ইসরায়েলের ওফার ও নেগেভ কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি বন্দিরা কারাগারের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তাদের ভাষায়, ওগুলো কারাগার নয়, কসাইখানা। দীর্ঘদিন ধরে বন্দিত্বের শৃঙ্খল ভেঙে ফেরা এই মানুষগুলোর মুখে উঠে এসেছে শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের নির্মম চিত্র।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া আবদাল্লাহ আবু রাফে বলেন, আমরা কোনো কারাগারে ছিলাম না, ছিলাম কসাইখানায়। ওফার কারাগার—এটা নামমাত্র কারাগার, আদতে ছিল একটা নির্যাতনকেন্দ্র। অনেক তরুণ এখনো সেখানে বন্দি আছেন।
তিনি জানান, কারাগারে ছিল না কোনো গদি বা উপযুক্ত খাবার। সেখানে আমাদের বিছানার গদি পর্যন্ত কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। খাবারের অবস্থা শোচনীয়। প্রতিটি মুহূর্ত ছিল সহ্যসীমার বাইরে।
মুক্তিপ্রাপ্ত আরেক বন্দি ইয়াসিন আবু আমরা বলেন, খাবার, নির্যাতন, মারধর—সবকিছুই ভয়াবহ ছিল। আমাকে চার দিন টানা না খাইয়ে রাখা হয়েছিল। এখানে এসে দুটি মিষ্টি পেয়েছি, সেই দুটো খেয়ে মনে হলো আমি এখনও বেঁচে আছি।
মুক্তিপ্রাপ্ত প্রবীণ ফিলিস্তিনি সাঈদ শুবাইর বলেন, এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সূর্যের আলো চোখে পড়ে—এমন অভিজ্ঞতা দীর্ঘদিন পর। আমার হাত এখন শৃঙ্খলমুক্ত। স্বাধীনতার কোনো দাম হয় না, এটি অমূল্য।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ সোমবার মোট ১,৭১৮ জন বন্দিকে মুক্তি দেয়, যাদের বেশিরভাগকেই গাজা যুদ্ধ চলাকালে আটক করা হয়েছিল। তাদের অনেকেই ছিলেন আজীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত, এবং জাতিসংঘের তালিকায় ‘জোরপূর্বক গুম’-এর শিকার বলে চিহ্নিত ছিলেন।
অপরদিকে, আরও প্রায় ২৫০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে বন্দি ছিলেন।
এই বন্দিমুক্তি সংঘটিত হয় যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায়, যার উদ্দেশ্য গাজা উপত্যকায় শান্তি ফেরানো এবং মানবিক পরিস্থিতির সামান্য উন্নয়ন।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েলি কারাগারগুলোতে বন্দিদের প্রতি অমানবিক আচরণের অভিযোগ করে আসছে। জাতিসংঘ এবং আল জাজিরার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব কারাগারে নির্যাতন, খাদ্য সংকট ও চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগ।
এই মুক্তির পর বন্দিরা যে চিত্র তুলে ধরেছেন, তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আবারও প্রশ্ন তুলছে—ইসরায়েলের কারাগারগুলো আসলেই কি মানবাধিকার মানছে? সূত্র: আল জাজিরা