• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

যানজটের শহরে মেট্রোরেলে স্বস্তির যাত্রা


মো. মির হোসেন সরকার
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০২৪, ০৪:৪২ পিএম
যানজটের শহরে মেট্রোরেলে স্বস্তির যাত্রা
মেট্রোরেলে রয়েছে নিরাপদ ভ্রমণের নিশ্চয়তা

রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যাতায়াত এক সময় ছিল অকূল সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার মতো। বিশেষ করে অফিসগামীদের এ রুটে বিড়ম্বনা পোহাতে হতো নিত্য। ঠিক সময়ে গাড়ি না পাওয়া, জ্যামে দীর্ঘসময় বসে থেকে নির্ধারিত সময়ে অফিস ধরতে না পারার টেনশন—এসব ছিল এই রুটের যাতায়াতকারীদের প্রতিদিনকার গল্প। তবে মেট্রোরেল বদলে দিয়েছে তা। এখন বিড়ম্বনার বদলে আছে স্বস্তি, নেই দেরি হওয়ার শঙ্কা। রয়েছে নিরাপদ ভ্রমণের নিশ্চয়তাও।

২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর দেশের প্রথম মেট্রোরেল চলাচল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয় পরদিন, অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর। তখন অবশ্য উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলত মেট্রোরেল। গত বছরের (২০২৩) ৫ নভেম্বর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশ চালু হয়। অর্থাৎ উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলাচল শুরু করে স্বপ্নের মেট্রোরেল। এতেই বদলে যায় রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থার একাংশ। দুর্ভোগ ও ভোগান্তি কমে যায় এ রুটের যাত্রীদের।

এই রুটে নিয়মিত চলাচল করেন মো. রাজিব সরকার। তিনি মতিঝিলের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। থাকেন উত্তরায়। তার কাছে মেট্রোরেল শুধু সময় সাশ্রয়ীই নয়, নিরাপদও। তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “শুরুতে যখন মেট্রোরেল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মতিঝিল চলাচল করতো, তখন ভাবতাম সন্ধ্যা পর্যন্ত চলাচল হলে আমাদের জন্য সুবিধা হতো। এখন যখন রাত ৮টা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করছে তাতে খুব সুবিধা হয়েছে। আমার ভোগান্তি কমেছে।”

মো. রাজিব সরকার আরও বলেন, “সকাল হলেই টিকিটের জন্য ভিড় জমে যায়। লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে কষ্ট করে টিকিট পেলেও মেট্রোরেলে উঠতে গেলে প্রতিযোগিতায় নামতে হয়। মেট্রোরেলে সাধারণ মানুষ এতটা অভ্যস্ত হবে ভাবতেই পারিনি।”

সরেজমিনে উত্তরা উত্তর, শেওরাপাড়া, ফার্মগেট মেট্রোস্টেশনে দেখা যায়, টিকিট পেতে যাত্রীদের কাউন্টারে লম্বা লাইন। মেট্রোরেল চালুর এক বছরের বেশি সময় পার হলেও এখনো অনেক যাত্রী স্বয়ংক্রিয় টিকিট কাটায় অভ্যস্ত হতে পারেননি। ফলে টিকিট কাটতে দীর্ঘ সময় লাগছে। তাতে দীর্ঘ হচ্ছে টিকিট কাটার লাইন।

টিকিট কাটতে গিয়ে নিজের দুর্ভোগের কথা জানিয়ে মো. নাজমুল হক নামের এক যাত্রী বলেন, “মেট্রোরেল আমাদের স্বস্তির জায়গা। এত মানুষের ভিড় দেখে আমি অবাক। সাধারণ মানুষ বাস ব্যবহার না করে মেট্রোরেল ব্যবহার করছে। তবে টিকিট কাটতে একটু সময় বেশি লাগছে। এত মানুষের ভিড়ে অনেকেই মেশিনে টিকিট কাটতে পারে না। যার ফলে সময় বেশি যায়। এ ছাড়া মেশিনে ভাংতি টাকা না থাকায় টিকিট সমপরিমাণ টাকা জোগাড় করতে হয়, যেটা অনেকেই পারে না।”

ভাংতি টাকা না থাকার সমস্যা দ্রুতই সমাধান হবে বলে জানান স্টেশনে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা। তারা জানান, মেট্রোরেল এখন রাত পর্যন্ত চলাচল করায় অনেক যাত্রী অফিস শেষ করে মেট্রোরেলেই চলাচল করছেন। যারা আগে মেট্রোরেলে অভ্যস্ত ছিলেন না, তারাও এখন অভ্যস্ত হচ্ছেন।

বর্তমানে রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল অংশে সকাল ৭টা ১০মিনিট থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলাচল করছে মেট্রোরেল। এতে রাত পর্যন্ত যখন খুশি তখন চলাচলের সুযোগ পাচ্ছেন যাত্রীরা। পিক আওয়ারে ১০ মিনিট পর পর, আর অফপিক আওয়ারে ১২ মিনিট পর পর ট্রেন আসা-যাওয়া করছে। সামনে বিশ্ব ইস্তেমা উপলক্ষে এ সময় বাড়ার দাবি করা হলেও সময় বাড়বে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

জানতে চাইলে মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “এখন যে সময়ে মেট্রোরেল চলছে সেই সময়ই থাকবে। বিশ্ব ইস্তেমা উপলক্ষে সময় বাড়বে না।”

যাত্রীদের মেট্রোট্রেন বাড়ানোর দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা দাবির ভিত্তিতে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি না। আমরা বাস্তবায়নের ভিত্তিতে, সার্ভিসের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।”

Link copied!