সিরিয়ার আলেপ্পো বিমানবন্দরে ইসরায়েলি যুদ্ধ বিমানের হামলায় তিনজন নিহত হয়েছে। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
সিরিয়ার একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সোমবার (৬ মার্চ) এই হামলার ঘটনা ঘটে। গত ৬ ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হওয়ার পর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্ক এবং সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় এই বিমানবন্দরটি ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানো প্রধান মাধ্যম ছিল। হামলার ফলে ভূমিকম্প বিধ্বস্ত মানুষদের জন্য মানবিক সহায়তাকারী ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গেছে।
যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলছে, বিমান হামলায় একজন সিরিয় কর্মকর্তা এবং অজ্ঞাত জাতীয়তার আরও দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সোমবার রাত ২টার দিকে এই হামলার ঘটাটি ঘটেছে।
মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি শত্রুরা লাতাকিয়ার পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর থেকে আলেপ্পো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে। হামলায় বিমানবন্দরটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সমস্ত ফ্লাইট বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সিরিয়ার পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা সুলেমান খলিল এএফপিকে বলেছেন, গত মাসে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া অঞ্চলগুলোতে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে ৮০টিরও বেশি ফ্লাইট অবতরণ করেছে আলেপ্পো বিমানবন্দরে। হামলার কারণে রানওয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মেরামত না করা পর্যন্ত এখানে আর কোনো ফ্লাইট অবতরণ সম্ভব নয়।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে ত্রাণবাহী ফ্লাইটগুলো দামেস্ক এবং লাতাকিয়া বিমানবন্দরে অবতরণের জন্য বলা হয়েছে।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা বলেছে, সিরিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ‘শত্রু ক্ষেপণাস্ত্রের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। অবশ্য ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র আলেপ্পো বিমানবন্দরে এই হামলার বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন।
সিরিয়ান অবজারভেটরি জানিয়েছে, মেরামতের কাজ শেষ হলে কয়েকদিনের মধ্যে বিমানবন্দরটি আবার চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইরান এই হামলাকে “মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ” বলে নিন্দা করেছে।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তরা যখন কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন তখন ইহুদিবাদী সরকার (ইসরায়েল) আলেপ্পো বিমানবন্দরে হামলা চালাচ্ছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকবার আলেপ্পো ও দামেস্ক বিমানবন্দরে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দামেস্কের একটি আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১৫ জন নিহত হয়েছিল।
২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল এই দেশটির অভ্যন্তরে শত শত বিমান হামলা চালিয়েছে। সরকারি নানা স্থাপনার পাশাপাশি মিত্র ইরান-সমর্থিত বাহিনী এবং হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
এছাড়া ইরান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিরিয়ায় তার সামরিক উপস্থিতি আরও বাড়িয়েছে এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটির রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত বেশিরভাগ অঞ্চলেই তেহরানের উপস্থিতি রয়েছে। এমনকি ইরানের নেতৃত্বে হাজার হাজার মিলিশিয়া এবং স্থানীয় আধাসামরিক গোষ্ঠীর সদস্যরা সিরিয়ায় অবস্থান করছে বলে পশ্চিমা গোয়েন্দা সূত্রগুলো দাবি করছে।
আপনার মতামত লিখুন :