• ঢাকা
  • সোমবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৭

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন প্রায় দ্বিগুণ হচ্ছে, কমবে সুযোগ-সুবিধা


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২০, ২০২৫, ০৩:০১ পিএম
সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন প্রায় দ্বিগুণ হচ্ছে, কমবে সুযোগ-সুবিধা

দেশের প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য বড় সুখবর আসতে পারে আগামী বছরের শুরুতেই। সরকার গঠিত নবম পে কমিশন জানুয়ারির মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিলে ২০২৬ সালের মার্চের আগেই নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা হতে পারে। এতে সরকারি চাকরিজীবীদের মূল বেতন দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা জোরালো হয়ে উঠেছে।

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক দশক পর গঠিত এই নবম পে কমিশনের মূল লক্ষ্য হলো বেতন কাঠামোয় বৈষম্য দূর করা ও বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য আনা। কমিশনের প্রাথমিক সুপারিশ অনুযায়ী, বিদ্যমান ২০টি গ্রেডের কাঠামো পুনর্গঠন করে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বেতনের অনুপাত ৮:১ থেকে ১০:১-এর মধ্যে রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে প্রথম গ্রেডের সর্বোচ্চ মূল বেতন ৭৮ হাজার টাকা এবং সর্বনিম্ন (২০তম গ্রেড) ৮ হাজার ২৫০ টাকা। নতুন কাঠামো কার্যকর হলে প্রথম গ্রেডে মূল বেতন দাঁড়াতে পারে ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকার মধ্যে, আর সর্বনিম্ন বেতন হতে পারে ১৬ হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকা পর্যন্ত।

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত আটটি পে স্কেল বাস্তবায়িত হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালে ঘোষিত অষ্টম পে স্কেলে সর্বোচ্চ বেতন প্রায় ৯৫ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন বেতন ১০১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল।

পরিসংখ্যান বলছে, গত ৪৪ বছরে গড়ে প্রতি ৫–৬ বছর অন্তর একটি নতুন পে স্কেল ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু ২০১৫ সালের পর দীর্ঘ ১১ বছর কোনো নতুন স্কেল না আসায় সরকারি কর্মচারীরা এবার উল্লেখযোগ্য সমন্বয়ের প্রত্যাশা করছেন।

সচিবালয়ের ১১–২০তম গ্রেড সরকারি চাকরিজীবী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “বাজারদর ও মুদ্রাস্ফীতি বিবেচনায় এবার অন্তত ১৫০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি অপরিহার্য। সর্বনিম্ন মূল বেতন হওয়া উচিত ৩২ হাজার এবং সর্বোচ্চ ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা।”

তিনি আরও বলেন, “২০১৫ সালের পর দুটি কমিশন গঠিত হলে দুইবার বেতন বাড়তো। তাই এবার কাঠামোতে বাস্তব পরিস্থিতির প্রতিফলন থাকা দরকার।”

অর্থনীতিবিদ ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ মনে করেন, সরকারের সামর্থ্য ও রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি বিবেচনা করে নতুন কাঠামো ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হতে পারে।

“পে কমিশনের কাজ ভালোভাবে এগোচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালের প্রথম প্রান্তিকেই নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর হতে পারে,” তিনি বলেন।

নতুন পে কমিশনের চূড়ান্ত সুপারিশ ডিসেম্বরের মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা পড়বে বলে জানা গেছে। এরপর মন্ত্রিপরিষদ অনুমোদন পেলে ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যেই ঘোষণা আসতে পারে।

যদি কমিশনের প্রস্তাব বাস্তবায়িত হয়, তবে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন দ্বিগুণের সঙ্গে সঙ্গে গ্রেডভিত্তিক বৈষম্যও অনেকটা কমে আসবে, যা হবে গত এক দশকে সবচেয়ে বড় কাঠামোগত পরিবর্তন।

এদিকে জাতীয় বেতন স্কেল বাস্তবায়ন হলে কিছু সুবিধা বাতিল হবে। প্রস্তাবে ‘সাকুল্য বেতন’ কিংবা ‘পারিশ্রমিক’ নামে বিকল্প বেতন কাঠামো গঠনের কথা বলা হয়েছে। যেখানে বিদ্যমান বেতন কাঠামোর ভাতাসহ আর্থিক ও অনার্থিক কোনো সুবিধাই থাকবে না। প্রস্তাবিত এই বেতন কাঠামো অনেক উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে চালু আছে।

বিভিন্ন সরকারি সভা, সেমিনার ও প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের জন্য কর্মকর্তাদের প্রদেয় সম্মানী বা অতিরিক্ত ভাতা নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয় বলে মত দিয়েছে কমিশন। এসব দায়িত্ব মূল কর্মপরিধির মধ্যেই পড়ে, তাই এ বাবদ অতিরিক্ত অর্থ প্রদান অযৌক্তিক বলে কমিশন মনে করছে। এ খাতে প্রতিবছর সরকারের প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। নতুন কাঠামোয় এ ব্যয় বাতিলের জন্য প্রস্তাবও রয়েছে।

এদিকে পে-স্কেল নিয়ে মতামত গ্রহণের জন্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ১৩ সংগঠনের সঙ্গে আজ সোমবার বৈঠকে বসছে জাতীয় বেতন কমিশন (পে কমিশন)।

বাংলাদেশ সচিবালয়ে সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।

জাতীয় বেতন কমিশন ২০২৫-এর সদস্যসচিব এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. ফরহাদ সিদ্দিক স্বাক্ষরিত পৃথক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

Link copied!