• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

ঢিলেঢালা অবরোধে কয়েক জায়গায় সংঘর্ষ, যানজটমুক্ত ছিল ঢাকা


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২৩, ১০:০১ পিএম
ঢিলেঢালা অবরোধে কয়েক জায়গায় সংঘর্ষ, যানজটমুক্ত ছিল ঢাকা
ছবি : সংবাদ প্রকাশ

বিএনপির ডাকা টানা তিন দিনের অবরোধের প্রথম দিনে বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং বগুড়ায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এসব সংঘর্ষের ঘটনায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

অবরোধকে ঘিরে মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সকাল থেকে ঢাকার রাস্তায় প্রায় সব ধরনের গাড়ির সংখ্যা কম লক্ষ্য যায়। দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি গাবতলী থেকে। ঢাকার ভেতরে যানবাহনের সংখ্যা খুব একটা দেখা যায়নি, ছিল না যানজটও। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা বাড়তে দেখা গেছে।

কিশোরগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে নিহত ১
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে বিল্লাল হোসেন নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে।

তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ। তিনি বলেন, “মঙ্গলবার সকালে অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের করে পুলিশের ওপর হামলা চালান বিএনপি নেতাকর্মীরা। এসময় ‘আত্মরক্ষার্থে’ বেশ কয়েক রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছোড়ে পুলিশ।”

নিহত বিল্লালকে নিজেদের একজন দাবি করেছে বিএনপি। বিল্লাল ছাড়াও এই সংঘর্ষে বিএনপির আরো এক নেতা নিহত হয়েছে বলেও দাবি করেছে দলটি।

নিহত বিল্লাল হোসেনের মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ।

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং বগুড়ায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ
ঢাকার মিরপুর, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার এবং বগুড়ার বেশ কয়েকটি জায়গায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বগুড়ার বনানী, গোকুলসহ বেশ কয়েকটি জায়গায়ও পুলিশের সঙ্গে বিএনপি-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করার পর পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে গেলে ধাওয়ার ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী। এসময় ইট-পাটকেলের পাশাপাশি বিএনপিকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি ককটেল ছুঁড়ে মারে বলে দাবি করেন তিনি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মো. ফারুক হোসেন দুপুরের দিকে গণমাধ্যমকে বলেন, “অবরোধের সমর্থনে ঢাকার মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় মিছিল বের করে বিএনপি। দুপুর ১২টার দিকের এই মিছিল থেকে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।”

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে মহাসড়ক অবরোধ করলে রাবার বুলেট ছুড়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। পরে তারা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে। এরপর পুলিশ অবরোধকারীদের সরিয়ে দিতে গেলে দু-পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়।

এসময় বিএনপি নেতাকর্মীদের ইট-পাটকেলের আঘাতে পুলিশের দুই সদস্য আহত হন বলে জানান ডিএমপি মুখপাত্র।

বিজয়নগরে গাড়ি ভাঙচুর
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার পর প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুপুরে বিএনপির দলীয় স্লোগান দিতে দিতে একদল লোক মিছিল নিয়ে বিজয়নগরে আসে। এরপর হঠাৎ-ই একটি প্রাইভেট গাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে তারা দ্রুত পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পর ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

বিএনপি অফিসে তালা, সামনে পুলিশ
গত কয়েকদিনের মতো মঙ্গলবারেও বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলতে দেখা যায়। সেখানে নেতাকর্মীদের কাউকেই দেখা যায়নি। কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা গেছে পুলিশের সদস্যদের। তবে সকালে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে ‘ক্রাইম সিন’ বেষ্টনী সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গত শনিবার বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর কার্যালয়ের সামনের অংশকে ‘ক্রাইম সিন’ হিসেবে বেষ্টনী দিয়ে রেখেছিল পুলিশ।

যান চলাচল কম
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ঢাকার মহাখালী, বনানী, গুলশান, মিরপুর, আদাবর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, গ্রিন রোড, তেজগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, নাবিস্কো, পান্থপথ, কলাবাগান, লালমাটিয়া, ধানমণ্ডি, সংসদভবনসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সীমিতসংখ্যক যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী ট্রাক, পিকআপ ভ্যান চলাচল করতে দেখা গেছে।

তুলনামূলকভাবে মিরপুরসহ যেসব এলাকায় তৈরি পোশাক কারখানা রয়েছে, সেসব এলাকায় রাস্তায় মানুষজন এবং যানবাহনের সংখ্যা বেশি দেখা গেছে। যদিও পুরো শহরেই ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ছিল লক্ষ্যণীয়ভাবে কম। রাস্তায় রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা ছিল স্বাভাবিক দিনের মতো।

তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা বাড়তে দেখা যায়। এছাড়া অবরোধের মধ্যে ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশনে স্বাভাবিক দিনের মতোই ট্রেন চলাচল করতে দেখা গেছে। যদিও স্টেশনে যাত্রীদের সংখ্যা স্বাভাবিক দিনের চেয়ে কম লক্ষ্য করা যায়।

দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ
মঙ্গলবার সকাল থেকে ঢাকার গাবতলী এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়তে দেখা যায়নি। তবে টার্মিনালে বাসের টিকেট কাউন্টারগুলো খোলা ছিল।

গাবতলী থেকে উত্তরবঙ্গের ২৬টি জেলা এবং দক্ষিণবঙ্গের ২২টি জেলায় প্রতিদিন অন্তত এক হাজার ২০০টি যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে বলে জানিয়েছে টার্মিনাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অবরোধের কারণে পর্যাপ্তসংখ্যক যাত্রী না পাওয়ায় দূরপাল্লার বাসগুলো ছাড়া যাচ্ছে না বলে জানান বাসের টিকেট বিক্রেতারা।

সায়েদাবাদের অবস্থাও একই রকম বলে জানান পরিবহন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী এবং কর্মীরা।

সদরঘাটে অধিকাংশ লঞ্চ নোঙর করা
নৌ-পরিবহনের ক্ষেত্রেও কিছুটা স্থবিরতা লক্ষ্য করা গেছে। মঙ্গলবার সকালে সদরঘাটে অধিকাংশই লঞ্চই ছিল নোঙর করা।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অবরোধের প্রথম দিন সকালে ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের অধিকাংশ লঞ্চই ঢাকা ছেড়ে যায়নি।

যাত্রী না থাকায় লঞ্চ ছাড়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তারা। তবে ভোরের দিকে অল্প কয়েকটি লঞ্চ বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে সদরঘাট ছেড়েছে বলে জানানো হয়েছে।

র‍্যাব-পুলিশের সতর্ক অবস্থান
ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় এবং প্রবেশপথগুলোতে পুলিশের সতর্ক অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে। এর মধ্যে গুলশান চেকপোস্টে মোটরসাইকেল, গাড়ি এবং সাধারণ মানুষের ব্যাগে তল্লাশি চালাতেও দেখা যায়।

এছাড়া প্রধান সড়কগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় র‍্যাব ও পুলিশের বেশ কয়েকটি দলের টহল চোখে পড়ে।

আ.লীগের শান্তি মিছিল, বিএনপির অনুপস্থিতি
ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে আওয়ামী লীগ শান্তি মিছিল করেছে। মিছিলে নেতাকর্মীদের বিএনপি এবং হরতাল-অবরোধবিরোধী স্লোগান দিতে দেখা গেছে। এর মধ্যে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার গাবতলীতে শান্তি মিছিল করেছে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা। সকাল ১০টার দিকে আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে গাবতলী মোড়ে আসতে থাকেন দলটির নেতাকর্মীরা।

এদিকে, বিএনপির সঙ্গে অবরোধ ডাকা জামায়াত ঢাকার মহাখালি এবং উত্তরায় ঝটিকা মিছিল করেছে এমন দাবি করে নিজেদের সামাজিকমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছে।

গাজীপুর এবং চট্টগ্রামে বাসে আগুন
অবরোধের আগের রাতে অর্থাৎ সোমবার (৩০ অক্টোবর) গাজীপুর সিটি করপোরেশন এবং শ্রীপুর উপজেলায় দুটি বাসে আগুন দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত কারও হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

এছাড়া মঙ্গলবার ভোরে চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেড থানার সল্টগুলা ক্রসিং এলাকায় একটি বাসে আগুন দেওয়া হয় বলে নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস।

এর আগে, সোমবার রাতে নগরীর দামপাড়া ও বালুচরা ট্যানারি বটতলা এলাকায় আরও দুটি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

এর আগে ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশে পুলিশি বাধা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ এবং সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে সারা দেশে তিন দিনের সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এর ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার প্রথম দিনের অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়।
-বিবিসি বাংলা

Link copied!