গাজীপুরের টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। মাওলানা সাদ ও জুবায়েরপন্থিদের মধ্যে এই সংঘর্ষে বহু হতাহত হয়েছে। অনেকের প্রশ্ন, ইজতেমা মাঠে কেন এই বিভক্তি? ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, দশকের পর দশক ধরে শান্তি আর সম্প্রীতির সঙ্গে বিশ্ব ইজতেমা হয়ে আসছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ইজতেমার আয়োজন করা হয়েছিল ১৯৫৪ সালেম পুরান ঢাকার লালবাগ শাহি মসজিদে। তবে প্রথম ইজতেমার পর থেকেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে আয়োজন। দিন দিন বাড়তে থাকে অংশগ্রহণকারী মুসল্লিদের সংখ্যা। ফলে জায়গা সংকট দেখা দেয়।
অংশগ্রহণকারীদের ক্রমাগত আগ্রহের কারণে ১৯৬৬ সালে এসে ইজতেমা ময়দান হিসেবে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীর বেছে নেওয়া হয়। বিশ্ব ইজতেমার বিশাল এই আয়োজন নিয়ে বিশ্বজুড়েই অভূতপূর্ব সাড়া দেখা যায়। এ সময় দেশ বিদেশ থেকে মুসুল্লিরা এসে জমায়েত হন। এরপর দশকের পর দশক ধরে তুরাগ নদের তীরে সুশৃঙ্খলভাবে বিশ্ব ইজমেতায় মুসল্লিদের ঢল নামতে দেখা যায়।
তবে এক পর্যায়ে মাওলানা সাদ ও জুবায়েরপন্থিদের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। এক ধরনের বিভেদ দেখা যায়। তাবলীগ জামাতের এই বিভক্তিকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এটি মূলত একটি আদর্শিক জায়গা থেকে বিভক্তি। মাওলানা সাদ কান্ধলভীর কিছু বক্তব্য ঘিরেই এর শুরু বলে অনেকে মনে করছেন। বেশ কিছু সময় ধরেই কান্দালভি তাবলীগ জামাতে সংস্কারের কথা বলছেন। তিনি বলেন, ধর্মীয় শিক্ষা (কোরআন শেখানো ও অন্যান্য) অর্থের বিনিময়ে না করানো। মাদ্রাসার শিক্ষকদের মসজিদে এসে নামাজ পড়া। তার মতে, এতে বাইরের মানুষের সঙ্গেও যোগাযোগ স্থাপিত হবে। সাদ কান্ধলভীর বক্তব্যে আরও বলেন, প্রত্যেক মুসলমানের জন্য কোরআন বুঝে পাঠ করা ওয়াজিব ইত্যাদি।
আরও বলা হয়ে থাকে, এই বক্তব্যের কারণেই তাবলিগ জামাতের সাদ কান্ধলভীপন্থীদের সঙ্গে আলেমদের বিভেদ শুরু হয়।
সাদ কান্ধলভীর বিরোধীরা বলছেন, সাদ কান্দালভি যা বলছেন- তা তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা নেতাদের নির্দেশিত পন্থার বিরোধী। তারা মনে করেন, কান্দালভির কথাবার্তা আহলে সুন্নাত ওয়া’ল জামাতের বিশ্বাস ও আকিদার বাইরে।
তাবলীগ জামাতের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব প্রথম প্রকাশ্য রূপ পায় ২০১৭ সালের নভেম্বরে। তখন তাদের মূল কেন্দ্র কাকরাইলে দুই দল কর্মীর মধ্যে হাতাহাতি হয়। তার পরের জুলাই মাসে ঢাকায় কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী’র উপস্থিতিতে তাবলীগ জামাতের একাংশের এক সম্মেলন হয়। এতে সাদ কান্দালভিকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একই সম্মেলন থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, দিল্লিতে তাবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা সাদ কান্দালভির বক্তব্য ও মতবাদকে অনুসরণ করা হবে না, এবং আগামী বিশ্ব ইজতেমার সময় তাকে বাংলাদেশে আসতেও দেয়া হবে না।
 
                
              
 
																 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    




























