• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর বিমান হামলায় নিহত বেড়ে ১০০


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ১২, ২০২৩, ১০:৩১ এএম
মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর বিমান হামলায় নিহত বেড়ে ১০০

মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের (পিডিএফ) একটি অনুষ্ঠানে বিমান হামলা চালিয়েছে ক্ষমতাসীন সামরিক বাহিনী। এতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০ জনে। নিহতদের মধ্যে অনেক শিশুও রয়েছে। মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) এ হামলার ঘটনা ঘটে।

বুধবার অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। এতে বলা হয়, মঙ্গলবার সকালে দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশ সাগাইংয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। এদিন নিহতের সংখ্যা ৫৩ জন ছিল। কিন্তু পরে দেশটির স্বাধীন মিডিয়ার রিপোর্টে নিহতের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১০০ জনে উন্নীত হয়েছে বলে জানানো হয়। সাগাইং এলাকা ইয়াঙ্গুন থেকে প্রায় ১১০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাজিগি শহরের ব্যারেজে হামলায় নিহতদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “হামলার প্রায় আধা ঘণ্টা পরে একটি হেলিকপ্টার সেখানে উপস্থিত হয় এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত জনতার গুলিবর্ষণ করে। আমি মানুষের ভিড় থেকে অল্প দূরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে যুদ্ধবিমান এগিয়ে আসার বিষয়ে আমার এক বন্ধু ফোনে আমার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে। ফাইটার জেটটি সরাসরি ভিড়ের ওপর বোমাবর্ষণ করে এবং আমি কাছের একটি খাদে ঝাঁপ দিয়ে লুকিয়ে পড়ি।”

এপি বলছে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য ঘটনাস্থলে প্রায় ১৫০ জন লোক জড়ো হয়েছিলেন এবং নিহতদের মধ্যে নারী ও ২০ থেকে ৩০ জন শিশুও রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “স্থানীয়ভাবে গঠিত সরকারবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং অন্যান্য বিরোধী সংগঠনের নেতারাও সেনাবাহিনীর এই বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন।”

অন্যদিকে আল-জাজিরা প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বলছে, মঙ্গলবারের হামলায় কয়েক ডজন লোক নিহত হয়েছে। সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশটিতে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে এটি অন্যতম প্রাণঘাতী হামলা।

এ ব্যাপারে আরও তথ্য জানতে ক্ষমতাসীন জান্তা মুখপাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স, কিন্তু কোনো মুখপাত্র তাতে সাড়া দেননি।

এর আগে মিয়ানমারে গত এক সপ্তাহে পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) ও সশস্ত্র জাতিগত গোষ্ঠী দেশজুড়ে বিভিন্ন স্থানে হামলা করে অন্তত ১১৪ জন সরকারি সেনাকে হত্যা করেছে। পিডিএফ ও সশস্ত্র গোষ্ঠী যৌথভাবে সরকারের বর্ডার গার্ড ফোর্সেসের (বিজিএফ) ওপর একাধিক হামলা চালিয়েছে। কারেন রাজ্যের মিওয়াদি টাউনশিপে এই হামলা চালানো হয়।

জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্যরা এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছে এবং সামরিক বাহিনীকে জবাবদিহি করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

বিরোধী ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘সন্ত্রাসী সামরিক বাহিনীর এই জঘন্য হামলা নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে তাদের নির্বিচারে চরম শক্তি প্রয়োগের আরেকটি উদাহরণ, এটি একটি যুদ্ধাপরাধ।’

মূলত এনইউজি সেনাবাহিনীর বিরোধিতা করে নিজেকে মিয়ানমারের বৈধ সরকার বলে থাকে। মঙ্গলবার যে অফিসটি উদ্বোধন করা হচ্ছিল তা ছিল এই গোষ্ঠীটির প্রশাসনিক নেটওয়ার্কের অংশ।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে। এ ছাড়া নোবেলজয়ী সু চিকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে সময় জান্তা সরকার ক্ষমতা দখল করলেও দেশটির সিংহভাগ জনগণ বিষয়টি মেনে নেয়নি। রাস্তায় বিক্ষোভ, সরকারি কার্যক্রম বয়কটসহ সশস্ত্র বিদ্রোহের মাধ্যমে জান্তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে দেশটির বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এতে এখন পর্যন্ত দুই হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।

আহত হয়েছেন আরও অনেকে। অভিযান চালিয়ে অনেককে আটক করারও অভিযোগ ওঠে। বহু মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন দেশটির সেনাদের নির্যাতনে। শুধু তা-ই নয়, সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে মিয়ানমারের অর্থনীতি। এখনো প্রায় বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও জান্তা বাহিনীর সদস্যদের লড়াইয়ের খবর পাওয়া যায়।

Link copied!