ভারত ও চীনের বৈরিতা কেটে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের চেষ্টা চলছে। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রতিরক্ষা ও সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিরল খনিজ ভারতের কাছে রপ্তানি করবে চীন।
ভারতে বিরল খনিজ রপ্তানিতে এত দিন চীন যে বিধিনিষেধ দিয়ে রেখেছিল, তা তুলে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সার উৎপাদন ও অবকাঠামো ক্ষেত্রে ভারতকে প্রয়োজনীয় সাহায্যের বার্তা দিয়েছে চীন। সোমবার সন্ধ্যায় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর যে বৈঠক করেছেন, সেখানেই আলোচনা হয়েছে নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে।
এদিকে সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর রাজনৈতিক মতপার্থক্য নিরসন ও আস্থা তৈরির উদ্যোগ নেয় চীন ও ভারত। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং গত মাসে দুটি বৈঠকও করেছেন। সেই প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় এখন অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা শিথিল করার সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে দুই দেশ।
যুক্তরাষ্ট্র যখন ভারতের বিষয়ে ভারতের কঠোর অবস্থান নিয়েছে, তখন এই সমঝোতা গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে। রাশিয়ার সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ক নিয়ে ওয়াশিংটন একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার কারণে ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে। ফলে ভারতের পণ্যে মোট শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ।
রেয়ার আর্থ বা বিরল মৃত্তিকা খনিজ হলো ১৭ ধরনের উপাদান। আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষাশিল্পের জন্য এসব উপাদান অপরিহার্য। মুঠোফোন, কম্পিউটার চিপ, বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি, উইন্ড টারবাইন, স্যাটেলাইট এমনকি ক্ষেপণাস্ত্র ও রাডার তৈরিতেও এগুলোর ব্যবহার অপরিসীম। এগুলো ছাড়া আধুনিক ইলেকট্রনিক ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিপ্রযুক্তি প্রায় অচল।
চীন এই বাজারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। বিশ্বব্যাপী বিরল খনিজ উৎপাদন ও রপ্তানির ৬০-৭০ শতাংশই তাদের নিয়ন্ত্রণে। শুধু উৎপাদন নয়, খনিজ প্রক্রিয়াকরণ ও সরবরাহ শৃঙ্খলেও চীনের একাধিপত্য রয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, জাপান কিংবা ভারত—সব শিল্পোন্নত দেশই কোনো না কোনোভাবে বেইজিংয়ের ওপর নির্ভরশীল।
এই খনিজকে ‘২১ শতকের তেল’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। বৈশ্বিক অর্থনীতি ও নিরাপত্তাব্যবস্থায় এসব উপাদানের ভূমিকা এতটাই কৌশলগত। অনেক ক্ষেত্রে চীন রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবেও এসব উপাদানের রপ্তানি সীমিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের অংশ হিসেবে তারা এই উপাদানের রপ্তানি সীমিত করেছে। এর আগে ২০১০ সালে জাপানের সঙ্গে বিরোধের সময় তারা এই উপাদানের রপ্তানি সীমিত করেছে।