রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গু সংক্রমণ ও মৃত্যুহার কিছুটা কমলেও বেড়েছে সারা দেশে। বিভিন্ন জেলায় উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে আক্রান্ত আর মৃত্যুর সংখ্যা।
ডেঙ্গুতে গত ১০ দিনে সারাদেশে ১৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর চলতি বছর মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৭৩০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৯শ ৯৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকায় ৯৯৪ জন। আর বাইরের জেলাগুলোতে ১ হাজার ৯৯৯ জন।
সরজমিনে রাজধানীর কয়েকটি সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, জুলাই ও আগস্টের তুলনায় চলতি মাসে রোগীর চাপ কমেছে। বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালগুলোতে যে শয্যা সংকট ছিল তা এখন কমে এসেছে।
ডেঙ্গু চিকিৎসায় আলোচিত মুগদা হাসপাতালের চিত্র এখন স্বাভাবিক। গত মাসে এখানে শয্যা সংকটে মেঝেতে আর বারান্দায় চিকিৎসাসেবা দিতে হয়েছে। এখন সেই অবস্থা নেই হাসপাতালটিতে। ডেঙ্গু আক্রান্তদের জন্য ৪০০ শয্যা বরাদ্ধ থাকলেও এখন রোগী আছে ৩২৬ জন। মুগদা হাসপাতালের মতো ডিএনসিসির ডেঙ্গু হাসপাতালের চিত্রও একই রকম। ৫০০ শয্যার হাসপাতালে বর্তমানে রোগী ভর্তি আছে ৩১৯ জন।
এদিকে, চলতি বছর ঢাকা মহানগরে ৫২১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। তারপরের অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। চট্টগ্রাম বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৬৬ জন, বরিশাল বিভাগে মারা যায় ৫৬ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে সর্বমোট ৯ হাজার ৮৭১ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চার হাজার ২৯৭ জন এবং ঢাকার বাইরে ৫ হাজার ৭৭৪ জন ভর্তি রয়েছে।
রাজধানীর বাইরে ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলার সরকারি হাসপাতালে ১৭০৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ময়মনসিংহ বিভাগে ২৭৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১ হাজার ৭৪ জন, খুলনা বিভাগে ৭৭৪, রাজশাহী বিভাগে ৪২১ জন, রংপুর বিভাগে ১৬২, বরিশাল বিভাগে ১ হাজার ১০১ জন এবং ৩৪ জন ডেঙ্গু বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
![](https://86818.cdn.cke-cs.com/QOKezuxUuZpoGw7a0M0R/images/a30846f136bea8a70a285cf56633c5b3a914177d048e1636.jpg)
ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে ডেঙ্গু সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. শাহাদাত হোসেন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বছরের শুরুতেই জানানো হয়েছিলো চলতি বছর বাড়তে পারে ডেঙ্গুর প্রকোপ। সে আশংকা অনুযায়ী এবার দ্রুত গতিতে ঢাকার মতো করে বাইরের জেলাগুলোতে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা সদর, উপজেলা হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে নিয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “প্রতিদিন যেভাবে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়ে পানি জমে যাচ্ছে, ফলে ডেঙ্গু আরও বাড়তে পারে। এই মূহুর্তে সরকার ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে। যার যার বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার রাখতে হবে। যেখানে মশা জন্ম নেয় সেখানে স্প্রে করে লার্ভা ধ্বংস করতে হবে।”
কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “বড় শহরগুলোর সিটি কর্পোরেশনেরই মশক নিধনের তো প্রয়োজনীয় যান-যন্ত্রপাতি নেই। তাহলে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে কীভাবে থাকবে। পৌরসভাগুলোতে হয়তো ফগার মেশিন আছে। উপজেলা পর্যায়ে তো কোনো কিছুই নেই।”
তিনি আরও বলেন, “এই মুহূর্তে আমাদের ডেঙ্গুর হট স্পট ম্যানেজমেন্ট করা দরকার। জেলা শহরে ডেঙ্গু রোগীদের ঠিকানা বের করে, ওই ব্যক্তির বাড়ির আশেপাশে ফগিং করে উড়ন্ত মশাগুলোকে মেরে ফেলতে হবে। এই উড়ন্ত মশাগুলোই এই মুহূর্তে ইনফেক্টেড মশা, এই মশাগুলো যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন ডেঙ্গু ছড়াবে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সামাজিক উদ্যোগ নিয়ে সম্মিলিতভাবে এডিস মশা নিধন কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। বাড়ি ও আঙিনার জমা পানিতে যাতে এডিস মশা প্রজনন করতে না পারে প্রত্যেককে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।”
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “গত কয়েক বছর ধরে অব্যাহতভাবে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঘটে চললেও সেদিকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, ফলে ডেঙ্গু ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। ইতোপূর্বে ডেঙ্গু রাজধানীকেন্দ্রিক থাকলেও বর্তমানে তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। কয়েক বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গুরোগীদের অবস্থা খুব তাড়াতাড়ি অবনতি হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “সংক্রমণ বেশি হলে মৃত্যুও বেশি হবে। সারা দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলেও মৃত্যুর সংখ্যা ঢাকায় বেশি, প্রায় তিনগুণ।”
আপনার মতামত লিখুন :