দোয়া ইবাদতের মূল স্তম্ভ। নামাজের পর আল্লাহ তাআলার দরবারে দোয়া প্রার্থনা করা হয়। আল্লাহর নবীর প্রিয় সাহাবি হজরত আবু হুরাইরা (রা.) সূত্রে তিরমিজি শরিফে বর্ণিত হয়েছে, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘তিন শ্রেণির লোকের দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। এরমধ্যে রোজাদার ব্যক্তি ইফতারের সময় দোয়া করলে, ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া এবং মজলুমের দোয়া।
ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া কবুল হয়। কারণ ইফতারের হালত ইবাদতের হালত। আর ইবাদতে থেকে আল্লাহর কাছে দোয়া করলে তা কবুল হয়। তাছাড়া ইফতারের সময় বান্দা আল্লাহর সামনে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সপে দেয়। নিজের ক্ষুদ্রতা আর আল্লাহ তায়ালার বড়ত্বকে মেনে নিয়ে আল্লাহর সব নিষেধ থেকে বিরত থাকে। এতে আল্লাহ তায়ালার রহমত বান্দার ওপর নাজিল হতে থাকে। তখন দোয়া করলেই আল্লাহ তায়ালা দোয়া কবুল করেন।
শাসক ন্যায়পরায়ণ হলে তার দোয়াও আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, শুধু শাসকের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য নয়, বরং এর দ্বারা শাসকের ওপর অনেক বড় দায়িত্বও বর্তায়। একজন আদর্শবান শাসকের কাজ শুধু শাসন করা নয়। বরং নাগরিকের কল্যাণ ও সার্বিক নিরাপত্তার জন্য দোয়া করাও তার দায়িত্ব। যে শাসক ন্যায়ের সঙ্গে বিচার করবে এবং শাসনব্যবস্থা পরিচালনায় আল্লাহর সাহায্য চেয়ে নিবে তার জন্য রয়েছে সুসংবাদ!
রাসূল (সা.) বলেছেন, "হাশরের ময়দানে আল্লাহ তায়ালা সাত শ্রেণির মানুষকে আরশের নিচে স্থান দিবেন। এর প্রথম শ্রেণি হচ্ছেন ন্যায়পরায়ণ শাসক।"
শাসক যদি সৎ ও ইনসাফগার হয় তাহলে নাগরিক সমাজেও এর প্রভাব পড়ে। তারাও পরস্পর ইনসাফ করতে শিখে। আর শাসকদের মাঝে নেতিবাচক কোনো বিষয় থাকলে এর চিহ্নও নাগরিক সমাজে দেখা যায়।
মজলুমের দোয়াকে আল্লাহ তায়ালা আকাশে উঠিয়ে নেন। ওই দোয়ার উসিলায় আকাশের দরজাগুলোকে খুলে দেয়া হয়। আর মজলুমের দোয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা বলতে থাকেন, আমি অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করব, যদিও সামান্য বিলম্বে হয়।’ (তিরমিজি-৬২৫)।
নবী করিম (সা.) কখনো দাওয়াতের উদ্দেশে লোক পাঠালে তাদের উপদেশ দিয়ে বিদায় দিতেন। উপদেশের বিষয় হতো দ্বীনি দাওয়াতের পদ্ধতি, দাওয়াত কবুলের পর তাদেরকে শিক্ষা-দীক্ষার গুরুত্ব ও শিক্ষা। তাদের মাঝে দ্বীনি কার্যক্রম পরিচালনার কথাও রাসূল (সা.) বলতেন।
দ্বীনি কাজের একটি ছিল যাকাত আদায় করা। যাকাত আদায়ের প্রসঙ্গে রাসূল (সা.) সাহাবাদেরকে বিশেষ সতর্ক করতেন যে, যাকাত আদায়ে মানুষের ওপর কোনো জুলুম করা যাবে না। কারণ, মাজলুমের দোয়া এবং আল্লাহ তায়ালার মাঝে কোনো পর্দা থাকে না।