ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপালার রীতি ও আঙ্গিকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বিসর্জন’ নাটক মঞ্চস্থ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগে। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নিজস্ব প্রযোজনা ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় নিরীক্ষামূলক উপস্থাপনাটি পরিবেশন করে তারা।
শনিবার (১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রযোজনাটির প্রথম প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। নাটকটি রোববার (২ জানুয়ারি) থেকে বুধবার (৫ জানুয়ারি) প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট-মণ্ডল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন। সভাপতিত্ব করেছেন থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান মো. আশিকুর রহমান লিয়ন। প্রযোজনাটির সার্বিক সমন্বয় করেছেন তিনি।
এছাড়া, বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তানভীর নাহিদ খানের নির্দেশনা ও সংগীত পরিকল্পনায় নাটকে অভিনয় করেছেন দীপম সাহা, ফারজাদ ইফতেখার, মো. আবতাহী সাদমান ফাহিম, হোসাইন জীবন, মো. রাফায়াতুল্লাহ, মো. তানভীর আহম্মেদ, মোসা. নাসরিন সুলতানা অনু, নিকিতা আযম নীলিমা হোসেন, ওবায়দুর রহমান সোহান, প্রণব রঞ্জন বালা, শাহবাজ ইশতিয়াক পূরণ, সুজানা জাহেদী, তনুশ্রী কারকুন, সায়র নিয়োগী, মুজাহিদুল ইসলাম রিফাত, রিফাত করবী, এস. এ. তানভীর, জাদিদ ইমতিয়াজ আহমেদ, প্রাণ কৃষ্ণ বনিক, ইফতি শাহরিয়ার রাইয়ান এবং প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের ফৌজিয়া আফরিন তিলু, মারিয়া সুলতানা, মুনিরা মাহজাবিন প্রমুখ।
প্রযোজনাটির সমন্বয়ক এবং বিভাগের চেয়ারম্যান আশিকুর রহমান লিয়ন বলেন, বাংলাদেশের যাত্রা পরিবেশনা আমাদের নিজস্ব (দেশজ) আঙ্গিক। বিশ্ববদ্যালয়ের শিক্ষায়তনে দায়বদ্ধতার জায়গাকে বিবেচনা করে যাত্রাপালাকে আমরা নিরীক্ষাধর্মী কার্যক্রমের আওতায় এনে উপস্থাপনাটি তৈরি করেছি। সেক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের কালজয়ী নাটক ‘বিসর্জন’কে এই প্রথম বাংলাদেশে যাত্রা আঙ্গিকে পরিবেশন করার জন্য আমরা নির্ধারণ করেছি। ধর্মীয় গোড়ামির ঊর্ধ্বে গিয়ে মানবতার জয় প্রকাশ পাচ্ছে এই যাত্রাপালায়।
বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রহমত আলীর ভাবনা ও তত্ত্বাবধানে প্রযোজনাটিতে মঞ্চ ও আলোক পরিকল্পনা করেছেন ড. আহমেদুল কবির, পোশাক ও রূপসজ্জা কাজী তামান্না হক সিগমা, দেহবিন্যাস ও চলন অমিত চৌধুরী, দ্রব্য পরিকল্পনা আহসান খান, পোস্টার ডিজাইন ও দ্রব্য নির্মাণে সহযোগীতা করেছেন দেবাশীষ কুমার দে প্রশান্ত, অভিনয় উদ্দীপক উত্তম কুমার ভট্টাচার্য এবং প্রযোজনাটির সার্বিক সমন্বয় করেছে বিভাগের চেয়ারম্যান আশিকুর রহমান লিয়ন।
প্রযোজনাটিকে ‘মনুষ্যত্বের মহিমা অর্জনের নাট্যভাষা’- হিসবে আখ্যায়িত করে নির্দেশক তানভীর নাহিদ খান বলেন, ধর্মীয় আচারসর্বস্ব অন্ধপ্রথার সাথে মানবধর্মের বিরোধকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে নাটকটির আখ্যান। সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মান্ধতা, ধর্ম-ব্যবসায়ীদের কপটতার উদাহরণ হিসেবে নাটকটি সহজাতভাবেই প্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়ায়।
অধ্যাপক তানভীর নাহিদ খান আরো বলেন, কোভিড ভয়াবহতায় দীর্ঘদিন জমে থাকা ক্লাস, পরীক্ষার ব্যস্ততার মাঝেই স্বল্পতম সময়ে নির্মিত হয়েছে যাত্রাপালা ‘বিসর্জন’। করোনাকালে দেড় বছর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দূরে থাকা শিক্ষার্থীদের এক নৈরাশ্যমূলক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করে। বাস্তব জীবনের এই অভিজ্ঞতা একই সাথে যেমনি স্বাভাবিক জীবনে ফেরার অভিপ্রায় হিসেবে থিয়েটারকে গুরুত্বপূর্ণ অবলম্বন হিসেবে হাজির করে, তেমনি সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মান্ধতা, ধর্ম-ব্যবসায়ীদের কপটতার উদাহরণ হিসেবে বিসর্জন নাট্যও সহজাতভাবেই প্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়ায়।