• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫
যানজটহীন আতঙ্কিত নগরী

গোলাপবাগে বিএনপি, মোড়ে মোড়ে আ. লীগ


সফিকুল ইসলাম
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০২২, ০২:৩৫ পিএম

রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরে পুলিশের পাশাপাশি সড়কের মোড়ে মোড়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে মহড়া দিচ্ছে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ দলের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। নগরজুড়েই বিভিন্ন স্থানে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে অবস্থান নিচ্ছেন।

বড় দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে দুর্ভোগে রাজধানীবাসী। সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন গোলাপবাগ, মানিকনগর ও সায়েদাবাদের বাসিন্দারা।

রাজধানীজুড়ে সক্রিয় আওয়ামী লীগ

বিএনপির সমাবেশ ঘিরে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন স্থানে খণ্ড খণ্ড মিছিল করছেন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা। একই সঙ্গে প্রায় সব মোড়েই বাজছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ। কোথাও আবার বাজছে দেশাত্মবোধক গান। এদিন সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নিয়েছেন তারা।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ঢাকা উদ্যান চৌরাস্তা, চন্দ্রিমা উদ্যানের প্রবেশমুখ, বসিলা তিন রাস্তার মোড়, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড, শিয়া মসজিদ মোড়, তাজমহল রোড, মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট, আসাদগেট, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ আড়ং, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর মোড, কলাবাগান মোড়, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর, ফার্মগেট, গ্রিন রোড মোড়, পান্থপথ মোড়, বাংলামোটর, শাহবাগ, মগবাজার মোড়সহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সর্বত্র আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বসে আছেন। রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি খণ্ড মিছিল দেখা গেছে। এসব মিছিল থেকে নেতা-কর্মীরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন।

শনিবার সকালে বিএনপির সমাবেশ শুরুর আগে থেকেই আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী যাত্রাবাড়ী মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনর রশীদ মুন্না ও ৪৮ নম্বর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কালাম অনু।

সরেজমিন দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা লাঠি হাতে প্রতিটি মোড়ে অবস্থান করেছেন। আর বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে মোটরসাইকেলে মহড়া দিচ্ছেন। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী ট্রাফিক পুলিশ বক্সের আশপাশ এলাকায় খণ্ড খণ্ড মিছিল করছে তারা। তবে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় সতর্ক অবস্থানে আছে পুলিশ। এ সময় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সারোয়ার কবীর বলেন, বিএনপি বুধবার নয়াপল্টনে পুলিশের ওপর হামলা করে নাশকতার চেষ্টা করেছে। তারা সন্ত্রাসী দল, দেশের আইন মানে না, শান্তিতে বিশ্বাস করে না। তাই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মাঠে অবস্থান করেছেন।

বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে যাত্রাবাড়ী এলাকায় সতর্ক অবস্থানে আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।

অপরাজনীতির নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তার জন্য শক্ত অবস্থানে রয়েছে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগ। শনিবার ভোর থেকে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার ও চৌরাস্তায় নাশকতা ঠেকাতে নেতাকর্মী নিয়ে মাঠে অবস্থান করছেন নেতারা।

ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজল বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। বিএনপি-জামায়াত কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। তাই তারা মহাসমাবেশের নামে দেশে আবারও পেট্রল বোমার রাজনীতি শুরু করার চেষ্টা করছে। আজ সমাবেশের নামে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। আমরা তাদের এই সুযোগ আর দেব না। ডেমরা থানা আওয়ামী লীগ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে থেকে তাদের সকল নৈরাজ্যের উপযুক্ত জবাব দেবে।”

টিকাটুলি ও জয়কালী মন্দির মোড়ে অবস্থান

রাজধানীর টিকাটুলি ও জয়কালী মন্দির মোড়ে সর্তক অবস্থান নিয়েছেন ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী আশিকুর রহমান লাভলু ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার মইনুর রহমান জুয়েল, সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন।

উৎকণ্ঠায় গোলাপবাগের স্থানীয় বাসিন্দারা

নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিএনপির গণসমাবেশ। যে মাঠে এই সমাবেশ হচ্ছে তার এক পাশে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, অন্য পাশে মানিকনগর। এই অঞ্চলের বাসিন্দারা চাচ্ছেন সমাবেশটি যেন শান্তিপূর্ণভাবে হয়। তবে সমাবেশ ঘিরে ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষের ঘটনার নিশ্চিন্তে থাকতে পারছেন না এলাকার বাসিন্দারা। তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। তারা বলছেন, “আমরা শান্তি চাই। কারও কোনো ক্ষতি হোক, সেটা আমরা চাই না।” কিন্তু সম্প্রতি রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্যে মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। তাই সমাবেশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছুটা উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে।

মানিকনগরের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, “স্ত্রী এবং ছেলে-মেয়ে নিয়ে মানিকনগরের বসবাস করছি প্রায় ১০ বছর। এ অঞ্চলে নিরাপত্তা নিয়ে কখনো সমস্যায় ভুগিনি। আমাদের বাসা থেকে বিএনপির সমাবেশস্থল খুব দূরে নয়। তাই এই সমাবেশ নিয়ে বেশ উদ্বিগ্নে আছি।”

একই কথা এলাকার আরেক বাসিন্দা মো. ফয়েজ উদ্দিনের। তিনি বলেন, রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য ঘিরে সম্প্রতি পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে নয়াপল্টনে ঘটে গেছে অপ্রীতিকর ঘটনা। এ পরিস্থিতিতে গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির সমাবেশ হচ্ছে। বিএনপির সমাবেশ যে মাঠে হচ্ছে তার চারদিকেই আবাসিক এলাকা। স্বাভাবিকভাবেই এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে কিছুটা উদ্বেগ কাজ করছে।

গোলাপবাগের ধলপুর এলাকার বাসিন্দা ফরিদ হোসেন বলেন, “সাধারণ মানুষ হিসেবে আমরা চাই রাজনীতি নিয়ে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। পরিবার নিয়ে শান্তিতে থাকতে চাই। বিএনপির সমাবেশ যেখানে হচ্ছে এটা মূলত আবাসিক এলাকা। এই সমাবেশ ঘিরে কিছু হলে স্বাভাবিকভাবেই তার প্রভাব এলাকার বাসিন্দাদের ওপরও পড়বে।”

মোড়ে মোড়ে ব্যাপক পুলিশ-র‌্যাব

বিএনপির সমাবেশ ঘিরে রাজধানী ঢাকার মোড়ে মোড়ে ব্যাপক পুলিশ র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। ঢাকার রাস্তার বিভিন্ন পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি। শনিবার বাস চলাচল আকস্মিকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সারা দেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে রাজধানী ঢাকা। কিছু রিকশা ও অটোরিকশা রাস্তায় থাকলেও বাস না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন কর্মজীবী মানুষ। পোশাকশ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে বিভিন্ন মোড়ে বাসের অপেক্ষায় থেকে তারপর পায়ে হেঁটেই কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা হতে দেখা গেছে।

Link copied!