইকেল নিয়ে তাদের ভাবনা কী? এসব মোটরসাইকেল একজন চালকের জন্য নিরাপদ কতটুকু? অনুমোদনের পূর্ব কোন বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি ছিল? বর্তমান বাজারে মোটরসাইকেলের দাম কেমন?
এমন সব প্রশ্নের উত্তরে হুমায়ুন কবির নামের এক ক্রেতা বলেন, “২০১৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলাম। এতে একজন মোটরসাইকেল চালকের শরীরে কী হয়—তা খুব ভালো করেই জানি। বর্তমান ও আগামী দিনে উচ্চ ক্ষমতার যে নতুন মোটরসাইকেলগুলো বাজারে আসবে, তা ক্রেতার জন্য ভালো। কিন্তু রাস্তা প্রস্তুত কি না? সে বিষয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। মোটরসাইকেলের অনুমোদন দেওয়ার আগে রাস্তার দিকে প্রথমেই নজর দিতে হবে। এছাড়াও মোটরসাইকেলের ওপর যে শুল্ক, তার পরিমাণ কমিয়ে আনলে ভালো হয়। এতে দাম কমবে।”
রওনাকুল ইসলাম নামের আরেক ক্রেতা বলেন, “যানজট কাটিয়ে দ্রুত যেতে চাইলে মোটরসাইকেল খুবই জরুরি। মোটরসাইকেল কিনবো কিছুদিন পরেই। তাই দেখতে এসেছি। এখন যে মোটরসাইকেলগুলো আছে সবই ভালো। যত দিন যাবে, আরও ফিচার, মডেল ও উচ্চ ক্ষমতার ইঞ্জিন আসবে। এতে দ্রুত গন্তব্যে যাওয়ার সুবিধা পাওয়া যাবে। দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সঙ্গে মোটরসাইকেলের দাম বাড়ছে। মানুষের যেহেতু জনপ্রিয়তা রয়েছে। তাই দামের দিকে নজর দেওয়া জরুরি।”
বিক্রেতাদের কাছে সংবাদ প্রকাশের ছিল, বর্তমান মোটরসাইকেল ব্যবসা কোন পর্যায়ে রয়েছে? নতুন মোটরসাইকেল কি বাজারে আসবে? ৩৫০ সিসি মোটরসাইকেলের অনুমোদনের ক্রেতার সাড়া কেমন? এসব মোটরসাইকেলে নিরাপত্তার দিকে কী রকম গুরুত্ব দেওয়া হবে?
আশরাফুল হাসান জিহান নামে এক মোটরসাইকেল বিক্রেতা সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “বর্তমান বাইকের (মোটরসাইকেল) ব্যবসা একটু খারাপ। সরকার ৩৫০ সিসি বাইকের অনুমোদন দিয়েছে। উচ্চ ক্ষমতার বাইক বাজারে এলে ব্যবসার প্রসার হবে। ক্রেতারা এখনই জানতে চায় কবে আসবে ৩৫০ সিসির বাইক।”
এই বিক্রেতা আরও বলেন, “মানুষের কিছু ভুল ধারণা রয়েছে। যেমন অনেকেই চিন্তা করে ১০০০ সিসি মানে টপ স্পিড ৮০০ বা ৯০০ প্রতি ঘণ্টা। বিষয়টা এমন নয়, আপনি চাইলেও সেই স্পিড ওঠাতে পারবেন না। এর লিমিট (সীমা) রয়েছে। তাছাড়া সিসি লিমিট যত বাড়বে, ফিচারও বাড়বে। সেইসঙ্গে ব্রেক্রিং সিস্টেম শক্তিশালী হবে। আমাদের লাইন আপে নতুন বাইক আসবে।”
মনিরুজ্জামান নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, “বর্তমান বাইকের বাজার খুব একটা ভালো নয়। আগামী দিনে নতুন নতুন বাইক এলে ব্যবসা ভালো হবে। সিসি লিমিট বেড়েছে। এতে ক্রেতারা উৎসাহী।”
সার্বিক বিষয়ে গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. মো. শামসুল হক বলেন, “মোটরসাইকেল চার চাকার যানের চেয়েও ৩০ গুণ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। পাশাপাশি আমাদের রোড ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম (সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা) অত্যন্ত বিশৃঙ্খল। এমন অবস্থায় ৩৫০ সিসি মোটরসাইকেলের অনুমোদন দেওয়া ঠিক হয়নি।”