• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২০ মুহররম ১৪৪৫

পান্থকুঞ্জ পার্কটা কেন জঙ্গলের মতো?


সুব্রত চন্দ
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২১, ০৩:৩৩ পিএম

নগরবাসীর চিত্তবিনোদনের জন্য ২০১৭ সালে রাজধানীতে ৩১টি পার্ক ও খেলার মাঠ উন্নয়নের প্রকল্প হাতে নেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ‘জল সবুজের ঢাকা’ নামে পরিচিত এই প্রকল্পের আওতায় আধুনিকায়ন করার কথা ছিল ১৯টি পার্ক ও ১২টি খেলার মাঠ। যার মধ্যে শুধু ১৩টি পার্ক ও ৫টি মাঠের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর কাজও অনেকটা শেষের পথে। তবে এখনো তেমন কোনো অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি এই প্রকল্পের আওতায় থাকা পান্থকুঞ্জ পার্কের। উল্টো রীতিমতো জঙ্গলে পরিণত হয়েছে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ জায়গার এই পার্কটি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত পান্থকুঞ্জ পার্কের আধুনিকায়নের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ১৫ শতাংশ। ২০১৮ সালের জুনে ‘জল সবুজের ঢাকা’ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পান্থকুঞ্জ পার্কটি আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয় ওই বছরের সেপ্টেম্বরে। কাজ শুরুর অল্প কিছুদিন পরই আবার বন্ধ হয়ে যায়। নকশা পরিবর্তনসহ নানা জটিলতায় একদিকে যেমন প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে ব্যয়। তারপরও পার্ক আধুনিকায়নে আর কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।

ডিএসসিসির দাবি, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একটি অংশ এই পার্কের ওপর দিয়ে পুরান ঢাকার দিকে যাবে। যার তিনটি স্তম্ভ পড়বে এই পার্কের মধ্যেই। তাই পার্ক আধুনিকায়নের কাজ শুরুর অল্প কিছুদিন পরই সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষ পার্কের মধ্যে পড়া স্তম্ভগুলোর চূড়ান্ত নকশা না দেওয়ায় নতুন করে কাজও শুরু করা সম্ভব হয়নি।

তবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পান্থকুঞ্জ পার্কের ওপর দিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের লাইন যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনেক আগেই পার্ক উন্নয়নের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সিটি করপোরেশনের দায়িত্বহীনতা, নকশা জটিলতা ও সমন্বয়ের অভাবে সেটি হয়নি।

পান্থকুঞ্জ পার্কের বর্তমান অবস্থা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারসংলগ্ন সার্ক ফোয়ারা মোড়ের পাশেই অবস্থান এই পান্থকুঞ্জ পার্কের। ত্রিভুজ আকৃতির পার্কটির একপাশে রয়েছে কাঁঠাল বাগান আবাসিক এলাকা, অন্য পাশে অভিজাত প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল এবং পেছন দিকে বাংলামোটর। দুটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কও চলে গেছে এই পার্কের দুপাশ দিয়ে। যার একটি কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ এবং অন্যটি সি আর দত্ত সড়ক।

পান্থকুঞ্জ পার্কে গিয়ে দেখা যায়, অস্থায়ী টিনের বেড়া দেওয়া পার্কের চারপাশে, যার বেশির ভাগই ভেঙে ফুটপাতে চলে আসার উপক্রম। পার্কের ভেতরে পুরোটাই এখন ঝোপ-জঙ্গলে ভর্তি। হঠাৎ দেখলে মনে হতে পারে, এ যেন ঢাকার বাইরে গহিন কোনো বন। সীমানাপ্রাচীর-ঘেঁষা মাঝারি ধরনের গাছগুলো অস্থায়ী টিনের বেড়া ডিঙিয়ে রীতিমতো পথচারীদের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে পার্কের চারপাশে। পার্ক আধুনিকায়নের জন্য শুরুতে ভেতরে যে কয়টি ড্রেন করা হয়েছিল, সেগুলোও ময়লা আবর্জনায় ভর্তি। বৃষ্টির পানি জমে সেখানে জন্ম নিচ্ছে এডিসসহ বিভিন্ন প্রজাতির মশা ও পোকামাকড়।

একসময় এই পার্কের একটি বড় অংশ খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এখন আর সেটি নেই। সেখানে পার্ক আধুনিকায়নের জন্য স্তূপ করে রাখা হয়েছে ইট ও সুরকি। জায়গায় জায়গায় খুঁড়ে রাখা হয়েছে গর্ত। ভেতরে অর্ধেক নির্মাণ করা ড্রেনগুলোও রয়েছে খোলা অবস্থায়। আগে স্থানীয় লোকজন এই পার্কের মধ্যে সকাল-বিকেল হাঁটতে এলেও ঝোপ-জঙ্গলের কারণে এখন আর সেই পরিবেশ নেই। বরং পুরো পার্কটিই এখন পরিণত হয়েছে ছিন্নমূল মানুষের বাসস্থানে। রাত হলেই বসে মাদকসেবীদের আড্ডা। খদ্দেরের আশায় পার্কের ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ভাসমান যৌনকর্মীদের। এখানে ছিনতাইকারীদের উৎপাতের অভিযোগও শোনা যায় মাঝে মাঝে।

স্থানীয়দের আক্ষেপ

প্রায় এক বছর ধরে পার্কের ভেতর ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে দুই মেয়েকে নিয়ে বসবাস করছেন সুমাইয়া। করোনায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যান্টিনে ধোয়া-মোছার কাজ হারানোর পর থেকে এখানেই আছেন তিনি। পার্কের বিষয়ে জানতে চাইলে এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, “আগে এই পার্ক ছিনতাইকারীদের আখড়া ছিল। এখন কিছুটা কমছে। তবে এখনো রাতে মাঝে মাঝে ছিনতাই হয়।”

পার্কের পূর্ব দিকে থাকা একটি বরইগাছ দেখিয়ে সুমাইয়া বলেন, “রাত ৯টা-১০টার দিকে পতিতারা আসে। বেশি আসে হিজড়ারা। ওই বরইগাছের নিচে অসামাজিক কার্যকলাপ করে। পুলিশ এলে পালিয়ে যায়। ধরতে পারলে পুলিশ তাদের পিটুনি দেয়। কিন্তু তারপরও তাদের আসা বন্ধ হয় না।”

পান্থকুঞ্জ পার্কের পাশেই একটি নির্মাণাধীন ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন আহাদ হোসেন। প্রায় আট বছর ধরে এই এলাকায় তার বসবাস। তিনি বলেন, “চার বছর আগেও এই পার্কের মাঠে খেলাধুলা করছি। কিন্তু পার্ক উন্নয়নের কাজ শুরুর পর থেকে সব বন্ধ। উন্নয়ন তো কিছু করলই না, উল্টো আমাদের খেলাধুলার জায়গাটা নষ্ট করছে। অর্ধেক তৈরি করা ড্রেনগুলোতে এডিস মশা জন্ম হচ্ছে। মশার জ্বালায় আশপাশের ভবনে টেকা দায়। কিন্তু আমাদের দুঃখ দেখার কেউ নেই।”

ছিনতাইকারী ও মাদকসেবীদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এগুলো দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এখন রাত হলেই পার্কে মাদকসেবীদের আড্ডা বসে। আগের মতো অহরহ ছিনতাই না হলেও এখনো সেটি পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। পতিতা তো প্রতিদিনই আসে।”

কাঁঠাল বাগান এলাকার আরেক বাসিন্দা রোমেল রায়হান বলেন, “এখানে আগে খোলামেলা পরিবেশ ছিল। মানুষ সকাল-বিকেল হাঁটতে আসত। এলাকার পোলাপাইন খেলাধুলা করত। কিন্তু এখন আর সেই পরিবেশ নেই। সম্পূর্ণ নোংরা হয়ে গেছে। ঝোপ-জঙ্গলের কারণে যেন একটা ভৌতিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে রাতের বেলা পার্কের আশপাশ দিয়ে হাঁটাচলা করা যায় না। মাদকসেবী ও ছিনতাইকারীদের কারণে ভয় কাজ করে। কোনো নিরাপত্তা নেই। এলাকাবাসীর কথা চিন্তা করে হলেও সরকারের উচিত পার্কটির দ্রুত উন্নয়ন করা।”

দুঃখ প্রকাশ করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও

পান্থকুঞ্জ পার্কের আধুনিকায়নের কাজ বন্ধ থাকায় দুঃখ প্রকাশ করেন ডিএসসিসির ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আসাদুজ্জামান। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “চীনের দুঃখ হুয়াংহু আর আমার দুঃখ এই পান্থকুঞ্জ পার্ক। এই পার্কটির একটি মনোরম পরিবেশের ছিল। আশা করেছিলাম আরও আধুনিক হলে এখানে আমার এলাকার বাসিন্দারা বিকালবেলা অবসর সময়টা কাটাবেন। ডিএসসিসির সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের আমলে ‘জল সবুজের ঢাকা’ প্রকল্পের আওতায় এটার উন্নয়ন কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় পরবর্তীকালে সাঈদ খোকনের আমলেই এটার কার্যাদেশটা স্থগিত করে দেওয়া হয়। এই পার্কের ওপর দিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একটি লাইন যাবে, তাই পার্ক উন্নয়নের কাজ স্থগিত করে দেওয়া হয়।”

মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, “গত দেড় বছর করোনা অতিমারির কারণে আমাদের সরকারি কাজগুলো অনেকটা ধীরগতিতে চলছে। আশা করি খুব দ্রুত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সিটি করপোরেশন এর একটি ফলাফল নিয়ে আসবে। যেন তাড়াতাড়ি কাজটা শেষ করে এলাকাবাসীর মনোরম পরিবেশে বিনোদনের জন্য খুলে দেওয়া যায়।”

এজন্য বর্তমান মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি কামনা করেন এই জনপ্রতিনিধি।

পান্থকুঞ্জ পার্কের অসামাজিক ও অপরাধমূলক কার্যকলাপের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “পার্কটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সীমানায় পড়েছে। এর একপাশে কারওয়ান বাজার। যেখানে নানা শ্রেণি-পেশার ছিন্নমূল ও অপরাধপ্রবণ মানুষ থাকে। তারা কারওয়ান বাজার থেকে এসে পার্কের মধ্যে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সৃষ্টি করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কয়েকবার হাতেনাতে তাদের ধরেছে। তারাও বিষয়টি নিয়ে খুবই উদগ্রীব। আমি সিটি করপোরেশনের প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে এই বিষয়ে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। জনগণও প্রতিনিয়ত আমার কাছে অভিযোগ জানাচ্ছে। তাই আমি ইতোমধ্যে তিনবার নিজ খরচে পার্কের মধ্যে আলোর ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু অপরাধপ্রবণ মানুষরা সেসব লাইট নষ্ট করে দেয়। আমি নিজেও এ নিয়ে সমস্যায় আছি। এটার খুব তাড়াতাড়ি সমাধান করা উচিত।”

সিটি করপোরেশনের দাবি

জল সবুজের ঢাকা প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট ডিএসসিসির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “হাতিরঝিল থেকে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একটি লাইন এই পার্কের ওপর দিয়ে হাতিরপুলের দিকে যাবে। পার্কের ভেতরে এক্সপ্রেসওয়ের তিনটা কলাম পড়েছে। কিন্তু কলামগুলো ঠিক কোথায় বসবে, তা এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত করে দেয়নি। তাই পার্কের সংস্কারকাজ স্থগিত আছে। কারণ, কলামগুলোর কাজ করতে গেলে সেখানের আশপাশের জায়গা নষ্ট হবে। কর্তৃপক্ষ যদি কলামগুলোর স্থান ঠিক করে দেয়, তাহলে আমরা সেই জায়গা বাদ দিয়ে বাকি অংশে কাজ করতে পারতাম।”

পার্ক আধুনিকায়নের কাজ কতটুকু হয়েছে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, “কাজ শুরুর পর পুরো পার্ক বেড়া দেওয়া হয়েছিল। ড্রেনের কাজও করা হয়েছে কিছুটা। কিন্তু কাজ শুরুর কদিন পরই জানা গেল এর ওপর দিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একটি লাইন যাবে। এখন পার্ক আধুনিকায়নের কাজ করলে সেটা নষ্ট হবে এবং সরকারি টাকার অপচয় হবে। তাই তখনকার মেয়রের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে কাজটা স্থগিত করা হয়। এক্সপ্রেসওয়ের নকশা চূড়ান্ত হলে আমরা আবার কাজ শুরু করতে পারব।”

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ও নগরবিদের বক্তব্য

‘জল সবুজের ঢাকা’ প্রকল্পের তিনজন পরামর্শকের একজন এবং ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বর্ধিত লাইনের একাংশের নকশার পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন স্থপতি ইকবাল হাবিব। একটি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য আরেকটি উন্নয়ন প্রকল্প বাধাগ্রস্ত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “জল সবুজের ঢাকা প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার অনেক দিন পর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বর্ধিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সুতরাং এক্সপ্রেসওয়ের জন্য পার্ক উন্নয়নের কাজ ব্ন্ধ হয়নি। কেন প্রকল্পটির কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ হয়নি সেটি খতিয়ে দেখা দরকার।”

ইকবাল হাবিব আরও বলেন, “আমাদের দেশে প্রকল্পগুলোর কাজ নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ হয় না। এতে প্রকল্পের কী পরিণতি হয়, তার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ এই পান্থকুঞ্জ পার্ক। প্রকল্প চলাকালে এর উন্নয়নকাজ তিন দফা বাধাপ্রাপ্ত হয়—কখনো সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনের (এসটিএস) জন্য, কখনো পার্কের নিচ দিয়ে যাওয়া খালের পানিপ্রবাহের জন্য। পান্থকুঞ্জ পার্কের নিচ দিয়ে কাঁঠালবাগান-কলাবাগান খাল, পান্থপথ খাল ও হাতিরঝিলের বেগুনবাড়ি খালের সংযোগ রয়েছে, যা খুবই জটিল। কিন্তু পান্থকুঞ্জ পার্কের প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা সেটি মাথায় নেননি। যার কারণে পার্কটি আধুনিকায়ন করার সময় হাতিরঝিলের কারণে দুইবার বাধা প্রদান করে। ফলে এসটিএস এবং ইন্টারসেকশন মিলে এখনো প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি।”

এই স্থপতি আরও বলেন, “আমি মনে করি এই ধরনের বিভ্রান্তিমূলক ও অসমন্বিত কাজের জন্য জনগণের ভোগা উচিত নয়। সরকারের বিভিন্ন সংগঠকের উচিত পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সমন্বিতভাবে কাজ করা।”

পার্কের মধ্যে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের স্তম্ভ বসবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তিনটি কলাম পার্কের মধ্যে বসবে। সেতু কর্তৃপক্ষ সেটি নির্দিষ্টও করে দিয়েছে। আমার কাছে সেই নকশা আছে। সেতু কর্তৃপক্ষ নকশা চূড়ান্ত করেনি, এটি সিটি করপোরেশনের বানোয়াট কথাবার্তা, দায়িত্ব এড়ানো ও প্রকল্প শেষ না করার অজুহাত। দায়িত্ববান মানুষরা এ ধরনের কথা বলেন না।”

একনজরে জল সবুজের ঢাকা প্রকল্প

পুরান ঢাকাসহ মহানগরীর দক্ষিণাংশের মানুষের চিত্তবিনোদনের জন্য ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ‘জল-সবুজে ঢাকা’ প্রকল্পের আওতায় ১৯টি পার্ক ও ১২টি খেলার মাঠ আধুনিকায়নের কাজ শুরু করে ডিএসসিসি। এই উদ্যোগটি নেন তৎকালীন মেয়র সাঈদ খোকন। প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। যদিও পরবর্তী সময়ে নানা কারণে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকায়। যার ৩০ শতাংশ বহন করবে ডিএসসিসি এবং বাকি ৭০ শতাংশ বরাদ্দ দেবে সরকার।

স্থপতি রফিক আযমের নেতৃত্বে পুরো প্রকল্পের নকশা করে ৭০ জন স্থপতি। নকশায় পার্ক ও মাঠগুলোতে জাদুঘর, গ্রিন জোন, ব্যায়ামাগার, লেডিস কর্নার, ফুটবল খেলার ব্যবস্থা, পাবলিক প্লাজা, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, বসার বেঞ্চ, ফুলবাগান, ওয়াটার বডি, পানির ফোয়ারা, গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের ভাস্কর্য, এলইডি লাইটিং সিস্টেম, পাবলিক টয়লেট, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, ফুড কোর্ট, কফি হাউজ, ক্রিকেট নেট অনুশীলনের ব্যবস্থা, কার পার্কিংসহ নানা আধুনিক সুযোগ সুবিধা রাখা হয়। এতে মনোরম পরিবেশে সময় কাটাতে ও খেলাধুলা করতে পারবেন ছোট থেকে বড় সবাই।

প্রকল্পের আওতায় থাকা পার্ক ও মাঠগুলো হলো সিক্কাটুলী পার্ক, মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন পার্ক, আউটফল স্টাফ কোয়ার্টার শিশুপার্ক, জোড়পুকুর পার্ক, বাসাবো মাঠ, শহীদ আব্দুল আলীম খেলার মাঠ, রসুলবাগ শিশুপার্ক, নবাবগঞ্জ পার্ক, গুলিস্তান পার্ক, বাহাদুরশাহ পার্ক, গজমহল পার্ক, দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠ, বালুরঘাট খেলার মাঠ, মতিঝিল পার্ক, সিরাজ উদ্দৌলা পার্ক, বংশাল ত্রিকোণাকার পার্ক, কলাবাগান খেলার মাঠ, গোলাপবাগ খেলার মাঠ, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা পার্ক, মালিটোলা পার্ক, ওসমানী উদ্যান বা গোসস্যা নিবারণী পার্ক, বকশীবাজার পার্ক, বশির উদ্দিন পার্ক, হাজারীবাগ পার্ক, বাংলাদেশ মাঠ, সাদেক হোসেন খোকা খেলার মাঠ, পান্থকুঞ্জ পার্ক, আজিমপুর শিশুপার্ক, শহীদনগর মিনি স্টেডিয়াম ও সামসাবাদ খেলার মাঠ।

Link copied!