ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর থেকেই বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও অভ্যন্তরীণ বিভেদ। মনোনয়ন নিয়ে দ্বন্দ্ব নিরসনে গুলশান কার্যালয়ে সম্ভাব্য প্রার্থী ও মনোনয়নবঞ্চিতদের ডেকে বৈঠক করলেও বেশ কয়েকটি আসনে এখনো উত্তেজনা কমেনি। তৃণমূল নেতাকর্মীদের আশঙ্কা—এই বিভাজন দ্রুত না থামালে সংগঠনের নির্বাচনি পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
বিভেদ–বিক্ষোভে অচল পরিস্থিতি
দলীয় সূত্র জানায়, ঘোষিত ২৩৬ আসনের মধ্যে অন্তত ৪০টি আসনে মনোনয়ন নিয়ে তীব্র বিরোধ চলছে। প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া অনেকে এলাকায় প্রচারে নেমে পড়েছেন, আবার মনোনয়নবঞ্চিতরাও সমর্থক নিয়ে মাঠে রয়েছেন। কোথাও বিক্ষোভ-মিছিল, কোথাও মহাসড়ক অবরোধ—দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে।
এই দুর্বলতার সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলো।
তৃণমূল নেতারা বলছেন, সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করতে গিয়ে কিছু আসনে স্থানীয় জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক অবস্থান যথাযথভাবে যাচাই করা হয়নি। মনোনয়ন–বঞ্চিতদের অভিযোগ—জরিপে ভুল তথ্য দিয়ে হাইকমান্ডকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে।
ঐক্যের নির্দেশনা মানছেন না কিছু প্রার্থী
দলীয় হাইকমান্ড স্পষ্টভাবে জানিয়েছিল—সম্ভাব্য প্রার্থী ও মনোনয়ন বঞ্চিতদের একসঙ্গে মাঠে নেমে কাজ করতে হবে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, অনেকেই সেই নির্দেশ মানছেন না।
কয়েকটি আসনে ঘোষিত প্রার্থীরা বঞ্চিতদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না, বরং তাদের অনুসারীদের ওপর হামলা ও হয়রানির কথাও শোনা যাচ্ছে। এতে তৃণমূল আরও ক্ষুব্ধ হচ্ছে।
খুলনা–৪, বরিশাল–২সহ বেশ কয়েকটি আসনে বঞ্চিত নেতারা জানিয়েছেন, তাদের সঙ্গে ঘোষিত প্রার্থীরা কোনো যোগাযোগ করেননি।
অন্যদিকে গাজীপুর–২ ও বরিশাল–৫ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা বঞ্চিত নেতাদের সঙ্গে দেখা করে ঐক্য রেখে কাজ শুরু করেছেন, যা দলের ভেতরে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে।
প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বেশি আলোচিত আসনগুলো
অনুসন্ধানে দেখা যায়, যেসব আসনে সবচেয়ে বেশি আন্দোলন চলছে—
চাঁদপুর–২ : তানভীর হুদার সমর্থকদের ধারাবাহিক বিক্ষোভ।
সুনামগঞ্জ–৫ : মিজানুর রহমান চৌধুরীর পক্ষে প্রতিদিনই গণসমাবেশ।
কুষ্টিয়া–১ ও কুষ্টিয়া–৪ : শরিফ উদ্দিন জুয়েল ও শেখ সাদীর সমর্থকদের নানা কর্মসূচি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া–৪ : সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে দুই উপজেলায় উত্তেজনা।
নরসিংদী–৪ : বহু নেতাকর্মী আব্দুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েলকে চান।
নাটোর–১ : তাইফুল ইসলাম টিপুকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ।
নারায়ণগঞ্জ–২ : কেন্দ্রীয় নেতা মাহমুদুর রহমান সুমনকে প্রার্থী করার দাবি।
গাইবান্ধা–২ : সাবেক সচিব আমিনুল ইসলামকে মনোনয়ন দেওয়ার প্রস্তাব।
চট্টগ্রাম–১২, ১৩ : প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই বিরোধ তীব্র।
এ ছাড়াও চট্টগ্রাম–৪ ও ১৬, সিলেট–৬, রংপুর–৩, সাতক্ষীরা–২ ও ৩, ঠাকুরগাঁও–৩, নোয়াখালী–৫, নীলফামারী–৪, পাবনা–৪, কুমিল্লা–৫, ৬, ১০সহ আরও অনেক আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে কর্মসূচি চলছে।
হাইকমান্ড বলছে—তালিকা এখনো চূড়ান্ত নয়
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ঘোষিত তালিকা চূড়ান্ত নয়। যেসব আসনে পরিবর্তন প্রয়োজন মনে হবে, সেখানে অবশ্যই সংশোধন করা হবে।
তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ–আক্ষেপ শুনে অনেক জায়গায় সমস্যা মিটিয়েও নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
প্রার্থী বদল কি হবে?
দলীয় নেতারা বলছেন, মনোনয়ন বোর্ড আসনভিত্তিক প্রতিবেদন সংগ্রহ করছে।
-স্থানীয় বিবাদ
-সম্ভাব্য প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা
-বঞ্চিত নেতার সাংগঠনিক শক্তি
এসব বিশ্লেষণ শেষে প্রয়োজন হলে প্রার্থী বদল করা হবে।
































