ঈদুল আজহার আগে-পরে দেশের ছোট-বড় সব পশুর হাটে লাখ লাখ ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতিতে জমে ওঠে কোরবানির পশু কেনাবেচা। এই বিশাল আর্থিক লেনদেনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠে একশ্রেণির প্রতারক। যারা জাল টাকা ছড়িয়ে দেয় হাটজুড়ে। এতে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হন গরু ব্যবসায়ী বা খামারি, তেমনি সাধারণ ক্রেতারাও হয়ে পড়েন প্রতারণার শিকার।
কোরবানির আগে পশুর হাটে একদিনে লাখ লাখ টাকা হাতবদল হয়। এসব লেনদেনের বেশির ভাগ হয় নগদ টাকায়। হাটে নিরাপত্তা, আলো ও সিসিটিভি পর্যাপ্ত না থাকায় প্রতারকরা সহজেই সক্রিয় হতে পারে। গরুর দাম দ্রুত চূড়ান্ত করার চাপে অনেক সময় বিক্রেতারা টাকা যাচাই না করেই লেনদেন করেন।
তাই পশুর হাটে গেলে সতর্ক থাকা জরুরি। কীভাবে জাল টাকা চিনবেন, কীভাবে প্রতারণা এড়াতে পারেন এবং আইনগত সহায়তা কীভাবে পেতে পারেন তা নিয়ে সঠিক ধারণা রাখুন।
জাল টাকা চেনার সহজ উপায়
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রচলিত টাকার মধ্যে কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য থাকে যা জাল নোটে থাকে না।
জলছাপ
আসল নোটে ছবি ও মূল্যমানের জলছাপ থাকে, যা আলোয় ধরলেই দেখা যায়।
ক্ষুদ্র লেখায় মূল্যমান
নোটের এক কোণে ক্ষুদ্র অক্ষরে লেখা থাকে, যা জাল টাকায় অস্পষ্ট বা না-ও থাকতে পারে।
রং পরিবর্তনশীল কালি
আসল টাকায় কোণ ঘোরালে কিছু লেখার রং পরিবর্তন হয়। জাল টাকায় এ বৈশিষ্ট্য থাকে না।
টেক্সচার বা খসখসে অনুভূতি
আসল টাকার কালি স্পর্শ করলে কিছুটা খসখসে অনুভব হয়। জাল টাকার কাগজ অনেক সময় মসৃণ বা পাতলা হয়।
সিকিউরিটি থ্রেড
নোটে একটি রূপালি নিরাপত্তা সুতা থাকে যা সরু লাইন হিসেবে দেখা যায়। আলোয় ধরলে এটি পুরোপুরি স্পষ্ট হয়।
কীভাবে সতর্ক হবেন
হাটে টাকা গ্রহণ করার সময় তাড়াহুড়া না করে প্রতিটি নোট ভালোভাবে পরীক্ষা করুন।
বড় অঙ্কের টাকা হাতে নেওয়ার পর আলাদা করে পরীক্ষা করে রাখুন।
প্রয়োজনে ছোট মানের নোটে লেনদেন করার চেষ্টা করুন।
টাকা গ্রহণের সময় চেকিং মেশিন ব্যবহার করতে পারেন (অনেক বড় হাটে এই ব্যবস্থা থাকে)।
টাকা নেওয়ার সময় নিশ্চিত হন যে নোটগুলো আসল।
নিজে যাচাই করতে না পারলে ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিং মাধ্যমে লেনদেন করার চেষ্টা করুন।
অচেনা বা সন্দেহজনক কেউ খুব সহজে গরুর দাম কমিয়ে দিচ্ছে—এমন হলে সাবধান হোন।
এখন অনেক স্মার্টফোনে অ্যাপ দিয়ে নোট যাচাই করা যায়। যেমন “Note Detector”। তা দিয়ে যাচাই করে দেখুন।
বড় হাটে মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ, নগদ) অথবা POS মেশিনের মাধ্যমে ডিজিটাল পেমেন্টের ব্যবস্থা থাকছে, যেগুলো তুলনামূলকভাবে নিরাপদ।
আইনগত সহায়তা কীভাবে পাবেন
জাল টাকা লেনদেন একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। কারও কাছ থেকে জাল নোট পেলে দ্রুত হাট কর্তৃপক্ষ বা পুলিশকে জানান। অনেক হাটেই অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বা ব্যাংক বুথ থাকে—সেখানে অভিযোগ জানানো যাবে।
পশুর হাটে জাল টাকা লেনদেনের ঘটনা রোধে সবার আগে দরকার সচেতনতা। সতর্কতা, ধৈর্য ও প্রযুক্তির ব্যবহারই হতে পারে এই প্রতারণা থেকে রক্ষার প্রধান হাতিয়ার।