দেশজুড়ে আলোচিত ‘সুগার ড্যাডি’ সংকট মোকাবিলায় জরুরি সরকারি হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সমাজে দ্রুত বিস্তার পাওয়া এই অপরাধমূলক প্রবণতা রোধে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাবও উত্থাপন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মাহমুদুল হাসান ডাক বিভাগের রেজিস্ট্রি ডাক ও ই-মেইলের মাধ্যমে নোটিশ পাঠান।
অবনতি থামছেই না: নোটিশে পরিস্থিতির বর্ণনা
নোটিশে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ‘সুগার ড্যাডি’ নামে পরিচিত এক ধরনের অপরাধ সংগঠিতভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। ক্ষমতাবান ও বিত্তশালী কিছু ব্যক্তি আর্থিকভাবে দুর্বল বা ঝুঁকিপূর্ণ তরুণীদের অবৈধ সম্পর্ক, মানসিক নিপীড়ন, আর্থিক প্রলোভন এবং ডিজিটাল ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে শোষণ করছে।
গণমাধ্যমের অনুসন্ধান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রতিবেদন এবং জনমত—সব মিলিয়েই বিষয়টি এখন গুরুতর সামাজিক সংকট হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
বিলাসী উপহার ও অস্বচ্ছ অর্থপ্রবাহ: অর্থনীতির জন্য হুমকি
নোটিশে উল্লেখ করা হয়, কিছু তরুণীর কাছে বিপুল অঙ্কের নগদ অর্থ, দামি স্মার্টফোন, গয়না, ব্র্যান্ডেড পোশাক, বিলাসবহুল গাড়ি–ফ্ল্যাট এবং বিদেশ ভ্রমণের সুবিধা দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব অর্থের উল্লেখযোগ্য অংশই অবৈধ লেনদেন, মানিলন্ডারিং বা অপ্রদর্শিত কালো টাকার উৎস থেকে আসে।
এভাবে অপ্রদর্শিত অর্থের প্রবাহ দেশের অর্থনীতি ও কর ব্যবস্থার জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করছে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
ব্ল্যাকমেইল ও ডিজিটাল শোষণের অভিযোগ
বিভিন্ন প্রতিবেদনের বরাতে নোটিশে বলা হয়েছে, অনেক তরুণীকে ভয়ভীতি বা প্রলোভনের মাধ্যমে গোপনে ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও ধারণ করে পরবর্তীতে সেগুলো দিয়ে হুমকি ও ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতি শুধু ব্যক্তির জন্য নয়, বরং পরিবার ও সমাজের উপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। কেউ বের হতে চাইলে তাদের সামাজিক লাঞ্ছনা, নিরাপত্তার অভাব এবং ভবিষ্যৎ ঝুঁকির আশঙ্কা আরও বাড়ছে।
পরিবারে অস্থিরতা ও সামাজিক বিপর্যয়
নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘সুগার ড্যাডি’ কর্মকাণ্ডের কারণে বহু পরিবারের ভাঙন, দাম্পত্য অশান্তি, মানসিক নির্যাতন ও পারিবারিক সংকট বাড়ছে। এর ফলে দেশের পরিবারব্যবস্থা ও সামাজিক মূল্যবোধ সরাসরি আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে।
জাতীয় নিরাপত্তার ঝুঁকি: চাঞ্চল্যকর অভিযোগ
সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য হিসেবে নোটিশে উঠে এসেছে—তরুণী ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা, কূটনীতিক, বিদেশি নাগরিক এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের টার্গেট করে ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগ।
এটি শুধু অনৈতিক অপরাধ নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্য সরাসরি হুমকি বলে নোটিশে মন্তব্য করা হয়েছে।
টাস্কফোর্স গঠনের দাবি
অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হাসান নোটিশে সরকারকে অবিলম্বে শক্তিশালী এবং সমন্বিত অভিযান শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ, সিআইডি, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, সাইবার ক্রাইম ইউনিট ও এনবিআরকে নিয়ে একটি জাতীয় টাস্কফোর্স গঠনের সুপারিশ করেছেন।
এই টাস্কফোর্সের মূল দায়িত্ব হবে—
- তরুণীদের কাছে প্রবাহিত অস্বাভাবিক অর্থের উৎস তদন্ত
- আর্থিক অপরাধ শনাক্ত
- ব্ল্যাকমেইল ছবি–ভিডিও অপসারণ
- চক্রের সদস্যদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা
৭ দিনের আল্টিমেটাম
নোটিশে বলা হয়েছে, সরকারি সংস্থাগুলো সাত কর্মদিবসের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট দায়ের করা হবে।






























