করাচি বন্দর ব্যবহার করতে পারবে বাংলাদেশ, পাকিস্তানের সম্মতি


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২৫, ০৪:৩৬ পিএম
করাচি বন্দর ব্যবহার করতে পারবে বাংলাদেশ, পাকিস্তানের সম্মতি

দীর্ঘ ২০ বছর পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে নবম যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) বৈঠক হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানো লক্ষ্যেই এ আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।

বৈঠকে পাকিস্তানি বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার চেয়েছে ঢাকা। অন্যদিকে, বাংলাদেশ করাচি বন্দর ব্যবহার করতে পারবে বলে সম্মতি দিয়েছে পাকিস্তান।

সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা কমিশনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে কৃষি গবেষণা, হালাল ফুড, তথ্যপ্রযুক্তি ও নৌপরিবহনসহ কয়েকটি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠক শেষে গণমাধ্যমের সামনে কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং পাকিস্তানের জ্বালানিমন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক।

বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) জানায়, পাকিস্তান বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ৫০০ নতুন বৃত্তি প্রদানের প্রস্তাব করেছে। দেশটি বাংলাদেশে তাদের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থাপনে আগ্রহী। তাছাড়া সিকিউরিটি প্রিন্টিং ও ব্যাংকিং খাতে সব মূল্যমানের ব্যাংক নোট, প্রাইজবন্ড ও অন্যান্য নিরাপত্তা সামগ্রী মুদ্রণে ব্যবহৃত নিরাপত্তা কালির শতভাগ আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রে অংশ নিতে চায় দেশটি। ব্যাংক খাতে কারিগরি প্রশিক্ষণও দিতে চায় পাকিস্তান।

ইআরডি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ-পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের আজকের ৯ম সভায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং পাকিস্তানের পক্ষে দেশটির ফেডারেল অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রী আহাদ খান চিমা প্রতিনিধিত্ব করেন। অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে এ সভায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন ১৬ জন।

২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর হয়। কয়েক দফায় দেশটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সফর করেন।

আজকের সভায় পাকিস্তানের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার লক্ষ্যে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সম্পর্ক বাড়াতে দুই দেশের আগ্রহের ভিত্তিতে এসব প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। এরমধ্যে পাকিস্তানের প্রস্তাবগুলোই প্রাধান্য পেয়েছে।

ব্যাংক নোট, প্রাইজবন্ড, জুডিশিয়াল ও নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট, বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের এমআইসিআর ও ট্যাডিশনাল চেক, সিগারেট স্ট্যাম্প ও ব্যান্ডরোলসহ অন্যান্য রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সামগ্রী দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন বাংলাদেশে লি. (এসপিসিবিএল) মুদ্রণ করে থাকে।

এসব নিরাপত্তা সামগ্রী মুদ্রণে ব্যবহৃত নিরাপত্তা কাগজের সিংহভাগ ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। তাছাড়া সব মূল্যমানের ব্যাংক নোট, প্রাইজবন্ড ও অন্যান্য নিরাপত্তা সামগ্রী মুদ্রণে ব্যবহৃত নিরাপত্তা কালির শতভাগ আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ইউরোপ থেকে আমদানি করা হয়। পাকিস্তানের এ বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে। সেজন্য আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে পাকিস্তান উন্মুক্ত টেন্ডারে অংশ নিতে পারে বলে এরইমধ্যে ইআরডির এক সভায় মতামত দেওয়া হয়। তাছাড়া ব্যাংক খাতে পাকিস্তানের প্রস্তাবিত কারিগরি প্রশিক্ষণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের পরিকল্পনায় অভিভূত দেশটি। তারা বাংলাদেশের এ মডেল গ্রহণ করতে চায়। পাকিস্তান-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে ভ্যাকসিন ডেভেলপমেন্ট, গবেষণাসহ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে পারস্পারিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে পাকিস্তান আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। সম্প্রতি ইআরডির এক সভায়, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে যৌথ উদ্যোগে কার্যক্রম গ্রহণের বিষয়ে ঐকমত্য হয়। পাকিস্তান বাংলাদেশের পরিবার পরিকল্পনা এবং প্রজনন স্বাস্থ্য মডেল গ্রহণে আগ্রহী। এ বিষয়ে পাকিস্তানকে সহযোগিতা করতে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগও সম্মতি দিয়েছে।

আজকের সভায় আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছে ইআরডি। এরমধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের গবাদিপশুর জাত উন্নয়নের লক্ষ্যে পাকিস্তান তাদের কিছু উন্নত জাতের গরুর সিমেন বাংলাদেশে রপ্তানি করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করার বিষয়েও সম্মত বাংলাদেশ।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে সহযোগিতা অনুসন্ধানের লক্ষ্যে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করতে পাকিস্তান আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনো আইসিটি বিভাগের সম্মতি পাওয়া যায়নি। তাছাড়া পাকিস্তান বাংলাদেশের ডিজিটাল নাগরিক আইডেন্টিটি ও পাসপোর্ট ডিজিটালাইজেশনে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। মেরিটাইম সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে পাকিস্তান একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করতে চায় দেশটি। বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন এবং পাকিস্তান ন্যাশনাল শিপিং করপোরেশনের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। চীন ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পাকিস্তানের করাচি বন্দর ট্রাস্ট (কেপিটি) ব্যবহার করতে পারে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান।

Link copied!