মাঝেমধ্যে এমন অনেক সময় আসে যখন আমাদের কোনো কিছুই ভালো লাগে না। আর সেই ভালো না লাগার কারণটা আমরা খুঁজে পাই না। এই ভালো লাগা, ভালো না লাগাটা কোনো শরীরিক অসুস্থতা নয়। এ এমন এক মানসিক অনুভূতি, যেখানে যে কেউ যেকোনো সময় আক্রান্ত হতে পারে।
আসলে এসব কিছুর জন্য ‘ডোপামিন’ নামক হরমোন দায়ী। মনের ভাব নিয়ন্ত্রণ, আবেগ বা উত্তেজনায় সাড়া দেওয়ার নিয়ন্ত্রণ মূলত ডোপামিনের কারণে হয়ে থাকে। যখন অনবরত কিছু না কিছু নিয়ে আমরা ব্যস্ত থাকি তখন এমন হয়ে থাকে। ভালো ফলাফল, আরও ভালো চাকরি-ভালো বেতন, বাড়ি-গাড়ি এসবের পেছনে ছুটতে থাকি, আমাদের মস্তিষ্ক তাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। আবার সাময়িক বিরতি নেওয়ার জন্য যখন আমরা মোবাইলের সঙ্গে সময় কাটাই, তখনো ভালো না লাগার অনুভূতি সৃষ্টি হতে পারে। আসলে এর কোনো বিশেষ কারণ খুঁজে বের করা মুশকিল।
এই ‘কিছু ভালো না লাগা’ কিন্তু মনের অসুখ। যদিও মনের অসুখকে আমরা গুরুত্ব দিয়ে থাকি না। শারীরিক যেকোনো সমস্যার সমাধান আমরা যত দ্রুত করতে চাই, মনের অসুখের ক্ষেত্রে যেন ততটাই অলসতা। তবে মনের এই অসুখ থেকে মুক্তি পেতে আমাদের কিছু উপায় অবলম্বন করা উচিত। এ জন্য সবার আগে যেটা করবেন, সেটা হলো “যে মুহূর্তে আপনার ভালো লাগছে না, ওই মুহূর্তের করতে থাকা কাজ থেকে সাময়িক বিরতি নিন।” এ ছাড়া জীবনের কিছু অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমের আসতে পারে এই রোগের সমাধান।
চলুন জেনে নেওয়া যাক ‘কিছু ভালো লাগে না’ রোগ থেকে মুক্তির উপায়
ভালো বন্ধুর সঙ্গ
একজন ভালো বন্ধু আপনার মানসিক স্বাস্থ্যকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করতে পারে। গবেষণা বলছে, আপনার মনের সবচেয়ে কাছে যে পাঁচ মানুষের বাস, তাদের গড় করলে যেমন একটা মানুষ পাওয়া যাবে, আপনি ঠিক তেমন! অর্থাৎ যে পাঁচজন মানুষের সঙ্গে আমাদের সক্ষতা বেশি তাদের দারুণ প্রভাব পড়ে আমাদের ওপর। তাই ভালো না লাগলে সময় বের করে বন্ধু বা কাছের কারও সঙ্গে মন খুলে কথাও বললে মনের চাপটা কমে যায়।
নিজের প্রয়োজন বোঝা
নিজের মনকে সুস্থ রাখতে প্রথমে নিজের প্রয়োজন বুঝতে হবে। নিজের ক্ষতি করে অন্যের ভালো করার আগে ভাবতে হবে। অন্যের অনুভূতিকে আঘাত না করেও নিজেকে ভালো রাখা যায়। অন্যের পাশে দাঁড়ানোও নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো। নিজেকে নিজে সময় দিন। নিজের সঙ্গ উপভোগ করুন। নিজের সব ছোট-বড় প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিন।
নতুন নতুন অভ্যাস গড়ে তুলুন
গঠনমূলক কাজের দিকে মনোযোগ দিন। নিজের মনকে ভালো রাখতে সৃজনশীল কাজ করতে হবে। মনের চর্চা করতে হবে। নিজের সুন্দর অভ্যাস ও শখকে গুরুত্ব দিন। নিজের চিন্তাকে সুন্দর রাখতে নতুন কাজের সঙ্গে যুক্ত হোন।
নিজেকে সময় দেওয়া
দিনের মধ্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজটি আপনি তখনই করেন, যখন আপনি নিজেকে সময় দেন। মন ভালো রাখতে নিজের ভালো লাগার কাজগুলো করেন এবং নিজেকে নিয়ে চিন্তা করেন। কারণ, সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য নিজেকে জানা জরুরি। নিজের মনের যত্ন নেওয়া জরুরি। নিজের সঙ্গ উপভোগ করা জরুরি।
রাতে আট ঘণ্টার গভীর ঘুম
রাতের পরিপূর্ণ ঘুম আপনার মনকে ভালো রাখবে। প্রয়োজনীয় ঘুম আপনার শেখার আগ্রহ বাড়াবে। দিনের এক–তৃতীয়াংশ সময় শরীরকে রেস্ট দিতেই হবে।
সময় পেলেই করুন ব্যায়াম
কিছু ভালো লাগছে না—এমন অনুভূতি হলে ব্যায়াম করতে পারেন। একটু হেঁটে আসতে পারেন। শারীরিক পরিশ্রম করলে ‘এন্ডোরফিন’ নামের হরমোন নিঃসৃত হয় তা তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের ভালো অনুভব করায়।